ক্রেতা সংকটে শেয়ারবাজার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ২০ মার্চ ২০২২
ফাইল ছবি

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেন শুরু হতেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় একডজন কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এ সংখ্যা। লেনদেনের শেষদিকে এসে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের পতন দিয়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এতো বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকটের দৃশ্য আর দেখা যায়নি। শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রেতা সংকট দেখা দিলেও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে এক’শ পয়েন্টের কম। মূলত নতুন সার্কিট ব্রেকারের কারণে সূচক বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় লেনদেনেও ভাটা পড়েছে। ফলে আজ ডিএসইতে ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।

নানা ইস্যুতে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন দেখা দিলে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম চালু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন এই নিয়মের ফলে একদিনে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা ইউনিটের দাম সর্বোচ্চ দুই শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে।

এই নিয়ম চালুর পর শেয়ারবাজারে টানা বড় উত্থান প্রবণতা দেখা দেয়। কিন্তু গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিক্রির চাপ বাড়ায়। এতে বাজারে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর রোববার (২০ মার্চ) বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের বিক্রির চাপ এতোটাই বেশি ছিল যে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেতার ঘর শূন্য হয়ে যায়।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিনে দুই শতাংশের বেশি দাম কমতে পারবে না- সার্কিট ব্রেকারের এই নিয়ম বর্তমান বাজার পরিস্থিতির জন্য ইতিবাচক। কিন্তু এই নিয়মের কারণে অল্প শেয়ার বিক্রির চাপ আসলেই ক্রেতাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। এতে লেনদেনের গতিও কমেছে।

তারা আরও বলছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে শেয়ারবাজার আগে থেকেই নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। নতুন সার্কিট ব্রেকার চালুর পর বাজারে কিছুটা গতি ফিরেছিল। কিন্তু এখন বিক্রির চাপ বাড়ায় আবার নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর অর্থ বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি আস্থা স্থাপন করতে পারছেন না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের প্রথম ১০ মিনিটেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু প্রথম ২০ মিনিটের লেনদেন শেষ হতেই বদলে যেতে থাকে চিত্র। বিনিয়োগকারীদের বিক্রয় আদেশের চাপে ক্রেতাশূন্য হতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান। লেনদেনের শেষ দুই ঘণ্টা এই প্রবণতা আরও বাড়ে। ফলে লেনদেনের এক পর্যায়ে ১৬৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।

এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৭ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৬৯৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ১৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৩ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৪৩৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

বাজারটিতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে মাত্র ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩৯টির। আর ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের এই দরপতনের সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬১৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। গত বছরের ১৮ এপ্রিলের পর ডিএসইতে এতো কম লেনদেন আর দেখা যায়নি। গত বছরের ১৮ এপ্রিল ডিএসইতে ৬০২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

লেনদেন খরার দিনে টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ড্রাগন সোয়েটারের ২৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আইএফআইসি ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, বিডিকম অনলাইন, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, আমরা টেকনোলজি এবং সাইফ পাওয়ার টেক।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৬৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৭টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর একাধিক সদস্য বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে আগে থেকেই শেয়ারবাজার নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারে দরপতনের প্রবণতা বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি বিএসইসি নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করায় বাজার কিছুটা গতি ফিরে পায়। কিন্তু এখন বিক্রির চাপ বাড়ায় আবার বাজারে পতন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আর বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কারণে তারা নতুন করে শেয়ার কিনছেন না। ফলে লেনদেনও কমে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারে এখন নেতিবাচক প্রভাব পড়ার মতো তেমন কিছু দেখছি না। বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেহেতু এখন একদিনে দুই শতাংশের বেশি দাম কমতে পারবে না, তাই বিক্রির চাপ অল্প বাড়ালেই ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ছে। তবে বিএসইসি দুই শতাংশের যে নিয়ম করেছে তা বাজারের জন্য ইতিবাচক।

এমএএস/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।