দুইশোর কাছে ব্রয়লারের কেজি, কমেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
দফায় দফায় বাড়তে থাকা ব্রয়লার মুরগির দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এতে ব্রয়লার মুরগির কেজি দুইশো টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে।
এদিকে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর খবরে কমেছে পেঁয়াজের দাম। একদিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। তবে মুরগির পাশাপাশি এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি।
শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে ছিল ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। আর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে।
ব্রয়লার মুরগির মতো পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগির দামও দফায় দফায় বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগির দাম কয়েক দফা বেড়ে এখন ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এই মুরগির কেজি ছিল ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা এবং দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি।
ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির দাম দফায় দফায় বাড়লেও অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে লাল লেয়ার মুরগির দাম। সেপ্টেম্বর ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া এই মুরগির দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দামের বিষয়ে কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে এখন মুরগির সরবরাহ বেশ কম। এ কারণে মুরগির দাম বাড়ছে। সামনে ব্রয়লার মুরগির কেজি দুইশো টাকা হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে মাসখানেক পর মুরগির দাম কমতে পারে। কারণ তখন নতুন মুরগি বাজারে আসবে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মিলন শেখ বলেন, হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো এখন প্রচুর সোনালী ও ব্রয়লার মুরগি কিনছে। তাছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানের জন্যও ব্রয়লার ও সোনালী মুরগি কেনা হচ্ছে। এ কারণে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে। লাল লেয়ার মুরগি হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে চলে না। আমাদের ধারণা এ কারণে লেয়ার মুরগি দাম খুব একটা বাড়েনি।
তিনি বলেন, মুরগির দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আমরাও অবাক। গতকাল ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকা বিক্রি করেছি। আজ পাইকারিতে যে হারে দাম বেড়েছে তাতে আমাদের ১৮৫ টাকার নিচে বিক্রি করার উপায় নেই। পাইকারি বাজারে যে গুঞ্জন শুনছি, তাতে আগামী সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি দুইশো টাকাও হয়ে যেতে পারে।
খিলগাঁও বাজারে মুরগি কিনতে আসা আফজাল হোসেন বলেন, সপ্তাহে একটা দিন পরিবারের সবাই মিলে মাংস ভাত খাওয়ার চেষ্টা করি। গরু ও খাসির মাংসের যে দাম, তাতে অনেক আগেই গরু ও খাসির মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। এখন ব্রয়লার মুরগির দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে এটাও কপাল থেকে উঠে যাবে।
তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম নিয়ে কারও যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই। সবকিছুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে দুমুঠো ভাত খাওয়াই কষ্টকর হয়ে গেছে।
এদিকে গত সপ্তাহে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গতকালও পেঁয়াজের কেজি ৭৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোয় একদিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে গেছে।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী গৌতম জাগো নিউজকে বলেন, সরকার পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ কারণে শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। আমাদের ধারণা কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আরও কিছুটা কমবে।
তিনি বলেন, আসলে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। প্রচুর দেশি পেঁয়াজ আছে। কিন্তু ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় এবং পূজার কারণে কয়েকদিন কম পেঁয়াজ আসার কারণে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর ও টমেটো। মান ভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এই দুই সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য সবজি। শীতের আগাম সবজি শিম গত সপ্তাহের মতো কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে খুব একটা হেরফের হয়নি।
এছাড়া চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স, পটল, করলার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলাশাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাক, কলমিশাকের আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবজির দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. জুয়েল বলেন, বাজারে সবজির অভাব নেই। কিন্তু আড়তে সব সবজির দাম চড়া। বেশি দামে সবজি কেনার কারণে আমরাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। তবে দিন যত যাচ্ছে শিম, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপির সরবরাহ বাড়ছে। তাই আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যে সবজির দাম কমে আসবে।
এমএএস/কেএসআর/জিকেএস