মূল্যস্ফীতি নিয়ে ‘লুকোচুরির’ কারণ জানতে চেয়েছে আইএমএফ
দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির করাতকলে কাটা পড়ছে মানুষ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্নবিত্তের মানুষেরা। বেকায়দায় মধ্যবিত্তরাও। তবে সময়মতো মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে গড়িমসি ও লুকোচুরি থাকলেও সাধারণ মানুষ এর উত্তাপ ঠিকই টের পাচ্ছে।
এবার আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে কেন দেরি হলো, এর কারণ জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে সঠিক সময়ে যেন এ তথ্য প্রকাশ করা হয় সে বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তিন মাস পরপর জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য দেওয়ার কাজের বর্তমান অবস্থা ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে স্বায়ত্তশাসিত এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (০১ নভেম্বর) বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বিবিএস মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিয়ার রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেছে আইএমএফ।
মূল্যস্ফীতির আগস্ট মাসের তথ্য নিয়ে চলছে লুকোচুরি। সেপ্টেম্বর মাস শেষ হয়েছে, অথচ সরকার আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্যও এখনো প্রকাশ করেনি। বেশি হারে বেড়েছে বলেই মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এক ধরনের রাজনীতি করা হচ্ছে।
সাধারণত প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই আগের মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য তৈরি করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। পরে তা পাঠানো হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকেই প্রকাশ করা হয় মূল্যস্ফীতির তথ্য।
বিবিএস ডিজির সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ভিত্তি বছর পরিবর্তন করতে চার বছর ধরে চেষ্টা করে না পারলেও তিন মাস পরপর জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য দিতে চায় বিবিএস। তবে আইএমএফের নির্দেশিকা মানতে গিয়ে ত্রৈমাসিক তথ্য দেওয়ার কাজ শুরু করেছে সরকারি সংস্থাটি।
বিবিএস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি পরিমাপ করা হয় ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে। এটি পরিবর্তন করে ২০১৫-১৬ অর্থবছর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও ভিত্তি বছর পরিবর্তন করতে পারেনি সংস্থাটি। কয়েক বছরেও জিডিপির ভিত্তি বছর পরিবর্তন করতে না পারলেও এখন ত্রৈমাসিক তথ্য দিতে চায় বিবিএস।
বর্তমানে বিবিএস বছরে দুবার জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য দেয়। বছর শেষে একটা সাময়িক এবং পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়। তবে এ পদ্ধতি বাতিল করে প্রবৃদ্ধির তথ্য বছরে তিনবার প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। যেন দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যের অগ্রগতি সব সময় জানা যায়।
আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে বিবিএস ডিজি বলেন, এটা তেমন কোনো বৈঠক নয়, রুটিন বৈঠক বলা যায়। আইএমএফ কোয়ার্টারলি জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমরাও এ বিষয়ে কাজ করছি। তবে এটা বললেই হবে না। কারণ জানতে চাইলেই হবে না। আমরা যাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে প্রবৃদ্ধি তথ্য প্রকাশ করবো তাদেরও সে প্রস্তুতি থাকা লাগবে। সবাইকে এ বিষয়ে আমরা প্রস্তুত করছি।
তিনি বলেন, আইএমএফ প্রতিনিধিদল আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমরাও সভা-সেমিনার করছি, কীভাবে এটা করা যায়। কবে থেকে কোয়ার্টারলি তথ্য প্রকাশ করতে পারবো তা এখন বলা যাবে না। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবাই এটা করছে, আমাদেরও করতে হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আইএমএফ কোনো সুপারিশ বা পরামর্শ দিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মতিয়ার রহমান বলেন, তারা কোনো সুপারিশ বা পরামর্শ দেননি। তবে আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে বিলম্বের কারণ জানতে চেয়েছে। আমরা এ বিষয়ে তাদের বলেছি। তথ্য প্রকাশ করতে উপরের পর্যায় থেকে অনুমতি লাগে, এটা পেতে আমাদের দেরি হয়েছে। এ কারণেই মূলত মূল্যস্ফীতির তথ্য দিতে দেরি হয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো কারণ নেই।
এমওএস/এমকেআর/জিকেএস