দেশে-বিদেশে অস্থির স্বর্ণের বাজার
অডিও শুনুন
দেশে-বিদেশে দামি ধাতু স্বর্ণের দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববাজারে হুটহাট যেমন স্বর্ণের দাম বাড়ছে বা কমছে, তেমনি দেশের বাজারে হুটহাট দাম বাড়া বা কমার ঘটনা ঘটছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে এ অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও। তবে দেশের বাজারে দামি এ ধাতুটির দামে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তার পেছনে একশ্রেণির অসাধু চক্র রয়েছে। এই চক্র অবৈধভাবে দেশে স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
এদিকে স্বর্ণের দামে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। প্রায় তিন বছর ধরে এ ব্যবসায় মন্দা চলছে। বিশ্বজুড়ে দেখা দেওয়া করোনা মহামারির পর থেকে এই মন্দার শুরু হয়। এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মন্দা কাটেনি। এতে কোনো কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতনও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছেন না। জুয়েলারি ব্যবসার এ মন্দার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়রী ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণায়ও মেতেছেন।
কোনো কোনো ব্যবসায়ী ক্রেতাদের ভালো মানের গহনা দেওয়ার কথা বলে নিম্ন মানের গহন দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আসল ডায়মন্ড বলে ‘মেসোনাইড’, ‘সিভিডি’, ‘ল্যাব মেইড/ম্যানমেইড’ এবং ‘এডি’ পাথর ধরিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতাদের। আকর্ষণী ছাড় দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এভাবে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। কম দামে স্বর্ণ, ডায়মন্ডের গহনা পাচ্ছেন এই ভেবে ক্রেতাদের একটি অংশ এসব অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ছেন।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। হুট করে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান, এরপর আবার বড় দরপতনের ঘটনা ঘটছে গত কয়েক মাস ধরেই। যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও হুটহাট স্বর্ণের দাম বাড়ছে বা কমছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত ছয় মাসে দেশের বাজারে ১৭ বার স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমার ঘটনা ঘটেছে।
স্বর্ণের দামের এমন অস্থিরতার বিষয়ে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ডলারের দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে স্বর্ণের দামের ওপর বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির প্রভাব রয়েছে। তবে আমাদের মূলত নির্ভর করতে হয় স্থানীয় বাজারের ওপর। তাঁতীবাজারসহ স্থানীয় যেসব জায়গায় পাকা স্বর্ণ পাওয়াযায় তার ওপরেই মূলত আমাদের বাজার নির্ভর করে।
তিনি বলেন, সরকার আমাদের স্বর্ণ দেয় না। আবার আমদানির ক্ষেত্রে যেসব নীতিমালা আছে তাতে বৈধভাবে বাইরে থেকে খুব বেশি স্বর্ণ আমদানি করা যায় না। মূলত স্থানীয় বাজারে পাকা স্বর্ণের দাম বাড়লে আমরা দাম বাড়াই। একইভাবে পাকা স্বর্ণের দাম কমলে আমরা দাম কমাই। আমরা দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সবসময় আপডেট থাকার চেষ্টা করি। প্রয়োজন হলে দিনের দিন দাম সমন্বয় করতে আমরা প্রস্তুত আছি।
