তেলের মতো চাল-গমের দামও নির্ধারণ করবে সরকার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩৬ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২২

ভোজ্যতেলের মতো চাল, গম (আটা-ময়দা), চিনি, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রড এবং সিমেন্টসহ নয়টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার। ট্যারিফ কমিশন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব পণ্যের যৌক্তিক মূল্য বের করবে। কেউ নির্ধারিত মূল্যের বেশি নিলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের উচ্চমূল্য, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের সুযোগ নেওয়া সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সাধারণত আমাদের ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেলের দাম টাইম টু টাইম বসে ঠিক করে। কখনো বাড়ানোর দরকার হলে তাদের (ব্যবসায়ী) সঙ্গে বসে বাড়ায়। আবার যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়া উচিত, সেটা কমিয়ে দেয়।

‘কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি বিভিন্ন আইটেমের দাম বেড়েছে, যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও সবগুলো আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখার কথা ছিল এমনটা নয়। কৃষি পণ্যের ব্যাপার রয়েছে, চাল রয়েছে, যেটা খাদ্য মন্ত্রণালয় বা কৃষি মন্ত্রণালয় তারা দেখবে। তারপর ডিমের কথা আসছে। মাঝখানে ডিমের দাম বেড়েছে। ডিমের কথা কোনোদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনায় আনেনি বা আমাদের দেখার ব্যাপারও ছিল না। তারপরও প্রশ্ন আসার পর আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল- দরকার হলে ডিম আমদানি করবো। যাই হোক পরবর্তী পর্যায়ে ডিমের দাম কমেছে।’

মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কীভাবে কমানো যায় বা যথার্থ করা যায়। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের কারণে অনেক সময় আমরা কমাতে পারবো না। তবে যেটা হওয়া উচিত তার থেকে বেশি দামে যেন ভোক্তাদের কিনতে না হয়, তার জন্য কিছু আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

‘সরকার চালের ওপর যে ট্যাক্স ছিল সেটা কমিয়েছে। যাতে আমদানি করতে ৮ টাকার মতো খরচ কম পড়বে। এমনি করে কোনো কোনো পণ্য আমরা মনে করি দাম বাড়া উচিত, তার থেকেও বেশি তারা বাড়িয়েছে। যার জন্য আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে- ট্যারিফ কমিশন এখন থেকে এসব পণ্যের দাম যেটা হওয়া উচিত, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে ঠিক করবে এবং সেটা ঘোষণা দেওয়া হবে এই দাম। বাজারে এই দামে বিক্রি হতে হবে। এর থেকে বেশি যদি কেউ নেয়, সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা শুধু নয়, আমরা ঠিক করেছি সোজাসোজি আমরা মামলায় চলে যাবো।’

‘আইন আছে তিন বছরের জেল বা কোথাও কোথাও তার থেকে বেশি জরিমানা আছে। সেই পদক্ষেপ আমরা নিতে যাবো। যা যা আমাদের ক্ষমতা আছে, যারা অনৈতিকভাবে বাড়াবেন.. সেটা শুরু হবে ইমিডিয়েটলি। বলে দেওয়া হয়েছে ১৫ দিনের মধ্যে আইটেমগুলো ক্যালকুলেশন করে বাজারে ডিক্লেয়ার (ঘোষণা) করে দেওয়া হবে, দিস ইজ দ্য প্রাইজ।’

তিনি বলেন, যদি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর আমাদের ডিপেন্ড করতে হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের দাম উঠলে এখানে মূল্যবৃদ্ধি পাবে। সেটাও কতোটুকু বাড়ানো উচিত, সেটা ঠিক করে দেওয়া হবে।

টিপু মুনশি বলেন, বিভিন্নভাবে কথা আসছে আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমেছে। হ্যাঁ সত্যি কথা কমেছে। আমরা সয়াবিন তেলের দাম বা পাম অয়েলের দাম কমিয়ে রেখেছি। পাশাপাশি যেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য ডলারের দাম বেড়ে গেছে। যার জন্য হিসাব করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, যে সুফলটা আমরা পেতে পারতাম, সেটা পাচ্ছি না। যাই হোক আমরা ক্লোজ মনিটরিং করে দেখবো হট সুট বি দ্য রাইট প্রাইস। সেটাই আমরা ডিক্লেয়ার করবো।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকার জ্বালানি তেলের দাম গতকাল কমিয়েছে, এটার প্রভাব কি পড়ে তা দেখবো। আজকের যে অবস্থা বাজারের বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কমছে, ডলারে দাম অস্থির হয়ে রয়েছে, সবগুলো সমন্বয় করা কঠিন। কিন্তু আমরা সিরিয়াসলি সবগুলো ধরবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে আমরা নয়টি পণ্য ঠিক করেছি। এর বাইরেও যদি অ্যাসেনশিয়াল কিছু থাকে সেটাও পলিসিতে আনবো। আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি রড, সিমেন্ট, ডিম নিয়ে। নয়টা আইটেম আজ আলোচনায় এসেছি, এর বাইরে যদি কোনো প্রয়োজন হয়…। যেমন ডিম যে একটা আইটেম হবে, এটা নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে এটা কিন্তু আমাদের ধারণায় ছিল না। তো প্রতিদিনই নতুন নতুন যোগ হবে। আমরাও প্রয়োজন অনুসারে আইটেম বাড়াবো।

কতোদিন পর পর দাম নির্ধারণ করা হবে? এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, প্রতি মাসে একবার করে আমরা পুরো জিনিসটা রিভিউ করবো।

বৈঠকে কি কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুধু তেল ন সবগুলো পণ্যের যেটা যৌক্তিক দাম সেটা বের করা। যারা কনসান পিপল তাদের নিয়ে এটা করা হবে। যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে সোজাসোজি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দ্বিতীয়টা হলো- আমরা যদি কোথাও মনে করি ডিউটি কমানো দরকার, যেমন করে চালেরটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, এসব পণ্যের ডিউটি কমিয়ে দেব। যাতে কেউ মনোপলি সুবিধা নিতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা শক্ত অবস্থায় যেতে চাই। যারা সঠিক নৈতিকভাবে ন্যায্যমূল্য ঠিক করব তাদের আমরা ইনকারেজ করবো। কিন্তু যারা সুযোগটা নিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

এমএএস/জেএস/জিকেএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।