কাটেনি মন্দা, পূজা-বিয়ে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১০ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

অডিও শুনুন

দেশের বাজারে বছরের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি হয় অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে। এসময় অনুষ্ঠিত হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। কৃষকের ঘরে ওঠে নতুন ধান। পাশাপাশি পড়ে বিয়ের ধুম। তাই এ তিন মাসের অপেক্ষায় থাকেন অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা।

করোনা মহামারির কারণে গত দু’বছর সব কিছুই ওলটপালট হয়ে গেছে। জনজীবন ও অর্থনীতিতে নেমে এসেছে দুর্যোগ। কাজ হারিয়েছেন অনেকে। ঘরবন্দি সময় কাটাতে হয়েছে মাসের পর মাস। ফলে গত দু’বছরে উৎসব উদযাপন ভুলে গেছেন অনেকে। যার প্রভাব পড়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ও। ঈদ, পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, নবান্ন- একের পর এক উৎসব চলে গেছে। কিন্তু স্বর্ণ ব্যবসার মন্দা কাটেনি।

বর্তমানে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে আসায় আসন্ন পূজা-বিয়ে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।

এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রেতা আকৃষ্ট করতে গত ঈদের সময় নানা ছাড় দিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি। স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।

তারা বলছেন, জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসায় এখন পূজা উপলক্ষে কিছু অলঙ্কার বিক্রি হচ্ছে। সামনে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পূজা শুরু, তাই আশা করা যায় পূজা উপলক্ষে আরও কিছু ব্যবসা হবে। তাছাড়া নভেম্বর-ডিসেম্বরে নবান্ন ও বিয়ের মৌসুম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আশা করা যায় আগামী দু-তিন মাস ভালো ব্যবসা হবে।

অন্যদিকে, দেশের বাজারে মন্দাভাব থাকলেও করোনার মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ছিল উত্তাপ। হঠাৎ বড় উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটতে থাকে একের পর এক। ফলে দেশের বাজারেও বারবার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়। সবশেষ গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) ভরিতে ১ হাজার ৫১৬ টাকা বাড়িয়ে স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করে। এতে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৭৩ হাজার ৪৮৩ টাকা নির্ধারিত হয়।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৭০ হাজার ৩৩৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৬১ হাজার ৫৮৬ এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫১ হাজার ২৬৩ টাকা নির্ধারিত হয়। এ দামেই বর্তমানে বাংলাদেশে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।

jagonews24

ব্যবসা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুবল জাগো নিউজকে বলেন, দুটো বছর আমরা অনেক কষ্টে কাটিয়েছি। করোনার কারণে অনেকে কাজ হারিয়েছে। যার প্রভাব পড়ে আমাদের ব্যবসায়। মানুষ অলঙ্কার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছে বেশি। বেশ কিছুদিন ধরে কিছু বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু করোনার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী মিলন বলেন, সবকিছু খুলে দেওয়া হলেও অলঙ্কার ব্যবসার মন্দা কাটেনি। আগে আমাদের এখানে ১০ জন কাজ করতাম। কিন্তু করোনার কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় এখন মাত্র চারজন আছি। মালিক অন্য শাখায়ও লোক কমিয়েছেন। বিক্রি না থাকলে মালিক তো আর বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেবেন না।

এ বিষয়ে বাজুস সভাপতি এনামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন মানুষ অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। এতে পূজা উপলক্ষে কিছু অলঙ্কার বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি না হলে সামনে বিক্রি কিছুটা বাড়বে বলে আশা করছি। তবে করোনার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

জানতে চাইলে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, করোনার পর আমাদের ব্যবসায় যে মন্দা দেখা দিয়েছিল, এখনো তা কাটেনি। পূজা উপলক্ষে সামনে কিছু অলঙ্কার বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

jagonews24

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, এখনো আমাদের ব্যবসার পরিস্থিতি অনেক খারাপ। আসলে করোনার কারণে অনেকে কাজ হারিয়েছে। যাদের কাজ আছে, তাদের অনেকের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে সবকিছুর ব্যয় বেড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ এখন অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।

তিনি বলেন, তেলের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চিনির দাম বেড়েও দ্বিগুণ। এছাড়া চাল, মাছ, মাংস, সবজি সবকিছুর দাম বাড়তি। কিন্তু মানুষের আয় তো বাড়েনি। বরং কমেছে। এখন সাধারণ মানুষের পক্ষে টিকে থাকাই কষ্টকর। সেখানে স্বর্ণের বিক্রি কমবে এটাই স্বাভাবিক।

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এখন সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে। জন্মদিন, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। সামনে পূজা কিন্তু পূজাকেন্দ্রিক আমাদের তেমন বিক্রি হচ্ছে না। আশা করছি, পরিস্থিতি ভালো থাকলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে কিছুটা ব্যবসা হতে পারে। কারণ এ সময় বাংলাদেশে বিয়ের মৌসুম।

এমএএস/এমএএইচ/এএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।