সর্বশেষ বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার মধ্যে গত ১৮ আগস্ট দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমায় বাজুস। তবে এই দাম কমানোর কারণ হিসেবে বাজুস থেকে জানানো হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমেছে। বাজুসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ২৭৫ টাকা কমিয়ে ৮২ হাজার ৫৬ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ১৫৮ টাকা কমিয়ে ৭৮ হাজার ৩২৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৮৬৭ টাকা কমিয়ে ৬৭ হাজার ১২৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণেরদাম ভরিতে ১ হাজার ৬৯২ টাকা কমিয়ে ৫৫ হাজার ২৮৭ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে এ দামেই দেশের বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য এই দাম কমানোর আগে ১০ দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে চারবার স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়।
কাটেনি মন্দা
দেশের বাজারে বছরের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি হয় অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে। এ সময় অনুষ্ঠিত হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। কৃষকের ঘরে ওঠে নতুন ধান। পাশাপাশি পড়ে বিয়ের ধুম। তাই এ তিন মাসের অপেক্ষায় থাকেন অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা। করোনা মহামারির কারণে দুটি বছর সব কিছুই ওলট-পালট হয়ে যায়। জনজীবন ও অর্থনীতিতে নেমে আসে দুর্যোগ। কাজ হারান অনেকে। ঘরবন্দি সময় কাটাতে হয়েছে মাসের পর মাস। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হতে না হতেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন। বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখাদেয় অস্থিরতা। যার প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতেও। ফলে মন্দার মধ্যেই থেকে গেছে স্বর্ণ ব্যবসাও। একের পর এক ঈদ, পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, নবান্ন- উৎসব চলে গেলেও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সুদিন ফেরেনি। প্রায় তিন বছর ধরে উৎসব সামনে রেখে মানুষ স্বর্ণের গহনা কেনার থেকে বিক্রি করছেন বেশি।
ব্যবসা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুবল জাগো নিউজকে বলেন, দুটো বছর আমরা অনেক কষ্টে কাটিয়েছি। করোনার কারণে অনেকে কাজ হারিয়েছে। যার প্রভাব পড়ে আমাদের ব্যবসায়। মানুষ অলঙ্কার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছে বেশি। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এতে সামনে চলে এসেছে নতুন বিপদ। ফলে আমাদের ব্যবসার পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়নি। এখনো মানুষ উৎসবের সময় স্বর্ণ কেনার থেকে বিক্রি করছে বেশি।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী হাসান বলেন, সবকিছু খুলে দেওয়া হলেও অলঙ্কার ব্যবসার মন্দা কাটেনি। আগে আমাদের এখানে ১০ জন কাজ করতাম। কিন্তু করোনার কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় এখন মাত্র চারজন আছি। মালিক অন্য শাখায়ও লোক কমিয়েছেন। বিক্রি না থাকলে মালিক তো আর বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেবেন না। করোনার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, করোনার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। করোনা থেকে বেরিয়ে মানুষ যখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছিলো, ঠিক সেই সময় রাশিয়া-ইউক্রেনযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ফলে করোনার পর আমাদের ব্যবসায় যে মন্দা দেখা দিয়েছিল, এখনো তা কাটেনি। জিনিসপত্রের দামও বেশি। মানুষ এখন কষ্টে আছে। অনেকের আয় কমে গেছে। এ কারণে অনেকে মজুদ থাকা স্বর্ণ বিক্রি করে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে মানুষ এখন স্বর্ণ যা কিনছে, বিক্রি করছে তার থেকে বেশি।
