১৯ বছর পর অব্যয়িত সোয়া ১১ কোটি টাকা আদায়ে পদক্ষেপ বিপিসির

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ১১ মার্চ ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

এলপিজি সিলিন্ডার পরিবহনের জন্য ফ্রেইটপুল চার্জ (একটি এলপিজি সিলিন্ডার পরিবহনের জন্য সমান পরিবহন ব্যয়) নির্ধারণ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। পরিবহন করে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল)। গত ১৯ বছরে বিপিসির কাছ থেকে ফ্রেইটপুল চার্জ বাবদ ১৬ কোটি ২৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৯ টাকা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে কিছু সিলিন্ডার পরিবহন করতে না পরায় এখনো ১১ কোটি ১৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০৪ টাকা অব্যয়িত রয়েছে বলে দাবি এসএওসিলের। প্রায় ১৯ বছর পর বর্তমানে বকেয়া সেই টাকা আদায়ের পদক্ষেপ নিয়েছে বিপিসি।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে ১২ কেজির একটি এলপিজি সিলিন্ডার পরিবহনের জন্য ৫২ টাকা ১০ পয়সা সমান পরিবহন ব্যয় (ফ্রেইটপুল চার্জ) নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ওই অর্থবছর ২ লাখ ৯ হাজার ৯১৪টি সিলিন্ডার বহন করে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসএওসিএল।

এজন্য ওই বছর ১ কোটি ৯ লাখ ৭২ হাজার ২০৭ টাকা ফ্রেইটপুল চার্জ নেয় এসএওসিএল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে ওই অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। এভাবে ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত এসএওসিএল ১৬ কোটি ২৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৯ টাকা বকেয়া হিসাব দেখালেও এখনো ১১ কোটি ১৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০৪ টাকা ফ্রেইটপুল চার্জ অব্যয়িত রয়েছে বলে দাবি করে এসএওসিএল।

বিপিসির তথ্যানুযায়ী, ২০০১-০২ অর্থবছরে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৪ টাকা ৫০ পয়সা, ২০০২-০৩ অর্থবছরে একই হারে ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬ টাকা ৫০ পয়সা, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ১৮ টাকা ৬০ পয়সা হিসাবে ৫১ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৯ টাকা, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ২৮ টাকা হিসাবে ৬৪ লাখ ৯২ হাজার ১৩৬ টাকা, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৩০ টাকা হিসাবে ৮৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩২০ টাকা, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে একই হারে ৬৪ লাখ ২ হাজার ১৫০ টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৬১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬০ টাকা, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩২ টাকা হিসাবে ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৩৩৬ টাকা, একই হিসাবে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে এক কোটি ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮০ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে এক কোটি ১৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৪ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ৬৪ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ২০০ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক কোটি ১০ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৪ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯০ লাখ ৮৬ হাজার ৪৮ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯৯ লাখ ৯ হাজার ১২০ টাকা করে নেয় এসএওসিএল।

এরপর দুই অর্থবছরে ৪৫ টাকা করে ফ্রেইটপুল চার্জ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ৪৫ টাকা হিসাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক কোটি ৪২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭০ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক কোটি ৫৮ লাখ ৫৮ হাজার ২৭০ টাকা নেয়। সর্বশেষ হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫২ টাকা ১০ পয়সা করে এক কোটি ৯ লাখ ৭২ হাজার ২০৭ টাকা ৯০ পয়সা ফ্রেইটপুল চার্জ আদায় করে এসএওসিএল।

সমান পরিবহন ভাড়া হিসেবে আদায় করা অর্থ বিপিসির মুনাফা বলে গণ্য হয়। বিপণন কোম্পানিগুলো প্রতিবছর ফ্রেইটপুল খাতে চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনার বিক্রিত পণ্য থেকে আদায় করা অর্থ ব্যয় করার পর অবশিষ্ট অংশ বিপিসিকে পরিশোধ কিংবা সমন্বয় করে। কিন্তু এসওসিএলে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল খাতে ফ্রেইটপুল চার্জ সমন্বয় করলে ২০০১ সাল থেকে এলপিজি খাতে ফ্রেইটপুল চার্জ পরিশোধ কিংবা সমন্বয় করেনি।

