দেশে বছরে একজন গড়ে ডিম খেতে পায় ১৩৬টি

ইসমাইল হোসাইন রাসেল
ইসমাইল হোসাইন রাসেল ইসমাইল হোসাইন রাসেল
প্রকাশিত: ০৮:৫৫ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০২২
ফাইল ছবি

ডিমকে বলা হয় পরিপূর্ণ খাদ্য। সারা পৃথিবীতে যে কয়টি খাদ্যকে সুপার-ফুড হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়- তার মধ্যে ডিম অন্যতম। দেশে গত ১২ বছরে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে ৩০৭ শতাংশেরও বেশি। অব্যাহত উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে ডিমের বাৎসরিক প্রাপ্যতা বেড়ে হয়েছে মাথাপিছু ১৩৬টি।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, তিন দশকে বিশ্বে ডিমের উৎপাদন প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯-১০ সালে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪ দশমিক ২৪ কোটি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৩৫ কোটিতে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার সংখ্যা ছিল ১২১টির অধিক। বর্তমানে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৬টিতে। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিটি মানুষের বছরে নূন্যতম ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন।

১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত আইইসি ভিয়েনা কনফারেন্স থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী চলছে একটি ইতিবাচক ক্যাম্পেইন। যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিমের প্রয়োজনীয়তার বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবারে বিশ্বজুড়ে উদযাপন হচ্ছে ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। এবারের ডিম দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিদিন একটি ডিম, পুস্টিময় সারাদিন’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিম খেতে কোনো বয়স লাগে না। জন্মের আগে থেকেই মায়ের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণের মধ্য দিয়ে ডিমের কার্যকারিতা শুরু হয়। এরপর জীবনের প্রতিটি ধাপেই মানুষের দরকার হয় ডিমের পুষ্টি। শৈশব, কৈশর, যৌবন এবং জীবনের বাকিটা সময় শরীরের জন্য মূল্যবান অত্যাবশ্যকীয় আমিষের চাহিদা পূরণে ডিমের কোনো তুলনা হয় না। ডিমকে যদি সঠিকভাবে প্রমোট করা যায় এবং দেশের আপামর মানুষ যদি পরিমাণ মতো ডিম খায়, তবে দেশের অপুষ্টির চিত্রটা পুরোপুরি পাল্টে ফেলা সম্ভব। ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ এমন একটি প্রাকৃতিক আদর্শ খাবার পৃথিবীতে খুব কমই আছে।

জানা গেছে, ডিমের বৈশ্বিক উৎপাদনে এশিয়া মহাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ডিম উৎপাদনকারী দেশ চীন। গত দশকের তুলনায় এই দশকে ডিমের উৎপাদন ২৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ৮৩ মিলিয়ন টন, যা ২০০০ সালে উৎপাদিত ডিমের চেয়ে প্রায় ৬৩ শতাংশ বেশি। 

ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে চীনে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার পরিমাণ ছিল ২৫৫টি এবং ভারতে ৭৬টি। সেখানে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার পরিমাণ ছিল ১০৪.২৩টি।

jagonews24

বিপিআইসিসির হিসাব মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৮ হাজার ৩৩৮.৬৮ কোটি টাকার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ১০ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ১০ হাজার ৮৬১ কোটি টাকার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ১১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ১২ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকার ডিম কেন্দ্রিক বাণিজ্য হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত লেয়ার খামারের সংখ্যা ২০ হাজার ৪৬৪টি। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।

২০১৭-১৮ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ১৫৫২ কোটি, ২০১৮-১৯ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ১৭১১ কোটি, ২০১৯-২০ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল  ১৭৩৬ কোটি এবং ২০২০-২১ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ২০৫৭.৬৪ কোটি। সরকারি এ পরিসংখ্যানে ডিম বলতে- পোল্ট্রি ডিম, দেশি মুরগির ডিম, হাঁসের ডিম, কোয়েল ও কবুতরের ডিমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে ২০২১ সালে মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্যতা ছিল ১২১.১৮টি। 

ডিমের উৎপাদনে ছোট ও বড় খামারি বাংলাদেশে মোট যে পরিমাণ বাণিজ্যিক পোল্ট্রি ডিম উৎপাদিত হয় তার মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ উৎপাদন করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিচিত খামারগুলো। অর্থাৎ দেশের ৮৮ থেকে ৯০ শতাংশ ডিম আসে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামার থেকে। 

পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনিক ডিম উৎপাদনের পরিমাণ:

ডায়মন্ড এগ ১৪ থেকে ১৫ লাখ, কাজী ফার্মস ১২ থেকে ১৪ লাখ, প্যারাগন পোল্ট্রি ৫.৫-৬ লাখ, নর্থ এগ ৪.৫ থেকে ৫ লাখ,      সিপি বাংলাদেশ ৪.৫ থেকে ৫ লাখ, আফিল এগ্রো ৩.৫ থেকে ৪ লাখ, পিপলস পোল্ট্রি ১.৫০ থেকে ২ লাখ, নাবিল এগ্রো ১.৭৫ থেকে ২ লাখ, ভিআইপি শাহাদত ১.৭৫ থেকে ২ লাখ, রানা পোল্ট্রি ১ থেকে ১.১০ লাখ, ওয়েস্টার পোল্ট্রি ৪০ থেকে ৫০ হাজার, আজিজুল হক এগ্রো ৫০ হাজার।

বিপিআইসিসির হিসাব মতে বর্তমানে ডিমের উৎপাদন খরচ প্রায় ১০.৫০টাকা।

এদিকে ডিম উৎপাদনের দিক থেকে এশিয়া এখন পর্যন্ত প্রধান উৎপাদনকারী অঞ্চল, যা ২০১৯ সালের বৈশ্বিক উৎপাদনের ৬২ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে আছে আমেরিকা (২১ শতাংশ), ইউরোপ (১৩ শতাংশ), আফ্রিকা (৪ শতাংশ) এবং ওশেনিয়া (০.৪ শতাংশ)।

সার্বিক বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, সমৃদ্ধ জাতি গড়তে হলে পরিপূর্ণ পুষ্টিসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ডিম। এই খাদ্য উপাদান যেন ব্যয়বহুল না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গত তিন দশকে সারাবিশ্বে ডিমের উৎপাদন প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ১২ বছরে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন ৩০৭ শতাংশেরও অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে হবে, স্বনির্ভর করতে হবে।

আইএইচআর/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।