পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে আলাদা কোম্পানি করছে বিপিসি

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:২১ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০২২
ফাইল ছবি

# জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি নিবন্ধকের নিবন্ধন পেলেই নিয়োগ হবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক
# পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি
# এরই মধ্যে এসপিএমসহ চারটি পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে

গ্যাসের মতো পেট্রোলিয়াম তরল জ্বালানি সঞ্চালনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটির পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে তাই আলাদা কোম্পানি গঠনে কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি। পেট্রবাংলার অধীন গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) আদলে গঠন করা হচ্ছে ‘পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি’। এরই মধ্যে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে ‘পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি (পিটিসি-পিএলসি)’ অনুমোদন দিয়েছে বিপিসি। শুরু হয়েছে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়াও। জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধকের নিবন্ধন পেলেই নিয়োগ দেওয়া হবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এ বিষয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান জাগো নিউজকে বলেন, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম), ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন এবং ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসপিএম প্রকল্পের বিভিন্ন অপারেশনাল পয়েন্টে কমিশনিং শুরু হবে। এই পাইপলাইনগুলোর অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিপিসি এরই মধ্যে পিটিসি-পিএলসি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১১৯ জনের একটি পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পিটিসি-পিএলসি যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধকের নিবন্ধন পেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগসহ এর দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হবে। এখন ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে যে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এসব জনবল আত্মীকরণ করা হবে পিটিসি-পিএলসিতে।

আরও পড়ুন: নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে হচ্ছে ৫০ কিমি সঞ্চালন লাইন 

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, আমদানি করা তরল জ্বালানি খালাসে ব্যয় ও সময় বাঁচানোর লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। আবার উড়োজাহাজের জ্বালানি (জেট এ-১) সরবরাহের জন্য নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে ৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পাইপলাইনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৪৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত জ্বালানি তেল পরিবহনে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মিত হচ্ছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ১৭১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। একইভাবে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে আমদানি করা তেল আনতে ১৩১ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করছে বিপিসি। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নামে এ প্রকল্পের কাজ ৯০ শতাংশের বেশি এগিয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে সবগুলো পাইপলাইন অপারেশনে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিপিসি।

আরও পড়ুন: অনুমোদন পেলো ১৮১ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ কাজ 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হলে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে জটিলতায় পড়ার আশংকা করছে বিপিসি। জাহাজ থেকে খালাস এবং সরবরাহ কার্যক্রম করে এলেও স্থলপথে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির। নেই জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে নীতিমালাও। আবার বর্তমান নির্মাণাধীন পাইপলাইন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ও পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। পাইপলাইনগুলো অপারেশনে এলে নতুন জনবলেরও প্রয়োজন হবে। এসব বিবেচনায় আগামীতে জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনের জন্য আলাদা কোম্পানি গঠনের পদক্ষেপ নেয় বিপিসি। এজন্য বিপিসির পরিচালককে (অপারেশন ও পরিকল্পনা) আহ্বায়ক করে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিতে বিপিসির সচিবকে সদস্য সচিব এবং মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), মহাব্যবস্থাপক (হিসাব), পদ্মা ও যমুনা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পেট্রেবাংলার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স লিমিটেডের (ইএলবিএল) কোম্পানি সচিব এবং বিপিসির আইন উপদেষ্টাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। এরই মধ্যে কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ট্রান্সমিশন কোম্পানি গঠনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিপিসি। নতুন কোম্পানি গঠনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনও মিলেছে।

এদিকে, পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে জনবল নিয়োগের পদক্ষেপ নিয়েছে বিপিসি। ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে ৫০ পদে ১১৯ জন নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে ইস্টার্ন রিফাইনারি।

আরও পড়ুন: পাইপলাইনে চট্টগ্রামের জ্বালানি আসবে ঢাকায় 

এ ব্যাপারে কমিটির আহ্বায়ক বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) খালিদ আহম্মেদ শনিবার (১ অক্টোবর) জাগো নিউজকে বলেন, আগামী বছরগুলোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসপিএমসহ চারটি পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পথে। ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন, চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন, পিতলগঞ্জ-কুর্মিটোলা পাইপলাইনের কাজ চলছে। এসব পাইপলাইন নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণের নতুন কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। নতুন কোম্পানি অনেকটা পেট্রবাংলার জিটিসিএলের মতোই। কোম্পানির নাম রাখা হয়েছে পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি (পিএলসি)। এখন জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। নিবন্ধন পেলে বিপিসির আরেকটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে।

কেএসআর/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।