২০২১ সালের ৩ মার্চ বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ, পরিচালক (বিপণন) সৈয়দ মেহদী হাসান স্বাক্ষরিত দাপ্তরিক এক নোটে দেখা যায়, এসএওসিএলের দেশব্যাপী কোনো ডিপো ও ডিলার নেই। এলপি গ্যাস লিমিটেড থেকে সংগৃহীত এলপিজি সিলিন্ডার প্রধান স্থাপনার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিলারদের অনুকূলে সরবরাহ করে এসএওসিএল। অন্যদিকে, এলপি গ্যাস সিলেটের কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড থেকেও ওই অঞ্চলের ডিলাদের সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে ফ্রেইটপুল চার্জ হিসেবে এসএওসিএলের আদায় করা অর্থ পরিবহন কাজে ব্যবহৃত হয়নি বলে ওই নোটে উল্লেখ করা হয়।

এরপর গত বছরের ১ এপ্রিল এসএওসিএল থেকে ফ্রেইটপুল চার্জের বকেয়া হিসেবে ১৬ কোটি ২৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৯ টাকা ৯০ পয়সা আদায়ে বিপিসির হিসাব বিভাগকে চিঠি দেয় বিপণন বিভাগ। এরপর হিসাব বিভাগের আরেক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১২ এপ্রিল এসএওসিএলকে চিঠি দেয় বিপিসির বিপণন বিভাগ।

এর প্রায় দুই মাস পর ৩ জুন এসএওসিএল বিপিসির সেই চিঠির জবাবে জানায়, ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত এসএওসিএল ফ্রেইটপুল চার্জ হিসেবে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৫ হাজার ৩৩৪ টাকা আদায় করেছে এবং ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৯ টাকা। অবশিষ্ট ১১ কোটি ১৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০৪ টাকা অব্যয়িত রয়েছে। পরে অব্যয়িত সোয়া ১১ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য এসএওসিএলকে চিঠি দেয় বিপিসি।

বিপিসি বলছে, এলপিজি উৎপাদন করে বিপিসি। এসব এলপিজি বিপণন করার জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে পরিবহন বিল হিসেবে ফ্রেইটপুল চার্জের একটি অর্থ দেওয়া হয়। আবার প্রত্যেক সিলিন্ডারে দেওয়া হয় আলাদা মুনাফা। ২০২০ সালের ৫ নভেম্বরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেকটি এলপিজি সিলিন্ডার বিপণনে কোম্পানিগুলোকে ২৩ টাকা হারে মুনাফা (মার্জিন) দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ফ্রেইটপুল চার্জ খরচ না হলেও প্রায় ১৮ বছর ধরে বিপিসির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলায় এসএওসিএলের বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল না বিপিসির।

এ বিষয়ে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) এ টি এম সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসএওসিএলের ফ্রেইটপুল চার্জ বকেয়ার একটি হিসাব বিতরণ বিভাগ থেকে পাওয়া গেছে। মূলত ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের ফ্রেইটপুল চার্জ এরই মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে। কিন্তু এলপিজি সিলিন্ডারের ফ্রেইটপুল চার্জ কী করা হবে, বিপণন অনুমতিপত্রে সেই বিষয়টি সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া ছিল না। যে কারণে এলপিজি সিলিন্ডারের ফ্রেইটপুল চার্জ সমন্বয় করা হয়নি। এখন প্রায় সোয়া ১১ কোটি টাকার বকেয়া পরিশোধের জন্য আমরা এসএওসিএলকে চিঠি দিয়েছি।

ইকবাল হোসেন/এমএএইচ/এএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।