এসএওসিএল: সরকারি টাকায় কেনা লিফট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে!

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:১১ এএম, ১৮ জুলাই ২০২২
তথ্যচিত্র জাগো নিউজ

#সরকারের কেনা ২৮ লাখ টাকার লিফট তিন বছর ধরে ব্যক্তি- প্রতিষ্ঠানে
# বিটুমিন বিক্রি করে পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ ডিলারের
# বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের পর আট মাসেও মামলা হয়নি

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অংশীদারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) অব্যবস্থাপনার অন্ত নেই। সরকারি অংশীদারি প্রতিষ্ঠানটির টাকায় কেনা দুটি লিফট তিন বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে নগরীর খুলশী থানার একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজে। দুই কোটি ৮৭ লাখ ৭১ হাজার টাকার বিটুমিন বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র বিক্রয় প্রতিনিধি প্রায় দুই বছর ধরে অর্থ পরিশোধ করেননি। দুটি ঘটনায়ই কোম্পানির পর্ষদ সভায় মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের পর আট মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে এখনো মামলা হয়নি।

সরকারের কেনা ২৮ লাখ টাকার লিফট তিন বছর ধরে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অডিট অধিদপ্তরের অডিট আপত্তি সূত্রে জানা গেছে, এসএওসিএল’র ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে ৪১ লাখ ৭২ হাজার ৪০০ টাকা মূল্যের লিফটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট এসএওসিএলের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় বিপিসি।

অডিট আপত্তির সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি লিফট প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়। অন্য দুটি লিফটের বিষয়ে জানতে বন্দর থেকে খালাসকারী সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান ‘হট-লাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনাল’ ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি এজেন্ট ‘ও-২ এলিভেটরস কো. লিমিটেড’কে ২০২১ সালের ৮ জুন চিঠি দেয় এসএওসিএল। হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনাল এসএওসিএলের চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি। তবে চিঠির জবাব দেয় ‘ও-২ এলিভেটরস কো. লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজে লিফট দুটি স্থাপন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৬৩০ কেজি ভারবহন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ও এক হাজার কেজি ভারবহন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি লিফট আমদানির জন্য ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর যমুনা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় ঋণপত্র (নম্বর-৩০৩৮১৮০১০৩০৭) খোলে এসএওসিএল। এর মধ্যে এক হাজার কেজির দুটি লিফট স্থাপন করা হয়েছে ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজে। লিফট দুটির এলসি মূল্য ৩৩ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার। ওই সময় প্রতি ডলার ৮৩ টাকা ৯৫ পয়সা হিসেবে লিফট দুটির মূল্য ২৮ লাখ টাকার কিছু বেশি, যা লোপাট হয়েছে বলে অডিটরদের ধারণার সত্যতা মিলেছে।

সরেজমিনে খুলশী থানার নাসিরাবাদ এয়াকুব ফিউচার পার্কের দুই নম্বর গেটের ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রবেশমুখে সিঁড়ির পাশে একটি এবং বারান্দার শেষপ্রান্তে একটি লিফট সংযোজন করা হয়েছে। লিফটের নিচতলায় সবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ছাপানো নির্দেশনা লাগানো রয়েছে। সরকারি অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের টাকায় কেনা লিফট দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লাগানোর বিষয়ে মামলার সিদ্ধান্ত নেয় এসএওসিএল’র পর্ষদ।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হট-লাইনে আসা এক অভিযোগের সূত্র ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় অভিযান চালিয়ে এসএওসিএলের পরিচালক মঈন উদ্দীন আহমেদ ও তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদের বিরুদ্ধে ৫৭ কোটি টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তরের প্রমাণ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর নড়েচড়ে বসে বিপিসি। ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এসএওসিএলের ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আয়-ব্যয় ও অডিটসহ সার্বিক আর্থিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিপিসি। বিপিসির তদন্ত কমিটি ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরের নমুনাভিত্তিক কিছু আর্থিক কার্যক্রমের অনুসন্ধান করে প্রায় তিনশ কোটি টাকার অনিয়মের সত্যতা পায়। এরপর বিপিসি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দুদকে পাঠায়।

বিপিসির তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২০২১ সালের ৯ মার্চ প্রায় ৮১ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মঈন উদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এর আগে গত বছরের ১৮ আগস্ট করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. শাহেদকে আসামি করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন>>> পেট্রোবাংলার ৩৭০০ কোটি টাকার বকেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাস্টমস

