করোনার অর্থবছরেও চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী
করোনার অর্থবছরে (জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২১) দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম বন্দরের সব সূচকই ঊর্ধ্বমুখী। গত অর্থবছরের তুলনায় বন্দরে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কার্গো ও ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি-রফতানি মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ মেট্রিক টন। এর আগের অর্থবছরে বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১০ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন। সে হিসেবে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
আবার ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি-রফতানি মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইউইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের)। এর আগের অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩০ লাখ চার হাজার ১৪২ টিইউইউস। সে হিসেবে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ।
এছাড়াও একই অর্থবছরে বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙর মিলে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ৬২টি। এর আগের অর্থবছরে হয়েছিল ৩ হাজার ৭৬৪টি। সে হিসাবে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরের মাসভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আমদানি-রফতানি মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। মাসটিতে আমদানিকৃত কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৩ মেট্রিক টন এবং রফতানিকৃত কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ছয় লাখ এক হাজার ৩১৫টি। সব মিলিয়ে ওই মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল এক কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে আমদানি-রফতানি মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। মাসটিতে আমদানিকৃত কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৪ টিইউইউস এবং রফতানিকৃত কার্গো কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৭৭৮ টিইউইউস। সব মিলিয়ে ওই মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল দুই লাখ ৮০ হাজার ২২২ টিইউইউস।
এছাড়াও ২০২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে এ বছরের এপ্রিল মাসে জেটি ও বহির্নোঙর মিলে সর্বোচ্চ ৩৯৬টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রস্তুতি নেয়ায় করোনার এই অর্থবছরেও বন্দরে সব সূচকে প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এছাড়াও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজনসহ নানামুখী পদক্ষেপে বন্দরে গত অর্থবছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কার্গো ও ৩ দশমিক ১ শতাংশ কনটেইনার এবং ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনায় বন্দরের এমন প্রবৃদ্ধির মানে হচ্ছে দেশের অর্থনীতি ভালো আছে। করোনার কারণে চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় প্রচুর পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্তে পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। এ কারণে বিদেশ থেকে প্রচুর অর্ডার এসেছে। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্য কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। যার প্রভাব পড়েছে বন্দরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে সরকারের বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প। যেমন পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল ও রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানির ৯২ শতাংশেরও অধিক পণ্য এবং ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে। বন্দরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। আর রাজস্ব আদায় হয় দৈনিক হাজার কোটি টাকা।
গত বছর দেশে মহামারির শুরুতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। যার কারণে বন্দরের কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। এ ছাড়া করোনার প্রস্তুতি কম থাকাতে গত বছরের পরিবহন ও অপারেশনাল কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল।
তবে করোনার দ্বিতীয় দফার কঠোর বিধিনিষেধেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচলে অবদান রাখা এই বন্দর চালু রাখতে বেশ আগেভাগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে সচল রাখা হয়েছে বন্দরের কার্যক্রম। অফিসের কাজে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হলেও অপারেশনাল কাজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
মিজানুর রহমান/জেডএইচ/এমএস