পণ্যে ৫-১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রির দাবি সুপারশপগুলোর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

দেশের সুপারশপগুলো প্রতিদিন দেড় শতাধিকেরও বেশি পণ্যে ৫-১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রি করছে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের সুপারশপগুলো সাধারণ বাজারের তুলনায় বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে- এমন অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, দেশের মোট বাজারের সর্বোচ্চ দুই শতাংশ অবদান রাখছে সুপারশপগুলো। সেখানে দেশের মোট বাজারের পণ্যমূল্যের ওপর সুপারশপগুলো কোনোভাবেই প্রভাব বিস্তার করে না।

এছাড়া সুপারশপগুলো উৎপাদকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্যাকেটজাত পণ্যের দাম নির্ধারণ করে-এমন অভিযোগও শতভাগ ভিত্তিহীন। উৎপাদকের ওপর প্রভাব বিস্তার করার সক্ষমতা সুপারশপগুলোর নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।

সুপারশপ কর্তৃপক্ষ বলছে, সাধারণ বাজারের তুলনায় সুপারশপে মূল্য বেশি- এমন অভিযোগ ঠিক নয়। সাধারণ বাজারের পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সুপারশপের পণ্যের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। সুপারশপগুলো সবসময়ই পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিত করে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুজ্জামানের মত একটু ভিন্ন। তার মতে, সুপারশপগুলো উৎপাদনকারীর সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে নানা জাতের চালের প্যাকেটের গায়ে বাজারের তুলনায় বেশি দাম নির্ধারণ করে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) লিখে বিক্রি করে। তবে গত মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এ নিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার মতামতে ভিন্নতা এসেছে।

বিষয়গুলো সরকারের নজরে আনতে বাংলাদেশ সুপারশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদের সই করা চিঠিতে জানানো হয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্য একপাক্ষিক ও ভিত্তিহীন।

সুপারশপগুলো পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে প্রভাবিত করে এমআরপি নির্ধারণ করে না। উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোই পণ্যের এমআরপি নির্ধারণ করে দেয়। সেক্ষেত্রে পণ্যের মোড়কে লেখা মূল্যের সঙ্গে বাড়তি দাম সংযোজন বা বিয়োজন করার কোনো সুযোগ নাই।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সুপারশপগুলো ইরি ২৮ চাল মিনিকেট নামে বিক্রি করছে- মহাপরিচালকের এমন বক্তব্যও সঠিক নয়। কারণ দেশের চালকল মালিকেরা বা চাল উৎপাদনকারীরা মিনিকেট নামে চাল সারাদেশে বাজারজাত করছেন। কাজেই সুপারশপ কর্তৃপক্ষ মিনিকেট চালের নামকরণের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সুপারশপগুলো প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের টিকেয়ে রাখতে বাজারের তুলনায় কম দামে পণ্য বিক্রি করে ব্যবসা করছে। এখানে ক্রেতাদের পদে পদে প্রতারিত করার কোনো সুযোগ নেই।

চিঠি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা একটা সমাধানে যাচ্ছি। আমরা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের চিঠি দিয়েছি। তারা আমাদের প্রতিবেদন দেবেন।

Super-Shop-3

‘খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী তো চালের দাম নিয়ে কথা বলেছেন। এখন সুপারশপ কর্তৃপক্ষ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলতেই পারে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি যেহেতু আমি এখনো পাইনি, সেহেতু এটি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপারশপ স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির জানান, সুপারশপগুলো প্রতিদিন ১৫০টিরও বেশি পণ্যে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রি করছে। ফলে সুপারশপ থেকে ক্রেতারা কাঁচাবাজারের তুলনায় কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একটা জায়গা আমরা ভাড়া নিচ্ছি, যেখানে এসি থাকে। স্বাস্থ্যগত বিষয় মাথায় রেখে আমাদের চিলারগুলোতে মাছ-মাংস ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। তার জন্য ইলেক্ট্রিসিটি চার্জ আছে। সবকিছু যদি যোগ করা হয় তাহলে আমাদের পরিচালন ব্যয় ২২% এর বেশি, কিন্তু আমাদের পরিচালন মুনাফা ০.৫ শতাংশেরও নিচে।

