ভ্যাট মেশিন স্থাপনে মন্থরগতি, হতাশ ব্যবসায়ীরা

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৮:৪১ এএম, ২৩ আগস্ট ২০২১

অডিও শুনুন

দুই বছর আগে ভ্যাট আহরণ বাড়াতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর পরিকল্পনা নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কথা ছিল এ বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ছয় হাজার দোকানে বসবে এ ভ্যাট মেশিন। বছরের শেষ নাগাদ ১০ হাজার ছোট-বড় দোকান পাবে ইএফডি। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি দোকানে যাবে যন্ত্রটি।

অজানা কারণে মন্থর ইএফডি বসানোর কার্যক্রম। ‘ঝামেলা এড়াতে’ ব্যবসায়ীরা দ্রুত মেশিনটি বসানোর অনুরোধ করলেও তাতে কোনো ফল মিলছে না।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিন হাজার ৩৯৩টি ইএফডি মেশিন বসানো হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার (জুলাইয়ের মধ্যে) ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

এ নিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজস্ব বোর্ড এতোদিনে মাত্র চার হাজারের কিছু বেশি ইএফডি মেশিন আনতে পারছে। যেখানে ইএফডি মেশিন দরকার কমপক্ষে ৩০ লাখ। ভ্যাট দেবে কাস্টমার, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। রাজস্ব বোর্ড ইএফডি মেশিন দেবে, আমরা ভ্যাট সংগ্রহ করবো।’

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ভ্যাট আইন চালুর আগে প্রথম দফায় এক লাখ ইএফডি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আইনটি চালুর প্রথম এক বছরে ইএফডি আমদানি করতে পারেনি রাজস্ব বোর্ড। ২০১৯ সালের নভেম্বরে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় মেশিন আমদানির বিষয়টি আটকে যায়।

পরের বছরের এপ্রিলে চীন থেকে ১০০ মেশিন আসে। তা ইনস্টল ও রক্ষণাবেক্ষণে চীনা প্রকৌশলী আসার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে তারা আসেননি। এরপর আরও কিছু মেশিন আসে। তা দিয়ে আগস্টে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও চট্টগ্রামের কিছু দোকানে ইএফডি বসায় এনবিআর।

কিছু দোকানে ইএফডি বসানো এবং কিছু দোকানে না বসানোর কারণে তদারকিতে ঝামেলা তৈরি হয়েছে রাজস্ব বোর্ডের। এতে ঝামেলায় পড়েছেন দোকান মালিকরাও।

মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘কিছু দোকানে মেশিন বসানো হয়েছে, কিছু দোকানে নেই। এতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। সর্বশেষ আমরা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বলেছিলাম। প্রথমে কথা ছিল এনবিআর আমাদের ইএফডি ফ্রি দেবে। কিন্তু যদি কিনে নিতে হয় তাতেও আমরা রাজি। মেশিন তো এনে দিতে হবে। বৈঠকে আমরা উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেছি, যতদিন মেশিন না দিতে পারে, ততদিন যেন দোকানে গিয়ে ঝামেলা না করে।’

এ ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, সব দোকানে ইএফডি মেশিন বসাতে। যদি তা না পারে তাহলে সেক্টর অনুযায়ী দেয়ার জন্য বলেছি। মানে এখন যতগুলো আছে, সেগুলো একটা সেক্টরে দেয়া যেতে পারে। শুধু জুতার দোকান বা খাবারের দোকান, এভাবে দিতে পারে।’

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইএফডি নামের আধুনিক যন্ত্রটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআরের উন্নত সংস্করণ। ইএফডির মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনের লেনদেনের প্রকৃত তথ্য জানতে পারেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। এজন্য রাজস্ব বোর্ডে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সার্ভার বসানো হয়েছে।

শুল্কমুক্তভাবে চীন থেকে আমদানি করা প্রতিটি মেশিনের দাম পড়েছে ২২ হাজার টাকা। এসব মেশিন আনতে চীনের ‘এসজেডজেডটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। মেশিন ইনস্টলেশনের বিষয়ে কারিগরি সহায়তাও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

মেশিন বসানোর অগ্রগতি ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলেও এসজেডজেডটির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

গত বছর এক আদেশে হোটেল, রেস্তোরাঁ, মিষ্টির দোকান, পোশাক, বিপণি-বিতান, শপিংমল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপারশপ, ফার্নিচারের দোকান, জুয়েলারিসহ ২৫ খাতে এ মেশিন বাধ্যতামূলক করার কথা বলে রাজস্ব বোর্ড।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, করোনাসহ নানা জটিলতায় ইএফডি মেশিন বসানোয় ধীরগতি আসছে। সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে সব দোকানে ইএফডি মেশিন বসাতে চায় তারা। প্রাথমিক পর্যায়ে মেশিনটি বিনামূল্যে দেয়া হলেও, আগামীতে কী করা হবে তা সরকার ঠিক করবে।

মেশিনটি নিয়ে কাজ করে রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট বিভাগ।

রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. আবদুল মান্নান শিকদার বলেন, ‘প্রায় চার হাজার দোকানে ইএফডি যন্ত্র বসানো সম্ভব হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব দোকানে বসানো হবে। চলতি অর্থবছর আরও ছয় হাজার ইএফডি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সব দোকানে বসাতে কতদিন লাগবে তা বলা সম্ভব নয়।’

প্রকল্পের ধীরগতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এর বেশি কিছু বলতে চাননি।

দেশে ভ্যাট আদায়ের বড় একটি খাত খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দেশে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ খুচরা ও পাইকারি দোকান আছে বলে দোকান মালিক সমিতি জানিয়েছে।

অন্যদিকে রাজস্ব বোর্ডের সমীক্ষা বলছে, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা খাতে বছরে যে পরিমাণ লেনদেন হয়, তা জিডিপির ১৩ শতাংশ। এ কারণে এ খাতে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৯ সালের জুন মাসে নতুন ভ্যাট আইন চালু হয়েছে। এর আওতায় রাজস্ব বোর্ড স্বয়ংক্রিয় ও অনলাইনভিত্তিক কর ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো।

২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ইএফডি মেশিনের উদ্বোধন করেন। তার এক বছর পর গত বছরের আগস্ট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন দোকানে বসানো শুরু হয় এই যন্ত্র।

এসএম/এমএইচআর/এইচএ/জিকেএস

রাজস্ব বোর্ড এতো দিনে মাত্র চার হাজারের কিছু বেশি ইএফডি মেশিন আনতে পেরেছে। যেখানে ইএফডি মেশিন দরকার কমপক্ষে ৩০ লাখ। ভ্যাট দেবে কাস্টমার, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। রাজস্ব বোর্ড ইএফডি মেশিন দেবে, আমরা ভ্যাট সংগ্রহ করবো

প্রায় চার হাজার দোকানে ইএফডি যন্ত্র বসানো সম্ভব হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব দোকানে বসানো হবে। চলতি অর্থবছর আরও ছয় হাজার ইএফডি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সব দোকানে বসাতে কতদিন লাগবে তা বলা সম্ভব নয়

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।