১০ বছরের মধ্যে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ে তোলা সম্ভব

ইসমাইল হোসাইন রাসেল
ইসমাইল হোসাইন রাসেল ইসমাইল হোসাইন রাসেল
প্রকাশিত: ০৩:১৬ পিএম, ১২ মার্চ ২০২২

## ‘নগদ’র বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি
## দিনে লেনদেনের পরিমাণ ৭০০-৭৫০ কোটি টাকা
## ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়তে বড় ভূমিকা রাখার আশাবাদ নগদের

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্লাটফর্ম ‘নগদ’ যাত্রা শুরু করে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ। আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর ডিজিটাল কেওয়াইসির (গ্রাহকসম্পর্কিত তথ্য) মাধ্যমে হিসাব খোলা, নগদের গ্রাহক না হয়েও যে কোনো মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠানোসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী সেবা চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ‘নগদ’র গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ছয় কোটি এবং প্রতিদিন লেনদেনের পরিমাণ ৭০০ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা।

এই অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ে তুলতে ‘নগদ’ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। ‘নগদ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদ মিশুক প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক ইসমাইল হোসাইন রাসেল

জাগো নিউজ: ডিজিটাল ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় আন্তঃসংযোগের বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে?

তানভীর আহমেদ মিশুক: এটা শুধু আলোচনার পর্যায়ে আছে। এটাকে যদি রিয়েল (বাস্তবিক) করতে হয় তাহলে আমরা যারা ইন্ডাস্ট্রিতে আছি তাদের সদিচ্ছা দরকার। আমরা যদি মুখে বলি কানেকটিভিটি (সংযোগ স্থাপন) করবো, কিন্তু কানেকটিভিটির আগ্রহ না থাকলে জীবনেও হবে না। এটা নিয়ে আসলে অপারেটরগুলোর দ্রুত বসা উচিত। বসে একসঙ্গে কাজ করে কানেকটিভিটির বিষয়টি ঠিক করা উচিত। নইলে ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আমি যদি এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে টাকা পাঠাতে না পারতাম তাহলে কিন্তু প্রোপার ট্রানজেকশনটা (সঠিক লেনদেন) হতো না। এখন যেটা হচ্ছে এমএফএস খাতে কেউ কাউকে টাকা পাঠাতে পারে না। এটা পারলে কালই চালু করা উচিত। যেই গতিতে আগাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে না ২০২২ সালের মধ্যে এটি করা সম্ভব।

জাগো নিউজ: মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে মনে করেন?

তানভীর আহমেদ মিশুক: সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এমএফএসটা হাত-পা কাটা একটি ব্যাংকিং সিস্টেম। কারণ এর হাত-পা কেটে দেওয়া হয়েছে। যেমন এমএফএস গ্রাহকের কাছ থেকে ডিপোজিট (ডিপোজিট পেনশন স্কিম-ডিপিএস) নিতে পারে না। গ্রামে একজন মানুষ তার তিন হাজার টাকা আয়ের মধ্যে পাঁচশ’ টাকা সেইভ (জমা) করতে চাইলেও ব্যাংক তার কাছে যাবে না। এদিকে আবার এমএফএসকেও এমন ডিপোজিট কালেক্ট (সংগ্রহ) করতে দেওয়া হয় না। তাহলে এই মানুষটা ডিপোজিট কীভাবে করবে? এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। গ্রামের মানুষ ৫০ বা ১০০ টাকার হলে অবশ্যই ডিপোজিট করতে চায়। কারণ নারী আগে যেমন চালের কৌটায় টাকা রাখতো, এখন তা নয়, এখন তারা চায় যে টাকাটা গচ্ছিত থাকুক। আমরা বাস্তবে দেখেছি যে চালের কৌটায় টাকাটা রাখছে নারী, কিন্তু তার স্বামী জোর করে টাকাটা নিয়ে নেয় বা নিতে পারে। কিন্তু যখন সে মোবাইলে টাকাটা রাখছে, তখন তার কাছ থেকে টাকাটা নিতে পারে না। কারণ তার কাছে অ্যাকাউন্টের পিন আছে আলাদা। তারাও সন্তানের জন্য একটা সেভিংস করতে চায়। এগুলো নিতে গ্রাহকের কাছে ব্যাংক যাবে না, কারণ ব্যাংক সেই অল্প টাকার জন্য ভিজিবল না। তবে এমএফএস এই জায়গাটায় যেতে পারে। কিন্তু তাদের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এমএফএস লোন দিতে পারে না। সুতরাং এই ছোট লোনগুলো কে দেবে, ব্যাংক তো এক হাজার বা ৫০০ টাকা লোন দিতে পারে না, কারণ সেটা ব্যাংকের জন্য ভিজিবল না।