বাজুসের সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, এখনো আমাদের ব্যবসার পরিস্থিতি অনেক খারাপ। আসলে করোনার কারণে অনেকে কাজ হারিয়েছে। যাদের কাজ আছে, তাদের অনেকের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে সবকিছুর ব্যয় বেড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ এখন অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। তেলের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চিনির দাম বেড়েও দ্বিগুণ। এছাড়া চাল, মাছ, মাংস,সবজি সবকিছুর দাম বাড়তি। কিন্তু মানুষের আয় তো বাড়েনি। বরং কমেছে। এখন সাধারণ মানুষের পক্ষে টিকে থাকাই কষ্ট কর। সেখানে স্বর্ণের বিক্রি কমবে এটাই স্বাভাবিক।
বাজারজুড়ে নকল ডায়মন্ড-নিম্নমানের স্বর্ণ
স্বর্ণের দামে অস্থিরতা দেখা দেয়ার মধ্যে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণায় মেতে উঠেছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। আসল ডায়মন্ড বলে এই ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের নকল ডায়মন্ড দিচ্ছেন। আবার ভালো মানের স্বর্ণের দাম নিয়ে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ক্রেতাদের নিম্নমানের স্বর্ণের গহণা দিচ্ছেন। নকল ডায়মন্ডের দৌরাত্ম্য বন্ধে বাজুস উদ্যোগ নিলেও তাতে ফল মিলছে না। নকল ডায়মন্ড বিক্রি হচ্ছে দেদারছে।
অবৈধ স্বর্ণ ও ডায়মন্ড বৈধর জন্য ২০১৯ সালের জুনে যৌথভাবে মেলা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) ও বাজুস। সে সময় ডায়মন্ড বৈধ করে একশ’র কম প্রতিষ্ঠান। অথচ বর্তমানে ঢাকা শহরেই পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ডায়মন্ডের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা ডায়মন্ড বলে ক্রেতাদের কাছে ‘মেসোনাইড’, ‘সিভিডি’, ‘ল্যাব মেইড/ম্যান মেইড’ এবং ‘এডি’ পাথর বিক্রি করছেন।
একাধিক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নকল ডায়মন্ডের একটি বড় অংশ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ছাড় দিয়ে বিক্রি করেন। কম দামে ডায়মন্ডের পণ্য পাচ্ছেন, এমন ভেবে অনেক সময় ক্রেতারা প্রতারিত হন। কারণ বাজারে যেসব নকল ডায়মন্ড বিক্রি হয় তা হুবহু আসল ডায়মন্ডের মতো দেখতে। ফলে ছোট ক্রেতারা আসল নাকি নকল ডায়মন্ড কিনছেন তা বুঝতে পারেন না।
যোগাযোগ করা হলে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা আমাদেরও প্রশ্ন, এতো ডায়মন্ড কোথা থেকে আসছে? মেলায় ঘোষণা দিয়ে ডায়মন্ড বৈধ করে ৬০ থেকে ৭০টির মতো প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখন ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ডায়মন্ডের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আমরা বাজুসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডায়মন্ড আমদানির প্রমাণপত্র, সেলস পারমিশন, ডিলার বা সাপ্লাইয়ারদের কাছে ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ, ফাইল বা মেলায় স্টক ডিক্লারেশনের কাগজপত্র দিয়ে বৈধতা নিশ্চিত করতে বলেছি।’
নকল ডায়মন্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ক্রেতারা যেন প্রতারিত না হন। ক্রেতাদের সর্বোত্তম সেবা দেয়ায় আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য মেসোনাইড, সিভিডি, ল্যাব মেইড/ম্যান মেইড এবং এডি আমরা বাজার থেকে অপসারণ করতে বলেছি। পাশাপাশি ১ থেকে ৫০ সেন্টের মধ্যে সব ডায়মন্ডের গহনার কালার ও ক্লিয়ারিটির সর্বনিম্ন মানদণ্ড হবে ‘আইজে’ এবং ‘এসআই টু’।৫০ সেন্টের ওপর সব ডায়মন্ডের গহনার ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার ও বাজুসের সাবেক সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বাজারে নকল ডায়মন্ড বলে কিছু নেই। তবে ডায়মন্ডের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কম টাকায় তো ভালো মানের ডায়মন্ড পাওয়া যাবে না। মেসোনাইড, সিভিডি, এডি ডায়মন্ড না। আমরা ক্রেতাদের কাছে এগুলো তথ্য গোপন করে বিক্রি করি না।’
