সুবিধার জিডিপি দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা লাঘব হবে না
জাতীয় বাজেটে আর্থসামাজিক বৈষম্য হ্রাস ও প্রকৃত মানবউন্নয়নকে গুরুত্ব না দেওয়ায় দারিদ্র্য হার হ্রাসে জমি, জলা, জনসংখ্যা এমনকি শিক্ষাও উল্লেখযোগ্য ভূমি রাখতে পারছে না।
‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা: বরিশাল অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। শুক্রবার (১৮ মার্চ) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ভার্চুয়ালি এ সভার আয়োজন করে।
৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাক্ষরতার হার নিয়েও বরিশাল বিভাগ দারিদ্র্য হ্রাসের ধারা অব্যাহত না রাখতে পারার পেছনে নীতি-নির্ধারকদের অদূরদর্শিতা ও অসম বাজেট বরাদ্দই দায়ী বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে বাজেট প্রণয়নবিষয়ক মতবিনিময় সভায় স্থানীয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, কৃষকনেতা, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিককর্মী, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক প্রতিনিধি আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেন।
অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, জাতীয় বাজেটের কাঠামো দারিদ্র্য-বৈষম্য নিরসন, প্রকৃতি-পরিচর্যা, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শিল্প-কৃষি-কর্মসংস্থান-মানবসম্পদ-মানবপুঁজি সৃষ্টি ও প্রযুক্তি বিকাশমুখী না হলে শোভন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা স্বপ্নই থেকে যাবে।
তিনি বলেন, ভুল-ভ্রান্ত জিডিপি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে উচ্চপ্রবৃদ্ধির নামে যে ‘সুবিধার জিডিপি’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, তাতে আর যা-ই হোক দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা কোনোভাবেই লাঘব হবে না। এ কারণেই জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময় হলে সাধারণ মানুষের মুখ ভার হয়ে আসে, দৈনন্দিন জীবনের অংক মেলাতে গিয়ে তারা চোখে অন্ধকার দেখে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, বাজেট শুধু কিছু অর্থেরই বরাদ্দ নয়, তা গুণগত পরিবর্তন সাধনউদ্দিষ্টও। দারিদ্র্য-বৈষম্য-বঞ্চনা ও উন্নয়নসংশ্লিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতির আলোকে যথামাত্রা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পরেই জাতির উদ্দেশে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে। দুবৃর্ত্তায়িত আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবনাসমূহ মেনে নেওয়া কঠিন হলেও বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম থাকলে তা গ্রহণ না করার কোনো কারণ নেই।
বরিশাল অঞ্চল থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আখতারুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘জন, জল ও জমি-তিনটাতেই বরিশালের প্রাচুর্যতা রয়েছে। বসবাসের জন্যেও এ বিভাগ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে সরকারের উচিত এ বিভাগের উন্নয়ন নিশ্চিত করা।’
বরিশাল বিভাগের নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা সভায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, উপকূলীয় অবস্থান, অধিক কৃষিনির্ভরতা, শিল্পবিকাশের অভাব এবং অসম উন্নয়ন বরাদ্দের কারণে বিপুল জন-জল-জমিসম্পদের পাশাপাশি উত্তরে পদ্মা সেতু, দক্ষিণে পায়রা সমুদ্রবন্দর, পূর্বে ভোলার প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পশ্চিমের মোংলা সমুদ্রবন্দর থাকা সত্ত্বেও বরিশাল বিভাগের উন্নয়ন সম্ভাবনা কাজে লাগবে না, যদি না সুষ্ঠু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করা হয়।
তারা আরও বলেন, বরিশাল বিভাগে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, ভোলা-পটুয়াখালী-বরগুনা-বরিশালের চরাঞ্চলে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, পিরোজপুর-ঝালকাঠিতে কৃষি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কৃষিপণ্য ও শস্য প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ শিল্প প্রতিষ্ঠা, প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ, নদ-নদীর নাব্যতা ও খননে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, কৃষি ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চার লেন সড়ক নির্মাণ, রেললাইন স্থাপন এবং পটুয়াখালী ও বরগুনার রাখাইন উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য জাতীয় বাজেটে কার্যকর বরাদ্দ দাবি করছি।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা ছাড়াও অধ্যাপক শাহ সাজেদা ও জ্যোতির্ময় বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক ড. শামীম আহসান ও মহসিন উল ইসলাম, পটুয়াখালীর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ, ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, পুলক চ্যাটার্জী, মনিরুজ্জামান নাসিম আলী, রাহাত খান, সাইদুর রহমান রিংকু, কাজী মিজানুর রহমান, মিন্টু কুমার কর, মেঘনাথ সমদ্দার, লকিতুল্লাহ, আহাম্মেদ আবদুল্লাহ, শাহিনা আজমিন, মো. শওকত হোসেন, নাজমুন নাহার রিনা, মো. জাকির হোসেন, মো. কাওছার, বিষ্ণু রায়, মো. গোলাম মোস্তাফা, মো. নওরোজ কবির, তুহিন খান, মো. আমিনুর রহমান খান, সোহেল হওলাদারসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমওএস/এএএইচ/এএসএম