টানা বড় উত্থানে শেয়ারবাজার
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পদক্ষেপর পর টানা বড় উত্থান প্রবণতা দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। আগের দুই কার্যদিবসের মতো রোববারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের।
এর আগে কয়েকটি ইস্যুতে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দেয়। মাত্র আট কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪৯২ পয়েন্ট পড়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে ৯ মার্চ থেকে সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম চালু করে বিএসইসি। সেই সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সার্কিট ব্রেকারের (সিকিউরিটিজের দাম বাড়া বা কমার সর্বোচ্চ সীমা) নতুন নিয়মের ফলে এখন থেকে একদিনে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা ইউনিটের দাম দুই শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। এই নিয়ম চালুর পরের প্রথম কার্যদিবস বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ১৫৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারির পর একদিনে সূচকের এতো বড় উত্থান আর দেখা যায়নি।
এছাড়া সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম চালুর পাশাপাশি ৯ মার্চ বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। ওই বৈঠকের পর বিএসইসি থেকে জানানো হয়, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো দ্রুত বিনিয়োগ বাড়াবে। বিএসইসি থেকে এমন ঘোষণা আসার পর বৃহস্পতিবারও শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়।
এরপর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেন শুরু হতেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। এতে লেনদেনের ১০ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের শেষদিকে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৭৬৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৬৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৭টির। আর ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১০৭টির দাম বেড়েছে তিন শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে সাতটির শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
সূচকের বড় উত্থানের দিনে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৬১ কোটি ২০ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৬২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৭২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমের ২৯ কোটি ২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৬ কোটি ৬৮ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিডিকম।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ড্রাগন সোয়েটার, ওরিয়ন ফার্মা, অগ্নি সিস্টেম, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, একমি পেস্টিসাইড, ইয়াকিন পলিমার এবং ফরচুন সুজ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৩৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৫টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এমএএস/জেডএইচ/এমএস