ব্যাগেজ রুলে তো দেশে ডায়মন্ড আসে না। তাহলে এতো ডায়মন্ড কোথা থেকে আসছে— এমন প্রশ্ন করা হলে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘হ্যাঁ, ব্যাগেজ রুলে ডায়মন্ড আসার সুযোগ নেই। সরকারকে যথাযথভাবে শুল্ক দিয়েই বাইরে থেকে ডায়মন্ড আনতে হবে। এখন প্রায় প্রতিটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ডায়মন্ড বিক্রি হচ্ছে। এতো ডায়মন্ড কোথা থেকে আসছে তা আমি বলতে পারবো না। এসব ডায়মন্ডের বৈধতা সরকারের দেখা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় ক্রেতারা কম দামে ডায়মন্ডের পণ্য কিনতে চান। আমি তাদের পরামর্শদিই, ১০ হাজার টাকা দিয়ে ডায়মন্ডের পণ্য না কিনে স্বর্ণ কেনা উচিত। ১০ হাজার টাকা দিয়ে তো ভালো ডায়মন্ড পাওয়া সম্ভব নয়। এর থেকে এডি পাথর ভালো। কারণ এডি পাথর ডায়মন্ডের মতোই ঝকঝকে। এছাড়া ছাড় দিয়ে যারা ডায়মন্ডের পণ্য বিক্রি করেন, তারা বাড়তি দাম ধরেই ছাড় দেন।সুতরাং ক্রেতারা ছাড় পাচ্ছেন— এমন ধারণা করে ডায়মন্ডের পণ্য কিনলে ঠকবেন।’
নিম্নমানের স্বর্ণের বিষয়ে তাঁতীবাজারের ব্যবসায়ী সুমন বলেন, এখন অনেক ক্রেতা কম দামে ভালো স্বর্ণের গহন কিনত চান। কিন্তু কম দামে তো ভালো স্বর্ণ পাওয়া সম্ভব না। কিছু কিছু ব্যবসায়ী স্বর্ণে খাদ দিয়ে ভ্যাট ছাড় অথবা মজুরি ছাড়ের নাম করে ক্রেতাদের কিছুটা কম দামে দিচ্ছে। কম দামে ভালো মনের স্বর্ণ পাচ্ছেন এমন ভেবে কোনো কোনো ক্রেতা খুশি হচ্ছেন। বাস্তবে এসব ক্রেতা প্রতারিত হচ্ছেন। তারা টাকা দিয়ে নিম্নমানের স্বর্ণ নিচ্ছেন।
স্বর্ণ চোরাচালানে বছরে পাচার প্রায় লাখ কোটি টাকা
অবৈধভাবে দেশে স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করা একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এক পিস সোনার বার দেশের কুমিল্লা,চট্টগ্রাম বা ঢাকা যে পথেই প্রবেশ করুক না কেন পাচার হয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে অন্তত ৩০-৪০ জন কাজ করেন। কেউ বাহক, কেউ লাইনম্যান, কেউবা ইনফরমার। আবার কেউ কেউ বাহক বা লাইনম্যান ও ইনফরমারের ওপর গতিবিধি অনুসরণের কাজ করেন। প্রতি পিস বার পাচারের জন্য মূল হোতা পাচার কাজে নিয়োজিত একজনকে দায়িত্ব দেন। এ জন্য তাকে দেওয়া হয় তিন হাজার টাকা করে। ওই টাকা থেকে বাহকসহ রাস্তায় নিয়োজিত ওয়াচম্যানদের দেওয়া হয় এক হাজার।
ওয়াচম্যানরা বিভিন্ন মোড়ে বা রুটে নির্দিষ্ট এরিয়ায় কাজ করেন। বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আসছে কিনা বা ওই রুটে সামনে কোনো বিপদ আছে কি না তা নির্দিষ্ট একটি বা দুটি মোবাইল নম্বরে জানিয়ে দেন তারা। তবে এর আগের বা পরের জনকে তা তারা জানতে পারেন না। তেমনি মূলহোতা কারা তাও তাদের জানতে দেওয়া হয় না। তারা শুধু নির্দিষ্ট সময় তথ্য দিয়ে সহায়তা করের এবং তাদের ভাগের টাকা যথাযথভাবে বুঝে নেন। সে টাকাও গ্রহণ করতে হয় অপরিচিত মাধ্যম থেকে। এ জন্য মূল হোতারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে বাজুসের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে, অবৈধভাবে দেশে স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে অবৈধভাবে আসা স্বর্ণের সিকিভাগ বা ২৫ শতাংশও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরে আসছে না। ফলে অনেকটা নির্বিঘ্নে নিরাপদে দেশে আসছে চোরাচালানের বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের চালান। আবার একইভাবে পাচারও হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাজুসের সাবেক সভাপতি এনামুল হক খান দোলন বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারাদেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণালংকার চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসছে। ৩৬৫ দিন বা এক বছর শেষে এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, দেশে চলমান ডলার সংকটে বিপুল পরিমাণ অর্থের এই পাচার ও চোরাচালান বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কড়া নজরদারি প্রয়োজন। আইন প্রয়োগকারী সব দপ্তরের সমন্বয়ে স্বর্ণ চোরাচালান বিরোধী সেল গঠন করতে হবে।
এমএএস/ইএ