শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের মেগা বিনিয়োগ
ডিজিটাল অর্থনীতির পরিবেশ তৈরি ও বিকাশে নীতিমালা বাস্তবায়ন করবে সরকার। ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের (ফোরআইআর) চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে সরকার। ‘ইনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনোমি’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ২ হাজার ৫৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক।। চলতি সময় থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। সমগ্র বাংলাদেশের ৮ বিভাগের ৬৪টি জেলা এবং সব সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপ-সচিব (পরিকল্পনা অধিশাখা) মোছা. আসপিয়া আকতার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এটা মূলত ডিজিটাল বিপ্লব। এ প্রকল্প এরই মধে একনেক সভায় পাস হয়ে গেছে। সরকারের ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি স্থাপন, পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানো এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ডিজিটালাইজেশন, ডিজিটাল অর্থনীতি প্রসারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এজন্য প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল সরকার ও ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা ও পরিবেশ শক্তিশালী করা হবে। একটি বণ্টনযোগ্য ও সংহত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম স্থাপন, ডিজিটাল অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে মৌলিক দক্ষতা অর্জনসহ চাকরির সংস্থান করা হবে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, সমন্বয় ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় আইসিটি যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার, অফিস সরঞ্জাম ও যানবাহন কেনা হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্টদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। ডিজিটাল অর্থনীতির পরিবেশ তৈরি ও বিকাশের জন্য নীতিমালা বাস্তবায়নে সহায়তা, ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, ডিজিটাল অর্থনীতি বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন ও স্টেকহোল্ডার ব্যবস্থাপনা করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় সম্মানি ভাতা, সরবরাহ, ভ্রমণ ও যানবাহন ভাড়া অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ পরামর্শক সেবা (ব্যক্তি), পরামর্শক সেবা (ফার্ম), পেশাগত সেবা, অন্যান্য মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ফি, চার্জ-কমিশন এবং কাস্টম শুদ্ধ ও মূল্য সংযোজন ব্যয়ও মেটানো হবে। অর্থনীতির জন্য প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা ও কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলারও ব্যবস্থা থাকছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে আইসিটি শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য যেসব ক্ষেত্রে কৌশলগত ব্যবস্থা গৃহীত হবে তার মধ্যে রয়েছে ফোরআইআর উৎপাদনশীল জ্ঞান অর্জন করা, সুশাসন ও সেবা সরবরাহে আইসিটির ব্যবহার, বৈশ্বিক আইসিটি বাণিজ্যে বাংলাদেশের সমতাভিত্তিক ও পর্যাপ্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।
এছাড়াও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা নিতে ডিজিটাল অর্থনীতি, আইসিটি খাতে দক্ষতা বাড়ানো, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহিতকরণ ইত্যাদির জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি ক্লাউডভিত্তিক অবকাঠামো সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করা সম্ভব হবে, যা আইটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ দক্ষতা ও স্থায়িত্ব বাড়াতে সহায়ক হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতি সহায়ক পরিবেশ তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দক্ষতা-উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আইটি ইন্ডাস্ট্রির আয় বাড়বে। যার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে । আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উদ্ভাবনের সমন্বয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে ডিজিটাল অর্থনীতির সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এমওএস/এআরএ/জেআইএম