‘নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নিম্নবিত্তদের আর্থিক বোঝা বাড়বে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:০৬ পিএম, ২০ মার্চ ২০২২
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন/ ফাইল

জ্বালানি তেলসহ আমদানি করা নিত্যপণ্যের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে যৌক্তিকভাবে সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি থেকে বড় বড় প্রতিষ্ঠান দ্রুত রিকভারি করতে পেরেছে। তারা এখন ভালো করছে, রপ্তানি বেড়েছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। তবে নিম্ন আয়ের পরিবার ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান এখনও সেভাবে রিকভারি করতে পারেনি। ফলে এখন মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের ওপর আর্থিক বোঝা বাড়বে।

রোববার (২০ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাজারভিত্তিক করতে চাইলে যখন দাম বাড়বে তখন বাড়াতে হবে, কমলে কমাতে হবে। ২০১০ সালের দিকে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছিল বিশ্ববাজারে, এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। আবার ২০২০ সালের এপ্রিলে নেগেটিভ হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশে ডিজেলের দাম শুধু একবার সমন্বয় করা হয়েছিল।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের যে মূল্য বৃদ্ধি, ১০০ ডলার বা ৯৮ ডলার- এটা যে থাকবে তা বলা যাবে না। কারণ এটা স্বাভাবিক না, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি। এটা নেমে যাবে। কিন্তু ছয় মাসে নামবে নাকি এক বছরে নামবে সেটা নির্ভর করছে যুদ্ধ পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি কেমন রিকভারি হচ্ছে, বিশ্বের বড় বড় ব্যাংকের পলিসি কেমন হবে তার ওপর।

তিনি বলেন, নভেম্বরে ডিজেলের দাম যে ১৫ টাকা বাড়ানো হলো, বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে তার কিন্তু সম্পর্ক ছিল না। আবার ডিজেলের দামের সঙ্গে বাস ও লঞ্চের যেহারে ভাড়া বাড়ানো হলো- তার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। মূল্য সমন্বয় যাতে একটা যৌক্তিকভাবে হয় সেটা দেখতে হবে।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, লোকসান কাটাতে পেট্টোবাংলাসহ অনেকেই তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তবে এখনই আমরা যদি তেল-গ্যাসের দাম না বাড়াই তাহলে চলমান বাজেটের ওপর এর কী প্রভাব পড়বে, সেটার সক্ষমতা আছে কি না সেটা দেখতে হবে। বাজেটে সমন্বয় হলে আর্থিক চাপের কারণে মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি গ্রহণযোগ্য হবে না।

‘যদি কোনো মূল্য বৃদ্ধি না করা হয় তাহলে চলতি আর্থবছরের আগামী তিন মাসে ডিজেলের ওপরে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তিন হাজার ৯১৫ কোটি টাকা, এলএনজির দাম যদি না বাড়ানো হয় তাহলে ১৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো ভর্তুকি দিতে হবে। আবার দুই দফায় সরকার ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ৪৩০ কোটি টাকার মতো ভর্তুকি দেবে। ভোজ্যতেলে উৎপাদন-আমদানি-পাইকারিতে যে ভর্তুকি দেবে- ভ্যাটবাবদ এটা বড় ধরনের কোনো অঙ্ক না। সব মিলিয়ে ৩২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভর্তুকি দিতে হতে পারে।’

তিনি বলেন, তবে অর্থবছরের প্রথমার্ধে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার মতো উদ্বৃত্ত আছে। ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার টাকা তুলেছে, আবার বিদেশি সহায়তাও পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, সরকারি ডিপোজিট ২২ হাজার কোটি টাকার মতো বেড়েছে। বাজেটে উদ্বৃত্ত আছে, অন্যদিকে তারল্যও আছে। এটা প্রথমার্ধের হিসাব।

সারা বছরের হিসাবটাও দেখতে হবে। আমার মনে হয় সবমিলিয়ে বাজেটের প্রথমার্ধে উদ্বৃত্ত আছে অন্তত ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো। সামনে (শেষার্ধে) যে চাপ আসবে এ টাকা দিয়ে সেটাকে সামাল দেওয়া খুব একটা কঠিন হবে না। তাই চলতি বাজেটের বাকি তিন মাসে আবারও মূল্যবৃদ্ধি করে অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।

ইএআর/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।