‘এক টাকা বিনিয়োগ করলে একশ টাকা পাবে, সরকার কেন বিনিয়োগ করে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৪ পিএম, ০৫ জুন ২০২১

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেছেন, সরকার এখানে (ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া) এক টাকা বিনিয়োগ করলে একশ টাকা পাবে তাহলে সরকার কেন এখানে বিনিয়োগ করছে না।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে চায় কিন্তু পদ্ধতিটা সহজ হওয়া উচিত। সরকার এতো বড় বাজেট দিচ্ছে, এতো কিছু করছে। আমি তো মনে করি এ জায়গায় (ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া) বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত।

শনিবার (৫ জুন) মতিঝিলের এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিতে চায়, ট্যাক্স দিতে চায়। সবই দিতে চায়। ভ্যাট আদায়ে একটা মার্কেটে একশটা দোকান থাকলে ১০টা দোকানে মেশিন বসানো হলো। আমরা বলছি দিলে সবাইকে দেবেন, না দিলে দেবেন না। কত টাকা লাগে এখানে। বেশি টাকার তো দরকার নেই। সরকার এতো টাকার বাজেট দিচ্ছে, এতো কিছু করছে, আমি তো মনে করি এখানে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত।’

তিনি বলেন, সরকার এখানে এক টাকা ইনভেস্টমেন্ট করলে ১০০ টাকা পাচ্ছে। তাহলে ইনভেস্টমেন্ট কেন করছে না?

কালো টাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেয়া উচিত। এটা সব সময়ের জন্য দেয়া হলে যারা নিয়মিত ভ্যাট দেয় তারা নিরুৎসাহিত হবেন।

সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন করে আরও একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করার দাবি জানান।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়া হয়েছিল, তার সম্পূর্ণ এখনও দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি, সে বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসবো। এখন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে আমরা আরও একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়াও ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অগ্রিম আয়কর (এআইটি), আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করাসহ আরও কয়েকটি দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই।

সংগঠনটির সভাপতি বলেন, অগ্রিম আয়কর (এটিআই) বেআইনি। এফবিসিসিআই থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছিল। অথচ বাজেটে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। এ অগ্রিম আয়কর আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, মোট প্রাপ্তি তিন কোটি টাকা বা ততোধিক হলে ব্যক্তি আয়করদাতাদের ন্যূনতম কর হার দশমিক ৫০ থেকে কমিয়ে দশমিক ২৫ করা হয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম কর হার দশমিক ২৫ করার দাবি জানাচ্ছি।

এফবিসিসিআইয়ে অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-

>>> আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা;
>>> আগামী এক বছরের জন্য ই-কমার্সকে উৎসে করের আওতাবহির্ভূত রাখা;
>>> কাটার সেকশন ড্রেজারকে ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে ১ শতাংশ শুল্কে আমদানির সুযোগ দেয়া;

>>> বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করা;
>>> সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য সব উপজেলা পর্যায়ে আয়কর ও ভ্যাট অফিস স্থাপন করা;
>>> সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের কাজে টিন নম্বর ব্যবহার করার পাশাপাশি ট্যাক্স পেমেন্টের প্রমাণ বা ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে;

>>> জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পলিসি উইং এবং বাজেট বাস্তবায়ন উইংকে পৃথক করা এবং
>>> মূল্য সংযোজন কর আইন সহজীকরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এফবিসিসিআইয়ের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা।

সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান উপস্থিত ছিলেন।

এমএএস/এআরএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।