এমএফএস সার্ভিসে অনেক পরিবর্তনের ব্যাপার আছে। কারণ ২০১০ সালে এটা শুরু হয়েছিল, সেই সময়ের একটি গাইডলাইন ছিল, কিন্তু এখন ২০২২ সাল। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে দেশ যেভাবে এগিয়ে গেছে, সেটার সঙ্গে কিন্তু গাইডলাইনটাও পরিবর্তন করতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি এগুলো পরিবর্তনের জন্য। আশা করি এটা পরিবর্তন হলে আরও ভালো সার্ভিস দিতে পারবো।

জাগো নিউজ: দেশের মানুষকে সহজে আর্থিক সুবিধা দিতে ডিজিটাল (গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি) কেওয়াইসি নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রথম চালু করেছে নগদ। সামনে এ ধরনের আরও নতুন কোনো আইডিয়া আছে কি না?

তানভীর আহমেদ মিশুক: নগদের সব কাজই ইনোভেটিভ (উদ্ভাবনী) এবং সেটাকেই তিন-চার মাস পর সবাই কপি করছে। যেমন নগদের ই-কেওয়াইসি, সেন্ড মানি টু এনি অ্যাকাউন্ট নাম্বার। আমরা এখন ইসলামিক অ্যাকাউন্ট চালু করেছি। আমরা নিশ্চিত যে আরও দু-এক মাসের মধ্যে অন্য যারা এমএফএস সার্ভিসে রয়েছে, তারাও ইসলামিক অ্যাকাউন্ট চালু করবে। নগদকে আসলে সবাই ফলো করছে। ইন্ডাস্ট্রিতে ১০ বছরের মধ্যে যারা এসেছে তারা সবাই ফলো করছে। আমাদের পাইপলাইনে আরও অনেক ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট (উদ্ভাবনী সেবা) আছে। আমরা স্বাগত জানাই যে কেউ আমাদের ফলো করবে এবং দিনশেষে যেন মানুষের উপকার হয়। কারণ আমি যখন একটা সার্ভিস অফার করছি সেইম সার্ভিসটা যখন আরেকজন অফার করছে, তখন কিন্তু মানুষের হাতে অপশনও বাড়ছে।

জাগো নিউজ: সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে নগদ। সেই তুলনায় এটি কতটা গ্রাহকপ্রিয়তা পেয়েছে?

তানভীর আহমেদ মিশুক: এমএফএসের ১০ বছর আগের অপারেটরের যে গ্রাহক, নগদের গ্রাহক কিন্তু তাদের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। লেনদেনও প্রায় কাছাকাছি এসেছে। এখন মার্কেটটা বড় করতে হবে। নগদের যেসব চ্যালেঞ্জ আছে যেমন ন্যানো লোন (ক্ষুদ্র ঋণ), ডিপোজিট কালেকশন- এগুলো যুক্ত হলে মার্কেটটা আসলেই বড় হবে। যার আসলে টাকা পাঠানোর ডিমান্ড নেই সে হয়তো এমএফএস ব্যবহার করছে না। ডিপোজিটের ডিমান্ড থাকলেও সেটি করতে পারছে না। মার্কেটটাকে বড় করতে এমন উদ্যোগ নিতে হবে।

জাগো নিউজ: দেশের মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের সমৃদ্ধিতে সরকারের বর্তমান সহায়তা যথেষ্ট কি না? আর কী ধরনের উদ্যোগ নিলে এই সেক্টর এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন?

তানভীর আহমেদ মিশুক: এমএফএস গাইডলাইনে পরিবর্তন আনার সময় এসে গেছে। কারণ এমএফএস ১০ বছর আগে শুরু হলেও এখন ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সম্প্রতি গাইডলাইনে কিছু পরিবর্তন এসেছেও। আগে শুধু ব্যাংক ৫১ শতাংশ মালিক হতে পারতো, এখন ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও (এনবিএফআই) হতে পারবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানও হতে পারবে। সুতরাং পরিবর্তন শুরু হয়েছে। আশা করছি এক-দুই বছরের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখতে পারবো।

Inner-2.jpg

জাগো নিউজ: নগদ কি লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রামীণ পর্যায়ে বেশি ফোকাস করছে?

