অস্থির বাজার

সরকারিভাবে আনা হচ্ছে ৫ লাখ টন চাল, বেসরকারিতে অনুমোদন ১৪ লাখ টন

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২২ এএম, ০৯ নভেম্বর ২০২২
প্রতীকী ছবি

খাদ্যশস্যের মজুত সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা ও বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এরইমধ্যে সরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল-গম আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও ভারত থেকে কেনা হচ্ছে চাল। গম কেনা হচ্ছে রাশিয়া থেকে। নতুন উৎস অনুসন্ধান চলমান। বেসরকারিভাবেও ১৪ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে কোনো পদক্ষেপেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। ঊর্ধ্বমুখী সব ধরনের চালের দাম।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি খাদ্যশস্যের মজুত প্রায় ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে আবার শুরু হচ্ছে আমন সংগ্রহ কর্মসূচি। বেসরকারিভাবে ১৪ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ আমদানি প্রক্রিয়া আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

আরও পড়ুন>> চাল আমদানিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের

সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ৭ নভেম্বরের (সোমবার) তথ্য অনুযায়ী, মানভেদে সরু চালের কেজিপ্রতি দাম ৬২ থেকে ৭৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫২ থেকে ৫৮ এবং কেজিপ্রতি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৮০ টাকায়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, সরকারিভাবে ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল, মিয়ানমার থেকে ২ লাখ টন ও ভারত থেকে এক লাখ টন চাল কেনা হচ্ছে। এছাড়া রাশিয়া থেকে ৫ লাখ টন গম কেনার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) মো. মজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারিভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের ১০ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ আছে। সেটা প্রক্রিয়াধীন। বিষয়টা হচ্ছে, আমরা যদি একসঙ্গে ১০ লাখ টন চাল পাই-ও সেটা তো আমাদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সরকারি গুদামের ধারণক্ষমতার একটি বিষয় আছে।’

‘কাজেই আমাদের চাল আনার বিষয়টি চলমান কাজ। একদিকে আসবে, আরেকদিকে এটা বিভিন্ন কর্মসূচিতে যাবে।’

আরও পড়ুন>>> হিসাবের খাতায় দেশে চাল ‘উদ্বৃত্ত’, বাস্তবে আমদানিনির্ভর

এরই মধ্যে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেগুলো আসছে। এগুলো খরচ হবে, আবার আনবো। এভাবেই চলবে। আপাতত ১০ লাখ টনের মতো আনার জন্য পদক্ষেপ আছে।’

আরও পড়ুন>> অতিরিক্ত চাল আমদানিতেই কৃষকের সর্বনাশ

‘জি-টু-জি (সরকার-টু-সরকার) ও আন্তর্জাতিক দরপত্র- দু’ভাবেই এ চাল-গম আসছে। একেক সংস্থার সঙ্গে একেক সময় নির্ধারিত। ৬০-৯০ দিন এভাবে সময় দেওয়া আছে।’

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আমরা সাধারণত ভিয়েতনাম, ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে আনি। কম্বোডিয়া থেকে আনার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এর বাইরে অন্যান্য জায়গা থেকে চাল-গম আনার ব্যাপারেও চেষ্টা রয়েছে। আমরা নতুন নতুন উৎসের সন্ধান করি। সেই কাজও চলমান।’

মজিবর রহমান আরও বলেন, ‘এছাড়া চাল-গম পেলেও হয় না। ন্যায্যমূল্যের বিষয়টিও আমাদের দেখতে হয়। সামনে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে। চাহিদার সঙ্গে জোগান সমন্বয় করা হচ্ছে আমাদের মূল কাজ।’

jagonews24

‘বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য আমরা এরইমধ্যে ১৪ লাখ টনের মতো অনুমতি দিয়েছি। সেখানেও চাল আসছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে চাল আসার কথা। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে যদি সেই সময় বাড়ানোর বিষয় আসে, তখন সেটাও আমরা দেখবো।’

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আমাদের এখন মজুতও ভালো। তবে এখন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান থাকায় মজুতের একটা অংশ চলে যাবে। এছাড়া ওএমএসও চলছে। আমরা চাল আনছি, আবার বিতরণও হচ্ছে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের এখন খাদ্যশস্য মজুতের সক্ষমতা ২০ লাখ টনের মতো। এর মধ্যে এখন গুদামগুলোতে পৌনে ১৬ লাখ টনের মতো ধান-গম রয়েছে। গুদামে খুব বেশি জায়গা নেই। তাই সরকার চাইলেই ইচ্ছামতো খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে পারছে না। এটা একটা সমস্যা।

শুল্ক কমিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে চাল আমদানি
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৩ জুন চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্ক। ফলে চাল আমদানিতে মোট করভার ৬২ শতাংশ থেকে কমে নেমেছে ২৫ শতাংশে।

নতুন শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ ছিল গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এ শুল্ক ছাড়ের অনুমোদন পেতে আমদানিকারককে খাদ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেয় এনবিআর। পরে ২৮ আগস্ট চাল আমদানির ক্ষেত্রে আরও ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমায় সরকার। এখন চাল আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি আমদানি শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আমদানিকারকরা ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়করসহ মাত্র ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক পরিশোধে চাল আনতে পারছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে এখন আমদানিকারকরা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করে চাল আমদানি করতে পারবেন। এরইমধ্যে ১৪ লাখ টনের মতো চাল আমদানির অনুমতি খাদ্য মন্ত্রণালয় দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বেসরকারিভাবে সেভাবে চাল আমদানি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরএমএম/এএসএ/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।