তিন দিনে ইউনিলিভারের দাম কমলো ৩০৯ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ০৫ মার্চ ২০২২

২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেডের ঘোষিত লভ্যাংশ হতাশ করেছে বিনিয়োগকারীদের। যার বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার দামে। ফলে তিনদিনেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে ৩০৯ কোটি টাকা কমে গেছে।

বহুজাতিক এই কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১ মার্চ লেনদেন শুরুর আগেই বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানায় ডিএসই।

‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ থেকে নাম বদল হয়ে ‘ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার’ নাম ধারণের পর এটি কোম্পানিটির দ্বিতীয় লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। এর আগে ২০২০ সালেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

ইউনিলিভারের কাছে শেয়ার বিক্রির আগে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ৫৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগে ২০১৮ সালে ৫৩০ এবং ২০১৭ সালে ৫৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। অর্থাৎ নাম বদলের পর কোম্পানিটির লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ১০০ শতাংশ কমে গেছে।

লভ্যাংশ কমার কারণে ১ মার্চ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই ইউনিলিভার কনজ্যুমারের শেয়ার দাম এক'শ টাকার ওপরে কমে যায়। শেয়ারের দাম কমার ধরা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। এমনকি পরের দুই কার্যদিবসেও কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমে।

এতে তিন দিনে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ২৫৭ টাকা। ফলে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৩০৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ওপরে। অথচ কিছুদিন আগেও মোটা লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩৮৫ টাকা বেড়ে যায়।

এর আগে ২০২০ সালের লভ্যাংশ কেন্দ্র করেও কোম্পানিটির শেয়ার দামে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন হয়। গত বছর লভ্যাংশ ঘোষণার পরের কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে ২৪৩ টাকা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমে ২৯৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। তার আগে লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ২ হাজার ৪৬ টাকা থেকে কয়েক দফা দাম বেড়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ হাজার ৮৫৯ টাকা পর্যন্ত উঠে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ১ হাজার ৮১৩ টাকা।

ইউনিলিভার কনজ্যুমারের লভ্যাংশের বিষয়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ইউনিলিভারের পরিশোধিত মূলধন অনেক কম। তাই বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি এবার নগদ ও বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেবে। এতে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। যার ফলে দামও বাড়ে। কিন্তু কোনো বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ আসেনি। আবার নগদ লভ্যাংশের পরিমাণও বাড়েনি। ফলে হতাশ হয়ে অনেকে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। তার ফলে শেয়ারের দাম কমে গেছে।

হরলিকস, মালটোভা, গ্ল্যাক্সোজ-ডি, সেনসোডাইন’র মতো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করলেও লোকসান দেখিয়ে ২০১৮ সালে ওষুধ উৎপাদন কারখানা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল বিজনেস ইউনিটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বহুজাতিক কোম্পানিটি।

এরপর সমঝোতার মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৮ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে জিএসকের শেয়ার কিনে নেয় ইউনিলিভার। ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ারের প্রতিটি কেনা হয় ২ হাজার ৪৬ টাকা ৩০ পয়সা করে। শেয়ার কিনে নেওয়ায় দুদিনের মধ্যে নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সেই সঙ্গে ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেওয়া হয় ‘ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার’।

নাম বদল হলেও গত বছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আগের নামেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছিল। তবে ২৬ নভেম্বর থেকে নতুন নামে লেনদেন শুরু হওয়ার পাশাপাশি ক্যাটাগরিও বদলে যায় কোম্পানিটির। ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে কোম্পানিটি খাদ্য খাতের আওতাভুক্ত হয়।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪৯টি। এর মধ্যে ৮৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪ দশমিক ১১ শতংশ সধারণ বিনিয়োগকারী এবং ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে। আর বিদেশিদের কাছে আছে দশমিক ৩০ শতাংশ।

এমএএস/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।