তানভীর আহমেদ মিশুক: নগদ শুধু আরবান (শহরে) নয়, রুর‌্যালে (গ্রামীণ জনপদে) অনেক বেশি ফোকাস করছে। আমাদের অ্যাকটিভ এক লাখ ৯০ হাজার উদ্যোক্তা সারাদেশে একসঙ্গে সাপোর্ট দিচ্ছেন। আমরা তো সোশ্যাল সেফটি নেটের (সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী) ভাতাটা উপকারভোগীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। এখানে যারা উপকারভোগী তারা বেশিরভাগই রুর‌্যালের, যাদের হয়তো একটা স্মার্টফোনও নেই, একটা বাটন ফোন দিয়ে ট্রানজেকশন করছে। এমন মানুষ দেখা গেছে তার হ্যান্ডসেট নেই। পুরো পরিবার একটি হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে, সেই ধরনের মানুষদেরও আমরা সার্ভিস দিচ্ছি। তাদের কাছে যখন টাকাটা আসে তারা জানেই না টাকাটা তুলবে কীভাবে। সেজন্য আমরা ১২০টি ছোট ছোট কাস্টমার পয়েন্ট করেছি, যেখান থেকে সার্ভিসগুলো নিয়ে থাকে। যেটা দেশে আর কারও নেই। উদ্যোক্তা পয়েন্টগুলোকে আমরা কাস্টমার সার্ভিস করে দিয়েছি। আমরা আসলে সারাদেশকেই কাভার করছি।

জাগো নিউজ: নগদের গ্রাহক সংখ্যা ও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কত?

তানভীর আহমেদ মিশুক: আমাদের কাস্টমার এখন প্রায় ছয় কোটি। লেনদেন প্রতিদিন সাতশ’ থেকে সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকা। শুরুতে গ্রামীণফোন বা অন্য অপারেটর যখন ছিল, তখন লেনদেনে তাদের সাত টাকা আউটগোয়িং ও তিন টাকা ইনকামিং চার্জ দিয়েছি। তখনো প্রতিষ্ঠানগুলো প্রফিট করতো, এখন ৫০ পয়সা আউটগোয়িং এবং শূন্য পয়সা ইনকামিং চার্জ, তবু কোম্পানিগুলো প্রফিট করছে। সুতরাং বিজনেস মডেল কীভাবে সাজিয়ে রেখেছি সেটার ওপর ডিপেন্ড করছে, কে কীভাবে এটাকে প্রেজেন্ট করছে। আমরা যে রেটে ক্যাশআউট সুবিধা দিচ্ছি, এটি দিয়ে ভালো প্রফিট করে ব্যবসা করা সম্ভব।

জাগো নিউজ: মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অন্যান্য সার্ভিসগুলোকে ছাড়িয়ে প্রধান বাজার ধরতে কীভাবে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে নগদ?

তানভীর আহমেদ মিশুক: এই ইন্ডাস্ট্রি ১০ বছর আগে যা ছিল, সেখান থেকে পরিবর্তন কিন্তু শেষ দুই বছরে হয়েছে। ১০ বছরে কিন্তু ছিল ঢাকা থেকে টাকা ঢুকবে, কুড়িগ্রাম থেকে টাকা বেরিয়ে যাবে। লোকাল রেমিট্যান্স যেটাকে বলে। এই মার্কেটটাকে আমরা সোজা ভাষায় বলি লোকাল হুন্ডি। কিন্তু সেখান থেকে পরিবর্তিত হয়ে এখন মানুষ যা করছে সেটা কিন্তু নগদের জন্য করছে। আগে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে দুই পাতার ফরম পূরণ করতে হতো। যা আমার আপনার পক্ষেও কঠিন ছিল। তাহলে মুদি দোকানী কীভাবে করতো এটা? সে তাই বলতো, আমার টাকাটা পাঠিয়ে দেন। এর মানে আমার টাকা আপনি পাঠাচ্ছেন, কিন্তু কোথায় যাচ্ছে সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। নগদ সেটাকে পরিবর্তন করে শুধু এনআইডির ছবি তুলে সেলফি তুললেই অ্যাকাউন্ট ওপেন হয়ে যাচ্ছে।

Inner-2.jpg

তারপর যখন দেখলাম স্মার্টফোন নেই অনেকের, যেজন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যবহারকারী কাভার করতে পারছি। যেমন দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। বাকি ৭০ শতাংশ বাটন ফোন ব্যবহারকারী। তখন আমরা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি করলাম। তাদের কাছে যেহেতু বায়োমেট্রিক কেওআইসি আছে, তাই ইন্টারনাল কানেকটিভিটি করলাম। এতে ফল হলো যে—যার বাটন ফোন আছে সে *১৬৭# ডায়াল করলে তার ডাটা অটো ফিলাপ হয়ে ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে যাচ্ছে। তখনই আসলে মূল পরিবর্তনটা এলো। যে মানুষগুলো না জেনে না বুঝে টাকা পাঠাতে বলতো, তার মানে হুন্ডিকে উৎসাহ দিতো। তারাও কিন্তু সহজে *১৬৭#-এ ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খুলতে শুরু করলো। তখন নিজের ট্রানজেকশন নিজে শুরু করে। ফলে বড় পরিবর্তনটা হয়েছে। আমাদের সবকিছুতেই ইনোভেশন আছে। আমরা যে শুধু ডিসকাউন্ট দিচ্ছি বা রেট কম তাই নয়, আমাদের সেক্টরটা এভাবেই পরিকল্পনা করা, মানুষের যেটা প্রয়োজন আছে, তাদের বাস্তবিক প্রয়োজন, সেখানেই ফোকাস করবো।

জাগো নিউজ: মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আগামী ১০ বছরে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ে তোলা কতটা সম্ভব বলে মনে করেন?

