একটি ডিমের দাম সাড়ে ১৭ টাকা!

নাজমুল হুসাইন
নাজমুল হুসাইন নাজমুল হুসাইন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩৪ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
হাঁসের ডিমের আঁচ এসে পড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমেও

আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার অন্যতম অনুষঙ্গ ডিম। এর মাঝে অনেকের আবার পছন্দ হাঁসের ডিম। অনেকে শখ করে বা পথ্য হিসেবেও এই ডিম খান। তবে যারা মাসখানেক পর এ সপ্তাহে হাঁসের ডিম কিনতে গেছেন, তাদের চক্ষু চড়কগাছ হয়েছে। বাজারে হাঁসের একেকটি ডিম বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৭ টাকায়! প্রতি হালি ৭০ টাকা আর ডজন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।

এর আঁচ এসে পড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমেও। দুর্মূল্যের বাজারে পরিবারের খাবার খরচ কমাতে যারা ডিম খাচ্ছিলেন, তাদের ঘাড়ের বোঝাটাও আরেকটু ভারী হয়েছে। দুই-তিন দিনের ব্যবধানে মুরগির প্রতি ডজন ডিমের দাম খুচরায় ১০ টাকা বেড়ে ১১৫ টাকা হয়েছে। পাইকারি বাজারেও দাম উঠেছে ১১০ টাকায়। আর একপিস কিনতে লাগছে ১০ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, মাসখানেক আগেও প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৫০ টাকার মধ্যে। এর আগে কখনো কোনো ডিমের দাম এত বেশি হয়নি।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে ডিম কিনতে আসা গৃহিণী জেসমিন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে এক হালি ডিমের দাম ২০ টাকা বেড়ে গেছে! এত দামে আমি কখনো হাঁসের ডিম কিনিনি। সাশ্রয়ী দামে এই একটি খাবারই ছিল। সেটাও এখন অস্বাভাবিক চড়া।

বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, আগে কখনো ডিমের দাম এত বেশি ছিল না। এ কারণে হাঁসের ডিম কিনতে আসা প্রায় প্রত্যেক ক্রেতার সঙ্গে দাম নিয়ে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন বেশিরভাগই।

তিনি বলেন, আমরা কী করবো? পাইকারি বিক্রেতার একদাম-এককথা। নিলে নেন, না নিলে নাই।

শান্তিনগর বাজারে দীর্ঘদিন ডিম বিক্রি করেন ফরিদ উদ্দিন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখন ডিমের দাম সবোর্চ্চ। জীবনে কখনো এত দামে হাঁসের ডিম বিক্রি করিনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত শীতকালে ডিমের চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ে। এ কারণেই একমাস ধরে ডিমের দাম বাড়ছে। তবে এ বছর মূল্যবৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক।

jagonews24

হাঁসের ডিম এভাবেই ময়লা অবস্থায় বিক্রি হয় বাজারে

তাদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতি একশটি হাঁসের ডিম এখন পাইকারি বাজারে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেটি পরিবহন খরচ ও ড্যামেজ (নষ্ট হওয়া) বাদে খুচরা বাজারে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে করোনাকালে বিধিনিষেধের ফলে একদিকে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, দিনমজুর ও গরিব মানুষের বড় একটি অংশের আয় কমেছে। চাল, ভোজ্যতেল, গ্যাস-পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামহীন। এর মধ্যে ডিমের মূল্যবৃদ্ধি প্রভাব ফেলছে দরিদ্র মানুষের জীবনে।

রামপুরা এলাকায় রিকশাচালক সাবু মিয়া বলেন, অভাবের সংসারে ডিম সবচেয়ে ভালো খাবার। সবার পছন্দ। কম দাম, পোষায় বেশি। ডিম ছিল বলে এ অভাবের সংসারে একবেলা ঝোল-ভাত খাওয়ার সাধ মেটে। সেটাও বেড়ে গেলে না খেয়ে মরার দশা হবে।

এদিকে তেজগাঁও ডিমের আড়তের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, শীতে ডিমের চাহিদা বেশি থাকে। সেই তুলনায় উৎপাদন কম। এছাড়া রাস্তাঘাটে এখন প্রচুর ভ্রাম্যমাণ ডিম বিক্রেতা। তারাই মূলত হাঁসের ডিমের বড় ক্রেতা।

তাদের ভাষ্য, শুধু দরিদ্র বা ডিম বিক্রেতারা নন, ডিম এখন প্রতিটি ঘরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। সস্তা ও সহজলভ্য বিবেচনায় এমন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর খাদ্য দ্বিতীয়টি আর নেই। এছাড়া যারা মাছ-মাংস কিনে খেতে পারছেন না, তাদের আমিষের চাহিদার বেশি অংশ এখন ডিম পূরণ করে। পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সীদের কাছে জনপ্রিয় ডিম।

jagonews24

এর আগে কখনো কোনো ডিমের দাম এত বেশি হয়নি

দেশে ডিমের জনপ্রিয়তা কী পরিমাণ বেড়েছে এর প্রমাণ মেলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের রিপোর্ট দেখে।

ওই রিপোর্টের তথ্যমতে, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডিমের ভোগ ৭ দশমিক ২ গ্রাম থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৮ গ্রামে।

এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎপাদনের তথ্য বলছে, ২০১০ সালে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৬০০ কোটি পিস, যা এখন ১ হাজার ৭৩৬ কোটিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ এক দশকে উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পৃথক হিসাবে, কেবল মুরগির ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। হাঁসের ডিমের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

তারপরও কেন ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, দেশের খামারিরা চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু এ খাতটি নানা সংকটে ভুগছে। বর্তমানে করোনা এ খাতকে একেবারে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, লোকসান দিতে দিতে এখন খামারিরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত খামার ছিল এক হাজার, এখন একশ থেকে দুশ-তে এসে ঠেকেছে।

এনএইচ/এমএইচআর/এমএস

দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পৃথক হিসাবে, কেবল মুরগির ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। হাঁসের ডিমের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

দুই-তিন দিনের ব্যবধানে মুরগির প্রতি ডজন ডিমের দাম খুচরায় ১০ টাকা বেড়ে ১১৫ টাকা হয়েছে। পাইকারি বাজারেও দাম উঠেছে ১১০ টাকায়। আর একপিস কিনতে লাগছে ১০ টাকা।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।