ডেঙ্গুর প্রকোপে কদর বেড়েছে মশারির
রাজধানীজুড়ে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের ব্যাপক প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগের সংখ্যায় নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কদর বেড়েছে মশারির। এই সুযোগে মশারির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। তবে আগে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলের গলিতে ফেরি করে যেভাবে মশারি বিক্রি হতো এবার সেই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকায় পাইকারি ও খুচরা মশারি বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় মাস আগে যে হারে মশারি বিক্রি হয়েছে, এখন তার প্রায় দ্বিগুণ মশারি বিক্রি হচ্ছে। দুই মাস ধরে মশারির চাহিদা বাড়ছে। তবে চলতি মাসে মশারির চাহিদা সব থেকে বেশি বেড়েছে।
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আকারভেদে খুচরায় এক পিস মশারি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা মাস ছয়েক আগে ছিল ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। শিশুদের মশারি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পিস। আগে এই মশারি ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটের পাইকারি মশারি বিক্রেতা মো. খায়রুল বলেন, ছয় মাস আগেও আমাদের বিক্রি তেমন ছিল না। দোকান খুলে ক্রেতাদের অপেক্ষায় থাকতাম। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর থেকে মশারির বিক্রি বেড়েছে। গত মাসে যে মশারি বিক্রি হয়েছে, এ মাসে তার দ্বিগুণ হয়েছে। তবে দাম আমরা খুব একটা বাড়াইনি। ভালো মানের মশারি আমরা ৪০০ টাকা পিস বিক্রি করছি।
আরও পড়ুন: আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, হাসপাতালে মশারি ব্যবহার ঢিলেঢালা
খুচরা বাজারে তো ৮০০ টাকা পিস মশারি বিক্রি হতে দেখা গেছে। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে তিনি বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা কতো টাকায় বিক্রি করছে, সেটা তো আমরা বলতে পারবো না। তবে আমরা ৪০০ টাকায় ভালো মানের মশারি বিক্রি করছি। আগে এই মশারি ৩৮০-৩৯০ টাকায় বিক্রি করেছি। সে হিসেবে দাম খুব একটা বাড়েনি। ছোট মশারি ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ও পাইকারিতে দামের বিস্তর ফারাক-ছবি জাগো নিউজ
ফুলবাড়িয়ার আরেক ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, এক সময় মশারি প্রচুর বিক্রি হতো। সারা বছরই মশারির কদর ছিল। কিন্তু এখন আগের মতো মশারির কদর নেই। স্প্রে, ব্যাট, কয়েল এসবের ব্যবহার এখন বেড়েছে। তবে তিন-চার মাস আগের তুলনায় এখন আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় এখন মানুষ মশারি কিনছে।
মতিঝিলে পাইকারি মশারি বিক্রি করা মো. আকাশ বলেন, ঢাকায় পাঁচ বছর ধরে আমি মশারি বিক্রি করছি। আগে বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে বিক্রি করতাম। এখন মতিঝিলে এই জায়গায় বসে বিক্রি করি। এতে কষ্ট কম হয়, বিক্রিও বেশি হয়।
তিনি বলেন, এক মাস ধরে মশারি বিক্রি বেড়েছে। এখন অনেক মানুষের ডেঙ্গু হচ্ছে। বিক্রি বাড়ার কারণে মশারির দামও বেড়েছে। আগে যে মশারি ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি করতাম এখন তা ৭০০-৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
আরও পড়ুন: সিট খালি নেই ডেঙ্গু ওয়ার্ডে, মশারি ছাড়াই থাকছে রোগীরা
রামপুরার বাসিন্দা নিয়ামত আলী বলেন, আগে আমাদের মহল্লায় প্রতিদিন মশারি ফেরি করে বিক্রি হতো। কিন্তু এবার তা দেখা যাচ্ছে না। মশার প্রকোপ বাড়ায় বাজারে গিয়ে মশারি কিনে এনেছি। এছাড়া বাসায় নিয়মিত স্প্রে করি।
শিশুদের মশারির চাহিদাও ব্যাপক-ছবি জাগো নিউজ
তিনি বলেন, এবার রামপুরায় ডেঙ্গুর প্রকোপ খুব বেড়েছে। কিন্তু মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যাচ্ছে না। সপ্তাহে একদিনও মশার ওষুধ ছিটাতে দেখছি না। অথচ বাসার বাইরে বের হলেই প্রতিদিন শুনছি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. আব্দুল হালিম বলেন, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। আগে আমরা বাসায় মশারি ব্যবহার করতাম না, শুধু স্প্রে করতাম। কিন্তু যেভাবে ডেঙ্গু বাড়ছে, তাতে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে প্রতি রুমেই এখন মশারি ব্যবহার করছি। সেই সঙ্গে স্প্রে ব্যবহার করছি।
রামপুরা বাজারে খুচরা মশারি বিক্রি করা জয়নাল মিয়া বলেন, লুঙ্গি, গামছার পাশাপাশি মশারি বিক্রি করছি। আগে দোকানে মশারি থাকলেও বিক্রি হতো না। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় এখন মশারি বিক্রি বেড়েছে। আগে যেখানে দিনে একটি মশারিও বিক্রি হতো না, এখন সেখানে প্রতিদিন ৫-১০টা বিক্রি হচ্ছে।
এমএএস/এসএইচএস/জেআইএম