গুলশানের ‘র ক্যানভাস বারে’ ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১৩ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২২

রাজধানীর গুলশানের ‘র ক্যানভাস বার’র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। অভিযানে এক কোটি ৬৫ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করেছে।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।

তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে বারে মদ ও মদ জাতীয় দ্রব্য এবং রেস্টুরেন্টে খাবার সরবরাহ করতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত সেবা বিক্রি গোপন করে চালান ব্যতিত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘ দিন ধরে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছিল মর্মে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার উপ-পরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি দেখানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি এবং মাদক সংক্রান্ত রেজিস্টার হতে মাদকদ্রব্যের মজুতের পরিমাণ নির্ণয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন।

এছাড়া মাদক সংক্রান্ত রেজিস্টারে উল্লেখিত মজুতের পরিমাণের সঙ্গে ওয়্যারহাউজ এবং দুটি কাউন্টারে রাখা দেশি-বিদেশি মাদকদ্রব্যের তথ্য যাচাই করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণ করা তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি লুকোনো অবস্থায় জব্দ করা হয়। এসব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সঙ্গে ব্যাপক অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিলক্ষিত হয়।

প্রতিষ্ঠানটির ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী, ৬ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ৮২১ টাকার বিক্রয় মূল্য (সম্পূরক শুল্ক এবং মূসকসহ) যার উপর ৭৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩৩ টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি গুলশান ভ্যাট সার্কেল-৪ এ দাখিলপত্রের মাধ্যমে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৯ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে ৭৪ লাখ ৮ হাজার ৩১৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়। এ ফাঁকির ওপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ৮৭ হাজার ৬৮৯ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

vat

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়মূল্যের ওপর ৮৮ লাখ ৪২ হাজার ১৪৮ টাকা সম্পূরক শুল্ক প্রযোজ্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি গুলশান সার্কেল-৪ এ দাখিলপত্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৯০ হাজার ১৩৫ টাকা সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে ৮৬ লাখ ৫২ হাজার ১৩ টাকা সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়। এ ফাঁকির ওপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১ লাখ ১ হাজার ৬৩২ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

এছাড়া, সরেজমিন পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্ট্রার অনুসারে কম মদ ও মদজাতীয় পণ্য মজুত থাকায় এক্ষেত্রে ভ্যাট বাবদ ৩৭ হাজার ৪০৪ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক বাবদ ৪১ হাজার ৫৬০ টাকা প্রযোজ্য হবে।

তদন্ত অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির মোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৮ টাকা। সম্পূরক শুল্ক বাবদ ৮৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭০৮ টাকা এবং সুদ বাবদ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩২১ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৭ টাকা সরকারি রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।

এছাড়া অভিযানে তদন্তে ভ্যাট আইনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে হাতে লেখা কাঁচা চালান ইস্যু করতে দেখা যায়। ইএফডি স্থাপন করা সত্ত্বেও ক্রেতাদের মূসক-৬.৪ দেয়নি। এটি ভ্যাট আইনের লঙ্ঘনজনিত অপরাধ।

বারটিতে যে কোনো খাবারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য। সোমবার (১০ জানুয়ারি) এ নিয়ে ভ্যাট আইনের একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তদন্তে উদঘাটিত পরিহার করা ভ্যাট আদায় ও অনিয়ম সংঘটনের দায়ে আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে মামলাটি সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আরও মনিটরিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এমএএস/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।