ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট দ্রুত পাসের দাবি


প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৪

বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেয়ার বাজারের সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতার স্বার্থে জাতীয় সংসদে দ্রুত ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট’ পাসের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। একইসঙ্গে নতুন প্রাথমিক গণ-প্রস্তাব (আইপিও) আসার ক্ষেত্রে তথ্যসমূহ যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তারা।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনলাইন নিউজপোর্টাল দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোরডটকম এবং অ্যাপোলো ইস্পাত-এর যৌথ উদ্যোগে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।

দ্য রিপোর্ট সম্পাদক তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিখি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। গোলটেবিল আলোচনায় একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা, ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি মো. শাকিল রিজভী, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন এবং আইডিএলসি ইনভেস্টমেনন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএমবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এ বাজারে যত বিপর্যয় হোক না কেন সম্ভাবনার সুযোগ রয়েছে। এ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারসহ সকল রেগুলেটরদের দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এগুলো বাস্তবরূপ দিতে পেশাদার ব্যবস্থাপনা, গুড গর্ভনেন্স, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করাতে হবে। একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় হলে পুঁজিবাজারে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। মন্ত্রী ও সচিবদের বিরোধীতার কারণে এটা সম্ভব হয় না। কারণ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে তারা গাড়িসহ অন্যান্য যেসব সুবিধা নিয়ে থাকেন সেগুলো পেতে কিছুটা অসুবিধা হবে।

অধ্যাপক আবু আহমেদ অবিলম্বে সংসদে ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট’ পাসের দাবি জানিয়ে বলেন, এটা না হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর হিসাবে অস্বচ্ছতা থেকে যাচ্ছে। এর ফলে শেয়ার অতিমূল্যায়িত হচ্ছে ও নানা রকম ম্যানিপুলেশন হচ্ছে।

তিনি বলেন, এছাড়া পুঁজিবাজারে কোন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বিএসইসি’র উচিত শুধু ইস্যু ম্যানেজারের তৈরি পেপারের ওপর নির্ভরশীল না থেকে সরেজমিনে কোম্পানিগুলো পরিদর্শন করা, প্রদত্ত তথ্য যাচাই করা এবং কোম্পানির ট্যাক্স ফাইল দেখা।

ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট গত ১০ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে এবং পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে তা পাস হতে পারে। তবে এতে কী আছে এখনও তা প্রকাশ করা হয়নি। এরকম একটি পাবলিক ইস্যুতে কেন এত গোপনীয়তা, তা আমার জানা নেই।’

কোম্পানি একীভূতকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোম্পানির একীভূতকরণের বিষয়ে বিদ্যমান আইনে অসঙ্গতি রয়েছে। এক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। আইন-কানুন বদলানো না গেলে স্টক এক্সচেঞ্জের করার কিছু নেই।’

ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ার বাজারের সবকিছু অডিট রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং শেয়ার বাজারের উন্নয়নের জন্য অন্য সঠিক ও  মানসম্মত অডিট হওয়া দরকার।

‘১৯৯৬ ও ২০১০ সালের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়’ সেজন্য বিনিয়োগকারীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অনেক কোম্পানির শেয়ারের দর অহেতুক বাড়ে। তবে একটি কোম্পানির আয়, সম্পদ ও লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষমতার ওপর শেয়ার দর বাড়া দরকার।’

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘বাজার থাকলে কারসাজি থাকবে। নিয়ন্ত্রকদের এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। যদি কেউ ১ কোটি টাকার কারসাজি করে তাহলে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করলে হবে না, দ্বিগুণ জরিমানা (২ কোটি টাকা) জরিমানা করতে হবে। শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে ও সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে আমাদের শেয়ার বাজারের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।’

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ফোর্সড সেল বলে কোনো কিছুই নেই। এ ধরণের কার্যক্রমকে বলে মার্জিন কল। এ শব্দ কে আবিষ্কার করেছেন তা আমি জানি না। ২০১০ সালে মার্জিন কল বন্ধ না করা ভুল ছিল। ফোর্সড সেল মূলত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই করা উচিত ছিল। কিন্তু বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় দেখা গেছে এটা বন্ধের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সুপারিশ করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর চেয়েও আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর মুনাফা বেশি হয়ে থাকে। এর মধ্যে অনেক দুর্বল কোম্পানিও থাকে। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

দ্য রিপোর্ট সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যদি তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তাহলে শেয়ারবাজার এগিয়ে যাবে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।