একইসঙ্গে তিনি জানান, উৎপাদকদের প্রভাবিত করার মতো শক্তি বা ক্ষমতা দেশের সুপারশপগুলোর নেই। কারণ তাদের পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাজারে প্রভাব ফেলার মতো নয়। দেশের মোট বাজারের ২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে সুপারশপগুলোর। এই শেয়ার নিয়ে মোট বাজারের পণ্যের মূল্যে প্রভাব ফেলা সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে মিনা বাজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহীন খান বলেন, সুপারশপগুলোতে বিক্রি হওয়া পণ্যের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। দেশি ডাল মানে দেশি ডাল, নদীর মাছ মানে নদীর মাছ। দেশির সঙ্গে বিদেশি বা নদীর সঙ্গে সাগর মিশিয়ে পণ্য বিক্রি করার প্রশ্নই ওঠে না। কাজেই সুপারশপগুলো দেশি ডালের দামই রাখবে। নদীর মাছের দামই রাখবে।

তিনি বলেন, সুপারশপগুলো ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে না। পাইকারি ও খুচরা বাজারে মিনিকেট নামে হাজার হাজার বস্তা চাল বিক্রি হচ্ছে। এটি আমাদের দেওয়া নাম নয়। সরকার যদি কাল এ চালের নাম পরিবর্তন করে অন্য নাম দেয়, তাহলে আমরা অন্য নামেই বিক্রি করবো। কোনও আপত্তি নাই।

‘একইভাবে চালের উৎপাদক কোম্পানিগুলোকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা আমাদের নেই। কাজেই তাদের প্রভাবিত করে এমআরপি নির্ধারণ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’

শাহীন খান বলেন, প্রতিযোগিতার এ বাজারে আমরা অনেক স্থানেই ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় না করে নিজেরাই দিয়ে দিচ্ছি। এতে সুপারশপগুলো মুনাফা হারাচ্ছে। এভাবেই আমরা ব্যবসা চালিয়ে আসছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান সম্প্রতি ডিবিসি চ্যানেলের একটি টক-শোতে এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের মোট বাজারের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ অবদান রাখছে সুপারশপগুলো। সমস্যা তো এখানেই। যদি সুপারশপগুলো অনেক পণ্য বিশাল পরিমাণে বিক্রি করতে পারতো ও অর্ডার দিয়ে অনেক পণ্য কিনতে পারতো, তাহলে তাদের খরচটা কমতো।

‘বিদেশে একসঙ্গে এক লাখ টন পণ্য কিনে একটু কম দামে বিক্রি করা হয়। বাংলাদেশে তো তা হচ্ছে না। বরং বাংলাদেশে সুপারশপগুলোকে খোলাবাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। উন্নত দেশে তো এরকম খোলাবাজার কোথাও নেই। বরং পাড়ার দোকান বা মুদি দোকানে তো একেক ভোক্তার কাছে একেক দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।

তার মতে, সুপারশপে গুণগতমানের পণ্য বিক্রি হয়। একজন সচেতন ভোক্তা খোলাবাজার থেকে চাল বা অন্য কোনো পণ্য কিনে সুপারশপের মতো আস্থা পাবেন না। খোলাবাজারে সবসময়ই একটি ঝুঁকির মধ্য দিয়ে কেনাকাটা করতে হয়।

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান আরও বলেন, যখন একটি ব্র্যান্ডের চাল কিনবেন, তখন একটা আস্থা পাবেন। এটিই হচ্ছে ব্র্যান্ডিং। একটি ব্র্যান্ডকে দাঁড় করাতে অনেক খরচ করতে হয়। যারা মানসম্পন্ন পণ্য চান তারা সুপারশপে যাবেন, আর খোলাবাজারে যাবার জন্য তো ৯৮ শতাংশ অপশন থাকছেই।

আইএইচআর/এসএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।