বিদেশি কোম্পানির শাখা অফিসের ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হচ্ছে
শেভরন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, নেসলে, স্যামসাং ও জেনারেল ইলেকট্রিকের মতো বৈশ্বিক বহু প্রতিষ্ঠান শাখা অফিসের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এসব বিদেশি কোম্পানির শাখা অফিস, লিয়াজো অফিস কিংবা প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হচ্ছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিলে ভ্যাট আইনের সংশোধন করে এ বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ২০২২-২৩ বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রাজস্ব আদায়ের বড় খাত মূল্য সংযোজন করে (ভ্যাট) এবার বেশ কিছু রদবদলের ঘোষণা দিয়েছেন।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬ এর প্রয়োগ ও পদ্ধতিগত জটিলতা দূর করতে বাজেট বক্তৃতায় ও অর্থ বিলে বেশ কিছু সংশোধনের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশি কোম্পানির শাখা বা লিয়াজো বা প্রজেক্ট অফিস স্থাপনে ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে ভ্যাট আইনের ধারা ৪ এর সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে অর্থ বিলে। এ ধারা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের মোট আয় (টার্নওভার) নির্বিশেষে ভাট নিবন্ধন নিতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক, গুগল, ইউটিউব, ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট, নেটফ্লিক্সের মতো ডিজিটাল কোম্পানিকে ২০২০ সালের পর থেকে ভ্যাটের আওতায় আনে এনবিআর। এখন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য বিআইএন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) নিতে হচ্ছে। এ খাত থেকে বড় অঙ্কের আয়ও করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ভ্যাট আইনে সংশোধনের প্রস্তাব এনে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যাঞ্চ অফিস বা লিয়াজো অফিসকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, ভ্যাট খেলাপি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে মূসক কর্মকর্তাগণ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করার বিধান আইনে সন্নিবেশকরণের প্রস্তাব করছি।
অর্থ বিলে আনা অন্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-
১. বকেয়া মূসক আদায়ের ক্ষেত্রে সুদ আরোপের সময়সীমা সর্বোচ্চ ২৪ মাস করা।
২. নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মূসক বা টার্নওভার কর দাখিলপত্র পেশ না করার ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করা।
৩. ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানার পরিমাণ জড়িত রাজস্বের ‘সমপরিমাণ’ এর পরিবর্তে ‘অন্যূন অর্ধেক এবং অনূর্ধ্ব সমপরিমাণ’ করা।
৪. করদাতাদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের ক্ষেত্রে জরিমানা আরোপ না করা এবং বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার মধ্যবর্তী সময়ে দাখিলপত্র পেশ না করা হলে জরিমানা আরোপ না করার বিধান সংযোজন।
৫. আপিল কমিশনারেট, আপিলাত ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানা বাদে শুধু দাবী করা করের অংশবিশেষ জমা প্রদানের বিধান করা।
৬. আপিলাত ট্রাইব্যূনালে নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান আপিল দায়ের করতে না পারলে মেয়াদ আরও ৬০ দিন বর্ধিত করার বিধান সন্নিবেশকরণ করা।
৭. উৎসে ভ্যাট কর্তনের ক্ষেত্রে সরবরাহকারী কর্তৃক হ্রাস সংক্রান্ত সমন্বয় গ্রহণের সময়সীমা ২ কর মেয়াদ হতে বৃদ্ধি করে ৪ কর মেয়াদ করা।
৮. ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য বা সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনের শর্ত লংঘন করলে অব্যাহতি সুবিধা বাতিলের পরিবর্তে শুধু জরিমানা আরোপ করা।
এসএম/আরএডি/এএসএম