অন্যদিকে, মহাব্যবস্থাপক মো. শাহেদ মারা যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় বিপিসি। এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসএওসিএলে ঘটে যাওয়া নানান অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র। মূলত ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজের মালিক ও অধ্যক্ষ ছিলেন প্রয়াত মহাব্যবস্থাপক শাহেদের বাবা ইঞ্জিনিয়ার বাকী। ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজটি পশ্চিম খুলশী থাকলেও ২০১৭ সালে নিজেদের মালিকাধীন ৯ তলায় ভবনে চলে আসে। ওই নতুন ভবনেই লাগানো হয় লিফট দুটি। পরে শাহেদ মারা যাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় তার বাবাও মারা যান। এরপর প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হন শাহেদের আরেক ভাই ইঞ্জিনিয়ার এবিএম আবদুল ওয়াহেদ। তিনি ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বও নেন। ওই ভবনে তাদের মালিকানাধীন চিটাগাং ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নামের আলাদা আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে চারটি বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়।

২১ মাসেও আদায় হয়নি বিটুমিন বিক্রির ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা

প্রয়াত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ (জিএম শাহেদ) দায়িত্বে থাকাকালীন এসএওসিএলের আমদানি করা বিটুমিন বিক্রির জন্য একমাত্র ডিলার ছিল চট্টগ্রাম মহানগরীর কদমতলী এলাকার মেসার্স বর্ণালী নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শুভাশীষ বোস ওরফে মিঠু বাবুর সঙ্গে জিএম শাহেদের সখ্য ছিল। তিনি মারা যাওয়ার দিন পত্রিকায় শোকবার্তা দিয়ে বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলেন শুভাশীষ বোস ওরফে মিঠু। ২ কোটি ৮৭ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকার পাওনা পরিশোধের জন্য ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি শুভাশীষকে চিঠি দেয় এসএওসিএল।

ওই চিঠি সূত্রে জানা যায়, জিএম শাহেদ মারা যাওয়ার পর ৬০-৭০ গ্রেডের ৩৯৯৬ ড্রাম বিটুমিন বিক্রি করে এ পর্যন্ত এসএওসিএলকে মূল্য পরিশোধ করেননি শুভাশীষ বোস মিঠু। বিপিসি ও এসএওসিএলের তৎকালীন ডিজিএম মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদের সই করা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬০-৭০ গ্রেডের বিপিসি নির্ধারিত দামে প্রতি ড্রাম ৭ হাজার ২০০ টাকা হারে মোট ২ কোটি ৮৭ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে এসএওসিএলের হিসাবে জমা দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’ ওই চিঠির পরে বেশ কয়েকবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ওই অর্থ পরিশোধ করেননি শুভাশীষ। এরপর মামলার সিদ্ধান্ত নেয় এসএওসিএল পর্ষদ।

দুটো ঘটনায়ই ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইনে মামলার সিদ্ধান্ত

২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর এসএওসিএলের আইন উপদেষ্টা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিনকে মামলার সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেন বিপিসি ও এসএওসিএলের তৎকালীন ডিজিএম মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ। ওই চিঠি সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লাগানো দুটি লিফটের অর্থ আদায় এবং ৩৯৯৬ ড্রাম বিটুমিন বিক্রির অর্থ আদায়ের জন্য ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর এসএওসিএলের ৪১২তম পর্ষদ সভায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় আদালতে মামলার সিদ্ধান্ত হয়।

ওই চিঠিতে উল্লেখ করা পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তর মধ্যে (১১.২ এর খ) বলা হয়- ‘দুটি লিফটের অর্থ বাবদ ২৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭০০ টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ন্যাশনাল পলিটেকনিক চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে একটি রেগুলার মামলা স্থানীয় থানায় দায়ের এবং অন্য মামলাটি পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট ১৯১৩ এর আওতায় জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের অনুকূলে দায়ের করার প্রস্তাব পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হলো।’

আরও পড়ুন>>>১৯ বছর পর অব্যয়িত সোয়া ১১ কোটি টাকা আদায়ে পদক্ষেপ বিপিসির

প্রতিষ্ঠানটির ভেতরের ফাইল ছবি

প্রতিষ্ঠানটির ভেতরের ফাইল ছবি

(১১.২ এর গ) সিদ্ধান্তে বলা হয়- ‘বিটুমিন বিক্রয় বাবদ সমুদয় পাওনা অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে এসএওসিএলের আমদানি করা বিটুমিন বিক্রয়ের একমাত্র প্রতিনিধি মেসার্স বর্ণালী লুব্রিকেন্টস লিমিটেডের বিরুদ্ধে একটি রেগুলার মামলার স্থানীয় থানায় দায়ের ও অন্যটি পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট ১৯১৩ এর আওতায় জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের অনুকূলে দায়ের করার প্রস্তাব পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হলো।’

আইন উপদেষ্টাকে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘পর্ষদ সভার উল্লেখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে আবশ্যিকভাবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করে মামলার কপি ডিজিএমের কাছে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হলো।’কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের আট মাস পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে এখনো মামলা করা হয়নি। অনেকেই মামলা না করার পেছনে বিলম্বের জন্য আইন উপদেষ্টার যোগসাজশের কথা উল্লেখ করেন।

