‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে’
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। সেই আর্থিক ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় লোকসানে বিপর্যস্ত হয়ে অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন মালিকরা।
শনিবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ৩৪তম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সারাদেশের রেস্তোরাঁ মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, করোনার কারণে আমাদের যে লোকসান হয়েছে, সেটা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি আমাদের থামকে দিয়েছে। বরং এখন পণ্যের দামের কারণে খাবার বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমরা আর টিকতে পারছি না।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির পরও কোনো হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বাড়ানো হয়নি। যদিও মজুরি ও খরচ অনেকগুণ বেড়েছে। কম টাকায় মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাস-পানির দামও বাড়ানো হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। এ পরিস্থিতিতে সর্বস্বান্ত হওয়া ছাড়া গতি নেই। লোকসানে অনেকেই রেস্তেরাঁ বন্ধ করে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এ খড়্গ থেকে আমাদের পরিত্রাণের জন্য টিসিবির মাধ্যমে পণ্য দেওয়া দাবি জানাই সরকারের কাছে। তাহলে অনেকে টিকে থাকতে পারবেন। ন্যায্যমূল্যে পণ্য পেলে তাদের খরচ কিছুটা পোষাবে।
ইমরান হাসান বলেন, এর মধ্যে গত বছর আমাদের যে ভ্যাট কমানো হয়েছিল, সে সুবিধায় শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। আমরা ভ্যাটের রেয়াত নিতে পারছি না। এ সমস্যার সমাধান হয়নি। আবার সারাদেশে ভ্যাট চালু হয়নি। কেউ দিচ্ছেন, কেউ দিচ্ছেন না। ফলে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ যেসব হোটেলে খায়, সেখানে ভ্যাট ৩ শতাংশ করার দাবি রয়েছে আমাদের। আগামী বাজেটে এটা রাখতে এনবিআরে এ প্রস্তাব করেছি। পাশাপাশি ট্যাক্স শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করারও দাবি জানিয়েছি। তাহলে সবাই সেটা দিতে পারবে।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, এ পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের ওপর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। আপনারা (সরকার) জানেন আমরা পুরোপুরি অদক্ষ মানুষ নিয়ে কাজ করি। আপনারা আগে রেস্তোরাঁ কর্মীদের ট্রেনিং দেন। আমাদের শেখান, কীভাবে শতভাগ নিরাপদ খাদ্য পরিবেশন করা যায়। তারপর সেটা না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালত করুন। তার আগে হাতে হাতকড়া দেবেন না।
অনুষ্ঠানে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী আমরা। তারপরও কোথাও খাবারের দাম বাড়ানো হয়নি। খাবারের কোনো সংকট হয়নি। কিন্তু সেটা কেউ দেখে না। এতো কিছু করার পরও আমরা অবহেলিত, নির্যাতনের শিকার।
সংগঠনটির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন বলেন, রেস্তোরাঁ মালিকরা যে ভ্যাট দিচ্ছেন সেটা দেশের সামগ্রিক ভ্যাটের তুলনায় খুবই নগণ্য, ১ শতাংশও নয়। কিন্তু যে ঘুস দিতে হচ্ছে সেটা বহু খাতের থেকে বেশি। ভ্যাটের জন্য নয়, ঘুসের জন্য আরও বেশি জুলুম হচ্ছে আমাদের ওপর। ঘুস না, সঠিকভাবে ভ্যাট দেবো আমরা। সেই ব্যবস্থা করুন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ওসমান গনি, সহ-সভাপতি শাহ সুলতান খোকন, সহ-সভাপতি এম রেজাউল করিম সরকার রবিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিব, কোষাধ্যক্ষ তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
এনএইচ/কেএসআর/এমএস