খেলাপি ঋণ নিয়ে আইএমএফের প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২৫ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২১

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা উচ্চ খেলাপি ঋণ। এ কারণে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। একই সঙ্গে করোনাকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকের ভূমিকা বিষয়েও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের আইএমএফের পূর্বনির্ধারিত এক বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়েছে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। হিসাব বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। বিডিবিএলের ৫৬০ কোটি, বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৬১৯ কোটি, জনতা ব্যাংকের ১৩ হাজার ৮৭৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের তিন হাজার ৮৩৪ কোটি এবং সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ছিল ১০ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা।

করোনা মহামারিতে ব্যাংকিং সেক্টরের ক্ষতি ও গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাই আইএমএফ। এ কারণে ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিংয়ের পরিবর্তন এসেছে কি না, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে এ সংস্থা।

করোনাকালীন সরকারি ব্যাংকগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা হয়। আলোচনায় গুরুত্ব পায় প্রণোদনা প্যাকেজ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার বৃদ্ধি।

বৈঠকে স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাসহ ব্যাংকের সার্বিক পারফরম্যান্স বৃদ্ধিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ আসে।

চলতি বছর ১ জুলাই থেকে প্রণোদনার দ্বিতীয় মেয়াদের ঋণ বিতরণ শুরু হলেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তবে প্রথম মেয়াদে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন হার প্রায় ৮০ শতাংশ।

ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তিন মাস পার হলেও দ্বিতীয় মেয়াদে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের হার ৭ শতাংশের মধ্যে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প সার্ভিস সেক্টরে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে প্রথম মেয়াদে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। প্যাকেজটির বাস্তবায়ন হার ছিল ৮১ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

দ্বিতীয় মেয়াদের প্যাকেজ বাস্তবায়ন শুরু ১ জুলাই থেকে। তবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৫১৯ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত প্যাকেজের মাত্র এক দশমিক ৫৭ শতাংশ।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে মাত্র ৪৭৭ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র দুই দশমিক ৩৮ শতাংশ।

প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রি-ফিন্যান্স স্কিমে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজের আওতায় এখন পর্যন্ত সুবিধাভোগী মাত্র ৬৫টি প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত ৩৭৫ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ।

করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় প্রথম মেয়াদে সরকার ২৮টি প্যাকেজ ঘোষণা করে। এসব প্যাকেজের অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার নয়টি প্যাকেজ বাস্তবায়ন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। বছর শেষে এসব প্যাকেজের সার্বিক বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেয় আইএমএফ। এছাড়াও নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়েও দুপক্ষের আলোচনা হয়।

ইএআর/এএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।