বাণিজ্য মেলায় নকল হাজি
নকল হাজিতে ভরে গেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ফলে প্রতিদিনিই এসব হাজিদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। এই হাজি আর কেউ নয় ‘বিরিয়ানি হাউস’।
ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার হাজির বিরিয়ানির নাম শুনলেই অনেকের জিভে জল এসে যায়। কিন্তু তা যদি হয় নকল হাজি তাহলে জল আসার পরিবর্তে শুকিয়ে যায়। ‘হ্যাঁ’ এমনই জল শুকানো কাণ্ড ঘটছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। নকল হাজির বিরিয়ানিতে ছড়াছড়ি মেলাপ্রাঙ্গণ। অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারও বাণিজ্য মেলায় খাবারের স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে হাজির বিরিয়ানি নামে স্টল রয়েছে ৫টি। এসব খাবারের স্টল ও প্যাভিলিয়নের সাইনবোর্ডে কেউ হাজি বিরিয়ানি আবার কেউ কেউ ছোট করে তাদের নিজস্ব নাম রেখে হাজি বিরিয়ানি লিখছে। কিন্তু আসলে এসব হাজির বিরিয়ানি নামের স্টল ও প্যাভিলিয়ন সবগুলোই নকল হাজি। হাজি বিরিয়ানি ব্র্যান্ড্রের নাম দিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তবে এসব হাজি নামধারী বিরিয়ানি হাউজগুলোও নিজেদের আসল হাজি দাবি করছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার হাজি বিরিয়ানি হাউস বাণিজ্য মেলায় অংশ নেয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাণিজ্য মেলায় হাজি বিরিয়ানি রেস্টুরেন্ট, হাজির বিরিয়ানি (উপরে ছোট করে লেখা গ্রিন ও লিভ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কাবাব হাউজ), শাহী হাজি বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব, হাজি বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব হাউজ (পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজির বিরিয়ানি কাবাব রেস্টুরেন্ট) এবং হাজির বিরিয়ানি ও স্টার কাবাব হাউজ নামে প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। এরা সবাই ভুয়া হাজির বিরিয়ানির প্যাভিলিয়ন। তবে এগুলো কোনোটাই পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারের প্রকৃত হাজির বিরিয়ানি নয়।
এবিষয়ে মেলার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাণিজ্য মেলায় অবস্থিত কার্যালয়ের সমন্বয়ক ইফতেখার আলম রিজভী বলেন, এখানে আসলে হাজির বিরিয়ানি নামে যারা প্যাভিলিয়ন দিয়েছেন এর একটাও প্রকৃত হাজির বিরিয়ানি নয়। যেহেতু তারা বরাদ্দ নিয়েছে এবং প্রকৃত হাজি আমাদের নিকট অভিযোগ দেয়নি তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
মেলায় অবস্থিত হাজি বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব হাউজ (পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজির বিরিয়ানি কাবাব রেস্টুরেন্ট) প্যাভিলিয়নে যোগাযোগ করা হলে সেখানে দায়িত্বরত আল আমিন বলেন, আমরা শুরু থেকেই এই নামে মেলায় প্যাভিলিয়ন নিয়েছি। এই হাজির বিরিয়ানি হাউজ নেওয়ার পূর্বে আসল নাজিরা বাজারের হাজির সঙ্গে আলাপ করে তাদের অনুমতি স্বাপেক্ষে নাম দেয়া হয়েছে।
বিরিয়ানি হাউজের প্রকৃত মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আল আমিন বলেন, মালিকের নম্বর দেওয়া নিষেধ রয়েছে। তবে আমাদের এটাই আসল হাজির বিরিয়ানি। বাণিজ্য মেলায় অবস্থিত অন্যান্য সব হাজির বিরিয়ানি নামের স্টল-প্যাভিলিয়নে কথা বললে প্রত্যেকেই ঐতিহ্যবাহী হাজির বিরিয়ানি হিসেবে নিজেদের দাবি করেন।
এদিকে নাজিরা বাজারে অবস্থিত প্রকৃত ঐতিহ্যবাহী হাজির বিরিয়ানি প্রোপাইটার হাজি হাসান জাগো নিউজকে জানান, বাণিজ্য মেলায় যারা হাজির নামে স্টল প্যাভিলিয়ন দিয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই।
যারা হাজির নাম দিয়ে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা হাজি নামের আগে পরে ছোট করে লেখা বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে। আসলে তারা ঐতিহ্যবাহী হাজির বিরিয়ানি নয়। তিনি বলেন, এধরনের কার্যকলাপের কারণে আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
মেলায় হাজির বিরিয়ানি প্যাভিলিয়নে মতিঝিল থেকে আসা শামীম আহমেদ বলেন, হাজি বিরিয়ানি দেখে খেতে এসেছি। কিন্তু যখন শুনলাম তখন খেতে আর রুচি হলো না। বাণিজ্য মেলার মত জায়গায় আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। যা অনৈতিক। এ ব্যাপারে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত যাতে সাধারণ মানুষ প্রতারিত না হন।
এদিকে মেলার আয়োজক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রতিটি খাবার স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোকে যে নির্দেশনা দিয়েছে তাও মানা হচ্ছে না বলে দেখা গেছে। ইপিবি’র নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক স্টল-প্যাভিলিয়নের সামনে এবং টেবিলে খাবারের মেন্যু’র সঙ্গে ইপিবি নির্ধারিত দাম প্রত্যক্ষভাবে রেখে দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাণিজ্য মেলায় অংশ নেয়া বেশির ভাগ খাবার স্টল-প্যাভিলিয়নের সামনে মূল্য সংম্বলিত কোনো মূল্য তালিকা নেই।
উল্লেখ্য, রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বিশ্বের ২২টি দেশের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। শেষ হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশ মূল্য বা টিকিট মূল্য ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ২০ টাকা করে ধরা হয়েছে।
এ বছর বাণিজ্যমেলায় ১৩ ক্যাটাগরিতে মোট ৫৫৩টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ৬০টি, জেনারেল প্যাভিলিয়ন ১০টি, রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন ৩টি ও ফরেন প্যাভিলিয়ন ৩৮টি। এ ছাড়া থাকছে প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ৩৬টি, জেনারেল মিনি প্যাভিলিয়ন ১৩টি, রিজার্ভ মিনি প্যাভিলিয়ন ৬টি, ফুডস্টল ২৫টি ও রেস্টুরেন্ট ৫টি।
এসআই/একে/বিএ