সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৩০ শতাংশ
#সবচেয়ে কম পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ২ শতাংশ
#সবচেয়ে বেশি শিল্প মন্ত্রণালয় ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ
#বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ
#স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ
চলতি অর্থবছরের সাত মাস শেষ হলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দের মাত্র ৩০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকারের উন্নয়ন কাজের বাস্তবায়নের এ চিত্র করোনার আগের গত কয়েক অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
সাত মাসে সবচেয়ে কম পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ২ শতাংশ। এছাড়া সুরক্ষা বিভাগের অগ্রগতি ৮ দশমিক ২৩, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ৯, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৯ দশমিক ৮৫, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৮ দশমিক ৩৪, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম-কমিশন ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
করোনার মধ্যে গত বছরই শুধু ২৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। আগের বছরগুলোতে ৩২ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। অর্থনীতিবিদরা অর্থবছরের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এডিপি বাস্তবায়নের হার অনেক কম হওয়ার বিষয়ে সেই পুরোনো কথাই বলছেন। বলছেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পরও বছরের শুরুর দিকে কাজের গতি থাকছে না। বরাবরের মতো এবারও তাই হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদিত মোট বরাদ্দের মাত্র ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ বা ৭১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬১ হাজার ৪৮ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সরকার দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা ও সংস্থার নিজস্ব ১২ হাজার ৯০১ কোটি টাকাসহ মোট দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এডিপির প্রথম দিকের বাস্তবায়ন চিত্র প্রতি বছরই একই ধরনের হচ্ছে। এটা পুরোনো গল্প। মূলত মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত কর্মকর্তাদের দক্ষতা না বাড়ানোর কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মানসম্পন্ন উন্নয়ন কাজ নিশ্চিত করতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতির গতি সঞ্চার করার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
এদিকে আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থবছরের ছয় মাস চলে গেলেও এডিপি বাস্তবায়নে জড়িত ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ছয়টি জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের বরাদ্দের ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সেগুলো হচ্ছে- পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ দুই দশমিক নয় শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ আট দশমিক ২৩ শতাংশ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছয় দশমিক নয় শতাংশ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বিভাগ আট দশমিক ১৯ শতাংশ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আট দশমিক ৩৪ শতাংশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নয় দশমিক ৮৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। আর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এদিকে এডিপি বরাদ্দের দিক দিয়ে বড় ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৩৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৩৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রায় ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় ৩০ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করতে পেরেছে।
এদিকে এডিপিতে ১০টি বৃহৎ প্রকল্পে মোট ৫৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা পেয়েছে। এরপর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছয় হাজার ১৬২ কোটি টাকা, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি–৪) পাঁচ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে মেট্রোরেল চার হাজার ৮০০ কোটি, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ তিন হাজার ৮২৩ কোটি ও পদ্মাসেতু তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা পেয়েছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতের বহুল আলোচিত দুটি প্রকল্পে দুই হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টিকাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাকাটায় এ টাকা খরচ হচ্ছে।
এমওএস/একেআর/এমআরএম/জেআইএম