তানভীর আহমেদ মিশুক: মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসটা যে খুব দূরে যাবে তা নয়। কারণ হাত-পা কাটা আছে। এটার আসলে গাইডলাইন ঠিক করতে হবে। এটাকে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে ১০ বছরে যেটা প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বলছেন, বাংলাদেশকে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ হিসাবে গড়ে তোলার কথা, সেটা তখন সম্ভব হবে, যখন এই এমএফএস থেকে বের হয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে যাবে। যেখানে মানুষের সব ধরনের ফাইন্যান্সিয়াল চাহিদা পূরণ করতে পারবে একটা অ্যাপ। এই অ্যাপটা সুপার অ্যাপ হবে। আমি আশা করি ১০ বছরের মধ্যেই এটা হয়ে যাবে, ১০ বছরের অনেক আগেই হবে। ১০ বছরের মধ্যে হয়তো দেশের বেশিরভাগ মানুষ ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারবে। এক্ষেত্রে নগদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি থাকবে। কারণ এই পর্যন্ত যত পরিবর্তন নগদ-ই করেছে।

সারাদিন টাকা ছাড়াই শুধু নগদ দিয়ে প্রতিটা কাজ করা সম্ভব। এটার পাইলটিং (পরীক্ষামূলক কার্যক্রম) করেছিলাম নিজেদের কর্মীদের মাধ্যমে। যেখানে যাচ্ছে খাচ্ছে তা নগদ দিয়ে বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে কি না। আমরা দেখেছি সে কোথায় চ্যালেঞ্জ ফেইস করেছে। আমরা দেখলাম হয়তো বাসে উঠলে পেমেন্ট সিস্টেমটা নেই, অথবা একটা দোকানে গিয়ে দেখা গেছে সেখানেও সার্ভিসটা নেই। আমাদের টিম দিয়েই এটি শুরু করি, এখন দেখা যাচ্ছে শতভাগ ক্যাশলেস চলছে অনেকে। তাদের রেগুলার লাইফস্টাইলে কোনো ক্যাশের প্রয়োজন হচ্ছে না। এটা আমরা শুরু করি ২০১৯ সালে। আমাদের স্টাফদের বলেছি যেখানে আটকাবে সেখানে নগদ মার্চেন্ট করে পেমেন্টের ব্যবস্থা করার জন্য। আমরা সারাদিন ক্যাশলেস চলতে পারলে ইনসেনটিভও (প্রণোদনা) ঘোষণা করেছিলাম। আমরা তখন শুরু করলেও এখন অনেকেই সেই সেবাটি পাচ্ছে। একসময় গ্রাহক ১০০ টাকা নগদে রাখলে সঙ্গে যে ইন্টারেস্ট পাওয়া দরকার সেটাসহ ব্যবহার করতে পারবে বলে মনে করছি। সারাবিশ্বে এটিই চলছে।

জাগো নিউজ: কত শতাংশ মানুষ ক্যাশ ছাড়াই নগদের মাধ্যমে পেমেন্ট করছে?

তানভীর আহমেদ মিশুক: শতভাগ ক্যাশলেস করতে হলে আমাদের শহর থেকে বের হয়ে আরও ডিপে (গভীরে) ঢুকতে হবে। যেমন রিকশা তো নিয়মিত লাগে, যে দোকানে মুদিপণ্য কিনছেন সেখানে হয়তো সুবিধাটা নেই। তাই অপারেটরের সংখ্যা অনেক বেশি লাগবে। ভারতে যদি দেখেন কয়েকটি এমএফএস সার্ভিস এসেছে। একেকজন এসে একেকটি সেক্টরকে ডেভেলপ করে দিয়েছে। এখন ভারতেরটা সারাবিশ্বে তুলনা করা হয়। আমাদের এখানে একটা অপারেটর ছিল, আমরা এলাম। আরও চার-পাঁচটা অপারেটর এসে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করলে ইন্ডাস্ট্রির ডেভেলপ হবে। বাস্তবিক অর্থে ক্যাশলেস সোসাইটি হবে। আমি মনে করি বাজারে অপারেটর আছে একজন এবং আমরা। বাকি যেগুলো আছে তারা শুধু প্রোডাক্ট শো করার জন্য আছে, প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য নয়। এদের দিয়ে হবে না। এদের যে মাইন্ডসেট তা দিয়ে ব্যবসা হবে না।

আইএইচআর/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।