সচেতন মহলের ভাষ্য

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসএওসিএল সরকারি অংশীদারি প্রতিষ্ঠান হলেও ওখানে শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। অনেক কাহিনি রয়েছে। মারা যাওয়া জিএম এবং তৎকালীন ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের যোগসাজশে শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সরকারি টাকা তারা ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়ে যেতেন।’

বিটুমিন বিক্রি করে পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ ডিলারের-ফাইল ছবি

বিটুমিন বিক্রি করে পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ ডিলারের-ফাইল ছবি

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের খোয়া যাওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্য বোর্ড সভা যখন কারও বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববানদের উচিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা করে আইনের আশ্রয় নেওয়া। কারণ এগুলো রাষ্ট্রের টাকা, নাগরিকের টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে যেভাবে হরিলুট হয়েছে, সেগুলো উদ্ধারের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া। সেখানে যদি ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে যারা এ বিষয়ে দায়িত্ববান তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের আঙুল উঠবে। এখানে সিদ্ধান্তের পরও সরকারি অর্থ আদায়ে আট মাস ধরে মামলা না হওয়ার বিষয়টিতে প্রতিষ্ঠানও দায় এড়াতে পারে না।

এসএওসিএলের আইন উপদেষ্টার ভাষ্য

আট মাসেও মামলা না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এসএওসিএলের আইন উপদেষ্টা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘মামলার জন্য এসএওসিএলের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও মামলা করার জন্য যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো জোগাড় করতে সময় লেগেছে। বিশেষ করে লিফট দুটি ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজের ভবনে লাগানো হয়েছে, কিন্তু ওই ভবনের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান অন্যজন। বিষয়টিতে পরিষ্কার ধারণা পেতে, প্রতিষ্ঠানটির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য আমরা প্রতিষ্ঠানটিতে চিঠি দিয়েছি। এর মধ্যে চিঠি দিয়ে অনেকগুলো ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে মামলা করা যাবে।’

বিটুমিনের ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আদায়ে আট মাসেও মামলা না হওয়া এবং বিলম্বের কোনো কারণ তিনি উল্লেখ করতে পারেননি। তবে ওই মামলাটিও আগামী সপ্তাহে দায়ের করা হতে পারে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।

আরও পড়ুন>>> এশিয়াটিক অয়েলে ব্যাপক অনিয়ম: অনুসন্ধান করবে দুদক

এসএওসিএল: অব্যবস্থাপনায় বাস্তবায়ন হয় না বোর্ড সভার সিদ্ধান্তও!

এসএওসিএল এর প্রধান কার্যালয়-ফাইল ছবি

এসএওসিএল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য

এ বিষয়ে জানতে এসএওসিএলের বোর্ড চেয়ারম্যান এবং বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদের মোবাইলে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দেওয়া হলে ফিরতি বার্তায় তিনি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান জিএম মণি লাল দাশের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

এ বিষয়ে বিপিসি ও এসএওসিএলের মহাব্যবস্থাপক মণি লাল দাশ বলেন, ‘আগামী সপ্তাহেই মামলা দুটি দায়ের হতে পারে। মামলার ডকুমেন্টস জোগাড় করতে হয়তো কিছুটা সময় লেগেছে।’

তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মামলা না হওয়ার পেছনে কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

ইকবাল হোসেন/এমএএইচ/এসএইচএস/জেআইএম

এসএওসিএলের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও মামলার জন্য যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো জোগাড় করতে সময় লেগেছে। বিশেষ করে লিফট দুটি ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজের ভবনে লাগানো হয়েছে, কিন্তু ওই ভবনের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান অন্যজন। বিষয়টিতে পরিষ্কার ধারণা পেতে, প্রতিষ্ঠানটির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য আমরা প্রতিষ্ঠানটিতে চিঠি দিয়েছি। এর মধ্যে চিঠি দিয়ে অনেকগুলো ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে মামলা করা যাবে।

এসএওসিএল সরকারি অংশীদারি প্রতিষ্ঠান হলেও ওখানে শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। অনেক কাহিনি রয়েছে। মারা যাওয়া জিএম এবং তৎকালীন ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের যোগসাজশে শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সরকারি টাকা তারা ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়ে যেতেন। প্রতিষ্ঠানের খোয়া যাওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্য বোর্ড সভা যখন কারও বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববানদের উচিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা করে আইনের আশ্রয় নেওয়া। কারণ এগুলো রাষ্ট্রের টাকা, নাগরিকের টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে যেভাবে হরিলুট হয়েছে, সেগুলো উদ্ধারের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।