কোমলপানীয়ের ব্যবসা রমরমা
দেশে কার্বোনেটেড ও অল্টারনেটিভ কার্বোনেটেড বেভারেজ মিলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার কোমলপানীয়ের বাজার রয়েছে। এবছর প্রচণ্ড গরমের কারণে এসব পণ্য বিক্রিতে সেরা সময় পার করেছে এ খাতের কোম্পানিগুলো। বেশ কিছু কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে চাহিদা ছিল বেশি। বিদেশি কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি দেশীয় কোম্পানিগুলোও ব্যবসা করেছে ভালো।
দেশে কোমলপানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন (বিবিএমএ) ও কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
তারা বলছেন, সারাবছর যে পরিমাণ কোমলপানীয় বিক্রি হয় তার ৭০-৭৫ শতাংশ বিক্রি হয় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাসে। কারণ এ সময়টি গরমকাল। এবছর গরমের তীব্রতা ছিল বেশি। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যেই দুটি ঈদ কেটেছে। সবমিলিয়ে এ মৌসুমে দুর্দান্ত ব্যবসা হয়েছে তাদের।
তারা আরও বলছেন, প্রচণ্ড গরম থেকে প্রশান্তি পেতে সফট ড্রিংকসে ঝুঁকছে সব বয়সের মানুষ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ২৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি পেয়েছে অধিকাংশ কোম্পানি। পাশাপাশি রপ্তানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যদিও সাধারণ সময়ে দেশের বাজারে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের বেশি হয় না।
বাংলাদেশের কোমলপানীয়ের বাজারে অন্যতম প্রতিষ্ঠান প্রাণ। চলতি বছরের ব্যবসা নিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল জাগো নিউজকে বলেন, এবছর আবহাওয়া বিক্রির জন্য দারুণ অনুকূলে ছিল। পাশাপাশি পিক সিজনে দুটি ঈদ পড়েছে। সেজন্য বিক্রি খুবই সন্তোষজনক ছিল। রপ্তানিও বেশ বেড়েছে এখন।
বিবিএমএ’র তথ্য অনুযায়ী, দেশে এর আগে সবচেয়ে বেশি কোমলপানীয় বিক্রি হয়েছিল ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালে এসে বিক্রি কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে ব্যবসা মন্দ ছিল না। ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনার প্রকোপে এ ব্যবসা বেশ মন্দার মধ্যে কেটেছে। ২০২২ সালে এসে তা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে।
দেশে কোমলপানীয়ের বাজারে আরেক বড় প্রতিষ্ঠান আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। চলতি বছর উৎপাদন সক্ষমতার চেয়েও তাদের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমলপানীয়ের চাহিদা বেশি ছিল। ফলে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ করতে পারেনি কোম্পানিটি।
আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের হেড অব মার্কেটিং মাইদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ক্যাপাসিটি ফেল করেছে। তারপরও ২৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এ বছর।
তিনি বলেন, চাহিদা এতটাই বেশি ছিল যে অনেক কোম্পানিরই ক্যাপাসিটি ছিল না এ মৌসুমে। ক্যাপাসিটি থাকলে আরও বেশি পণ্য বিক্রি করা যেত। যেসব কোম্পানির ক্যাপাসিটি অনেক, তারা বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে খুব ভালো ব্যবসা করেছে।
মাইদুল ইসলাম বলেন, বিশেষ করে বিদেশি কোম্পানিগুলো এবছর ভালো করেছে। তাদের প্রবৃদ্ধিও অনেক বেশি হয়েছে। এবছর পানীয় খাতের ব্যবসা ছিল বলা চলে ‘সোনায় সোহাগা’।
দেশে কোমলপানীয়ের বাজারে সবচেয়ে বড় অংশীদারত্ব বিদেশি কোম্পানিগুলোর। এরমধ্যে অন্যতম কোকা-কোলা ও পেপসি। কোক বাংলাদেশে ব্যবসা করছে পাঁচ দশকের বেশি সময়। এরমধ্যে ভালো একটি বছর পার করেছে বিদেশি কোম্পানিটি।
কোকা-কোলা বাংলাদেশের অংশীদার প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মহিউদ্দিন মোনেম জাগো নিউকে বলেন, এবছর বিক্রিতে যে ভালো সময় কেটেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্যই আবহাওয়া এ বছরের ব্যবসার জন্য সহায়ক ছিল। কোমলপানীয়ের কাঁচামাল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। সেগুলোর দাম বিশ্বপরিস্থিতির কারণে প্রচুর বেড়েছে। অন্যদিকে এখন ডলারের দাম বাড়ছে হু হু করে। সেটা সমন্বয় করে আমদানিতে একদম সুবিধা হচ্ছে না। সেজন্য বিক্রি বাড়লেও টেকসই সুফল মিলছে না কোম্পানিগুলোর।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কার্বোনেটেড বেভারেজ ও অল্টারনেটিভ কার্বোনেটেড বেভারেজ মিলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকসের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং অল্টারনেটিভ কার্বোনেটেড বেভারেজের বাজার রয়েছে ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি এক হাজার কোটি টাকার মতো পানির বাজার রয়েছে।
এছাড়া ইউএইচটি দুধ, দুগ্ধজাত পানীয় ও জুসের বড় ব্যবসা রয়েছে দেশে। সেখানেও প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। এবারের গরমে এসব পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে বেশ। ভালো করেছে আইসক্রিম কোম্পানিগুলোও।
এনএইচ/এমএইচআর/এএসএ/এমআরএম/এমএস