ব্রয়লার মুরগির সঙ্গে বেড়েছে আলুর দাম
মাসের অধিক সময় ধরে কিছুটা কমদামে বিক্রি হওয়ার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগি ও লাল লেয়ার মুরগির দাম।
ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে আলুর দাম। কেজিতে আলুর দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি।
মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছরই এই সময়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যায়। তাছাড়া মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্রয়লার মুরগি কিছুটা কম বিক্রি হয়েছে। যে কারণে অনেক ফার্ম ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। আবার মুরগির খাবারের দাম বাড়তি। সবকিছু মিলে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে গেছে।
অপরদিকে আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে এখন যে আলু পাওয়া যাচ্ছে তার পুরোটাই কোল্ডস্টোরেজ থেকে আসছে। আর কোল্ডস্টোরেজের নিয়ন্ত্রণ অল্পকিছু ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে। তারা দাম বাড়ানোর কারণে আলুর দাম বেড়ে গেছে। নতুন আলু আসার আগে দাম কমার সম্ভাবনা কম। বরং সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে লাল লেয়ার মুরগি আগের মতো কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আর সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী হিরু বলেন, এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম। প্রতিবছরই এই সময় ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম থাকে। এবার মুরগির সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি খাবারের দামও বেশি। এসব কিছু মিলে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে গেছে। আমাদের ধারণা সামনে সোনালী মুরগির দামও বাড়বে। কারণ সোনালী মুরগি এখন তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, এখন সবকিছু খুলে গেছে। মানুষ স্বাভাবিক সময়ের মতো বাইরে বের হচ্ছে। যে কারণে হোটেল, ফাস্টফুডের দোকানে বিক্রি বেড়েছে। ফলে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়েছে। এখন ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার পেছনে এটি বড় কারণ।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আলুর দাম একলাফে ২৫ টাকা হয়েছে। আলুর দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহের মতো পেঁয়াজের কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, এখন আলু সব কোল্ডস্টোরেজে। কোল্ডস্টোরেজ থেকে যে আলু বের হচ্ছে তাই বাজারে আসছে। এ কারণে আলুর দাম বাড়তি। সামনে আলুর দাম আরও বাড়তে পারে।
রামপুরার ব্যবসায়ী সামাদ বলেন, আলু কোল্ডস্টোরেজে চলে গেল দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কারণ কোল্ডস্টোরেজের ব্যবসা অল্প কয়েকজনের নিয়ন্ত্রণে। আগের অভিজ্ঞতা তা বুঝছি নতুন আলু না আসা পর্যন্ত দাম কমার আর সম্ভাবনা নেই। বরং দ্রুত নজরদারি না বাড়ালে আবারও আলুর বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আগের মতো ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। মানভেদে শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এছাড়া বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গাঁজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পাকা টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
কাঁচকলা, পেঁপে, কচুর লতি, লাউ, উস্তের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক কেজি কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। উস্তের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের মো. জসিম বলেন, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমাদের ধারণা ছিল সবজির দাম বেড়ে যাবে। বৃষ্টির প্রভাব এখনও সবজির দামে পড়েনি। তবে কয়েকদিনের মধ্যে সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে।
রামপুরার ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজির কিছুটা হলেও ক্ষতি হবে। বৃষ্টির কারণে এখন চাষিরা বাড়তি সবজি তুলে ফেলছেন। এ কারণে সরবরাহ ভালো রয়েছে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে সবজির সরবরাহ কমে যেতে পারে। তখন দাম আরও বেড়ে যাবে।
এমএএস/বিএ/এমএস