শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় বই বিক্রেতাদের মুখে হাসি
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি কয়েক দফায় অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ করা হয়। এই দীর্ঘসময়ে এক প্রকার বন্ধই ছিল বই বিক্রি। চরম সংকটের মধ্যদিয়ে গেছে দেশের বৃহৎ এই প্রকাশনা শিল্প। লাভ-লোকসানের মধ্যদিয়ে বইমেলা আর চাকরির পরীক্ষার বই বিক্রি করে হামাগুড়ি দিয়ে চলছিল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো। কর্মী ছাঁটাই, ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতির সম্মুখীনও হয়েছেন প্রকাশনা সংস্থার মালিকরা।
তবে দেশে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় এবং গণটিকা প্রদান কর্মসূচি চালু হওয়ায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছু। সেই সঙ্গে খুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় বেচাকেনা বেড়েছে বই বিক্রিতাদের। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় বেড়েছে লাইব্রেরি, স্টেশনারিগুলোতে।
শনিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর বাংলাবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, লাইব্রেরি আর প্রকাশনীগুলোতে চলছে বই বেচাকেনা। স্টেশনারিগুলোতে পড়াশোনার আসবাবপত্র কিনতে দেখা গেছে অনেককে। বাংলাবাজারের ডাকঘরের পাশ ধরে ফুটপাতে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি বইয়ের দোকান রয়েছে। পুরাতন এসব বই বিক্রেতার দোকানেও রয়েছে ভিড়। ভ্যানগাড়ি, মাথায়, ঝুঁড়িতে করে বই আনা-নেওয়ার কাজ করছেন শ্রমিকরা। প্রেস থেকে লাইব্রেরি, প্রকাশনীতে বই আনা-নেওয়ার কাজে তাদের ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
৩০ বছর ধরে বাংলাবাজারের ডাকঘরের সামনের ফুটপাতে বই বিক্রি করেন দুলাল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, স্কুল-কলেজ খোলায় কিছু কাস্টমার (ক্রেতা) আসছেন। করোনাকালে আমাদের কোনো বেচাকেনাই হয়নি। তাছাড়া স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় কাস্টমার পাইনি। এখন কিছু বেচাকেনা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয় তাহলে বেচাকেনা বাড়বে।
প্রেস থেকে বাংলাবাজারের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে মাথায় করে বই আনা-নেওয়ার কাজ করেন বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, আমরা দিন আনি, দিন খাই। ঝুঁড়িতে করে বই আনা-নেওয়ার কাজে যা পাই তা দিয়ে চলি। করোনার মধ্যে কাজ একদম কম ছিল। এখন মোটামুটি কাজ আছে।
বিচিত্রা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মো. অপু বলেন, করোনাকালে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া অসম্ভব। এখন স্কুল-কলেজ খোলায় নোট, গাইড বিক্রি হচ্ছে। তবে জানুয়ারির দিকে ভালো বেচাকেনা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন আর বন্ধ না হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।
বিএস পাবলিকেশন্স অ্যান্ড লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী ফজলুল হক বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেচাকেনা হয়নি। শিক্ষার্থীরা গত দেড় বছরে অনেকটা অনলাইনে বই কেনায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সরাসরি লাইব্রেীরতে এসে বই কম কেনে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন নিয়মিত খোলা থাকে সেটাই চাই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল জাগো নিউজকে বলেন, স্কুল-কলেজ তো পুরোপুরি খোলেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল শ্রেণি, বিভাগ যখন খুলে দেবে, সকল পরীক্ষা শুরু হবে, তখন বই বেচাকেনা হবে। করোনাকালে আমাদের প্রকাশনী, গাইড তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবে না। আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি, সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছি, কোনো লাভ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এখন একটা জিনিস প্রমাণ হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ নয় সেটা প্রশাসন বুঝতে পেরেছে।
ইএ/এমএস