অবৈধ ব্যয়ে জীবন বীমা কর্পোরেশন

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ২০ মার্চ ২০২২
জীবন বীমা কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা অবৈধভাবে খরচের অভিযোগ উঠেছে সরকারের একমাত্র জীবন বিমা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, সর্বশেষ ২০২১ সালে কোম্পানিটি আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবে অতিরিক্ত খরচ করেছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে কোম্পানিটি এভাবে অবৈধ ব্যয় করছে।

এমন অবৈধ ব্যয়ের কারণে পলিসি গ্রাহকরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের প্রাপ্য বোনাস থেকে। একই সঙ্গে লভ্যাংশ থেকে সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে। আর উপযুক্ত বোনাস দিতে না পারায় গ্রাহকের আস্থা হারাচ্ছে এই সরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানটি।

গ্রাহকদের টাকা অবৈধভাবে ব্যয় করার পাশাপাশি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে সঠিকভাবে বিমা দাবির টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগও রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিবছর কোম্পানিটিতে বড় অঙ্কের পলিসি তামাদি হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ২০২১ সালে কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে খরচ করেছে ২৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা। তবে আইন অনুযায়ী বছরটিতে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা ছিল ২০৬ কোটি ৯৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ হিসাবে আইন লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানটি ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। আগের বছর ২০২০ সালে কোম্পানিটি ৪৩ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যয় করে।

সবশেষ ২০২১ সালে কোম্পানিটি আইন লঙ্ঘন করে যে অর্থ ব্যয় করেছে তার মধ্যে জানুয়ারি-মার্চ সময়ে রয়েছে দুই কোটি ৫৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এছাড়া এপ্রিল-জুন সময়ে পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার টাকা, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ২৩ কোটি ৬১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করা হয়েছে।

এদিকে কোম্পানিটির বিমা দাবির চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২১ সালে কোম্পানিটি ৫৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার বিমা দাবি পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে গ্রাহকের মৃত্যুজনিত বিমা দাবি রয়েছে ২৭ কোটি ২১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবি ২৪ কোটি ৩৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা, সার্ভাইবেল বেনিফিটি (এসবি) এক কোটি ৯১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং গ্রুপ বিমা দাবি পাঁচ কোটি ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা রয়েছে।

বছরটিতে বিমা দাবির টাকা না পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা আট হাজার ৩৬ জন। এর মধ্যে গ্রাহকের মৃত্যুজনিত বিমা দাবি এক হাজার ২৪৬টি, পলিসির মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবি ছয় হাজার ৬১৩টি, এসবি তিনটি এবং গ্রুপ বিমা দাবি ১৭৪টি।

বড় অঙ্কের বিমা দাবি অপরিশোধিত থাকার পাশাপাশি কোম্পানিটিতে মোটা অঙ্কের পলিসি তামাদি (বিমা পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গ্রাহক প্রিমিয়ামের টাকা না দেওয়ায় পলিসি বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়ে গেছে। ২০২১ সালে কোম্পানিটিতে তামাদি পলিসির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪৭০টি।

জীবন বীমা কর্পোরেশনের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমি জীবন বীমা কর্পোরেশনে নতুন যোগ দিয়েছি। ২০২১ সালের রিপোর্টটি আমি এখনও দেখিনি। আমরা অবশ্যই খরচ কমানোর চেষ্টা করবো।

বিমা দাবি বকেয়া থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিমা দাবি পরিশোধ করি। যেসব বিমা দাবি বকেয়া আছে সেগুলো পরিশোধের জন্য আমি এসেই উদ্যোগ নিয়েছি। যেগুলো দুই মাস, তিন মাস, ছয় মাস বকেয়া আছে, সেগুলো আমরা চিহ্নিত করছি। তিন বছরের ওপরে যে দাবিগুলো বকেয়া আছে, সেগুলো কেন অনিষ্পন্ন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। দরকার হলে গ্রাহক সমাবেশ করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

এমএএস/ইএ/এসএইচএস/এমএস

২০২১ সালে কোম্পানিটি ৫৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার বিমা দাবি পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে গ্রাহকের মৃত্যুজনিত বিমা দাবি রয়েছে ২৭ কোটি ২১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবি ২৪ কোটি ৩৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা, সার্ভাইবেল বেনিফিটি (এসবি) এক কোটি ৯১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং গ্রুপ বিমা দাবি পাঁচ কোটি ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা রয়েছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।