রপ্তানি আয়ে রেকর্ড, তৈরি পোশাক থেকেই এলো ৮২ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২২
ফাইল ছবি

করোনার অভিঘাত আর ইউরোপে যুদ্ধের দামামার মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছেন উদ্যোক্তারা। রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে ৮২ শতাংশই তৈরি পোশাক।

রোববার (৩ জুলাই) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। যা বিগত অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাত থেকে আয় বেশি এসেছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এ বছর মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। নিট পোশাকে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে ১৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ।

ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিদায়ী অর্থবছরে জুলাই থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ৫ হাজার ২০৮ কোটি ৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

গত অর্থবছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরে ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ১৬২ কোটি ১৯ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ১২৪ কোটি ৫২ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে এসেছে প্রায় ১৯ কোটি ডলার।

এছাড়া স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, বাইসাইকেল থেকে ১৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ক্যাপ বা টুপি থেকে ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, প্লাস্টিক পণ্য থেকে ১৬ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং হ্যান্ডিক্রাফট (হস্তজাত শিল্প) রপ্তানি থেকে ৪ কোটি ২৮ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

তবে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৯১ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত বছরের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জাগো নিউজকে বলেন, রপ্তানির এই অর্জন প্রত্যাশিত ছিল। কাচামালের দাম বাড়ছে। সে কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। আবার আমাদের উপর ক্রেতাদের যে আস্থা, সে কারণে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে আমরা যেভাবে কোভিড ম্যানেজমেন্ট করেছি, সেটা ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কা করতে পারেনি। এ কারণে এসব দেশগুলোর তুলনায় আমরা এগিয়ে গেছি। আমাদের পোশাক শিল্পটা অনেক স্বচ্ছ। বৈশ্বিক রাজনীতির কারণে চায়না থেকে যে অর্ডারগুলো সরে গেছে, সেগুলো বাংলাদেশে আসছে। এসব মিলিয়ে রপ্তানির এই ধারা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল।

পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতের রপ্তানি বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শামীম এহসান বলেন, আমাদের প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের মত এক্সপোর্ট (রপ্তানি) ঘাটতি আছে। একা পোশাক খাত এটা মেটাতে পারবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের পণ্য ও সেবা বৈচিত্র্যকরণে আরও বেশি নজর দিতে হবে। আইটি ও ফুড প্রসেসিংসহ অন্যান্য সেক্টরকে এখন এগিয়ে আসতে হবে।

এসএম/এমপি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।