একদিনেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ল ১০ টাকা
অডিও শুনুন
হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। একদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। পাইকারিতে বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত।
হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনের কারণে বাজারে পেঁয়াজ কম আসছে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে।
এদিকে খুচরা ও পাইকারি উভয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও দুই বাজারের দামের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা গেছে। পাইকারির তুলনায় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫ টাকার মতো বেশি দেখা গেছে।
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি দরে। কোনো কোনো দোকানে ৫৫ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ একদিন আগেই (শুক্রবার) বেশিরভাগ দোকানে ৫০ টাকায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ৩৭ থেকে ৩৮ টাকার মধ্যে।
হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী ফজর আলী বলেন, পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়েছে। কেজিতে ৫ টাকা বেশি দিয়ে আজ পেঁয়াজ কিনে এনেছি। এর সঙ্গে ভ্যান ভাড়াও বেশি দিতে হয়েছে। ফলে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
তিনি বলেন, কম দামে কিনতে পারায় গতকাল ৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। এখন বেশি দামে কেনার কারণে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। কিন্তু ক্রেতা খুব কম। লকডাউনের কারণে মানুষ কম বের হচ্ছে, বিক্রিও কম হচ্ছে।
রামপুরায় ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রি করা মতিন পাটোয়ারী বলেন, শ্যামবাজার থেকে মাল এনে দিনেরটা দিনে বিক্রি করি। যেদিন যেমন কেনা পড়ে, বিক্রি করতে হয় তেমন দামে। বেশি দামে কেনার কারণে আজ ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।
মালিবাগ হাজীপাড়া বৌবাজারে ৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন মো. জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে শুনছি। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে শ্যামবাজারে যাইনি। আমার পেঁয়াজ আগে কেনা তাই এখনও ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আগামীকাল থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হতে পারে। কারণ আগের কেনা পেঁয়াজ আজ শেষ হয়ে যাবে।
শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ কম আসছে। আবার পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। সব মিলে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। আমাদের ধারণা, সামনে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ খুব একটা আসছে না। দেশি পেঁয়াজ দিয়েই বাজার চলছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে আমাদের ৪৭-৪৮ টাকা খরচ পড়ে। সেখানে দেশি পেঁয়াজ আমরা ৪৩-৪৪ টাকা কেজি বিক্রি করছি। দুদিন আগে এই পেঁয়াজ ৩৭-৩৮ টাকা কেজি বিক্রি করেছি।
খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা স্বাভাবিক কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাজারে এখন ক্রেতা নেই। মাল পরিবহনের জন্য বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা তো এখন একটু মুনাফা করার চেষ্টা করবে। আমার মতে, পেঁয়াজ কেজি ৭০ টাকা হওয়া উচিত। কারণ এখন এক কেজি চালের দামই ৬০ টাকার ওপরে!’
লকডাউনে ব্যবসার সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে আমরা কী কষ্টে আছি বলে বুঝাতে পারব না। কর্মীদের ঠিক মতো বেতন দিতে পারছি না। ২০ জন কর্মীর মধ্যে ১২ জন বাদ দিয়েছি। আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। এই লকডাউনে একমাত্র সরকারি চাকরিজীবীরা ভালো আছে। তাছাড়া কেউ ভালো নেই।’
এমএএস/এমএইচআর/এমকেএইচ