স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ালে উপকার নয়, চুরি-অপচয় হবে : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ৩১ মে ২০২১

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও দুর্বলতা রয়েছে। কাঠামোগত সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা না বাড়িয়ে বরাদ্দ বাড়ালে কোনো লাভ হবে না। বরং বরাদ্দ দেয়া অর্থের কিছুটা অপচয় হবে এবং কিছুটা চুরি হবে। দিন শেষে মানুষের কোনো উপকার হবে না।

সোমবার ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট’ নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এসব কথা বলেন নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ফাহমিদা বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে একদিকে অর্থ বরাদ্দ কম, ‘অন্যদিকে অর্থ ব্যবহার করার সক্ষমতা নেই। কোন মন্ত্রণালয়ের কোন খাতে কী ধরনের সক্ষমতা আছে, কতো ব্যয় করতে পারে, সেটাকে বেঞ্চমার্ক ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেয়। এখন বর্ধিত যে অর্থ দেয়া হবে, সেটা তারা (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) কীভাবে খরচ করবে? আবার যেটা খরচ করল সেটাও বা কীভাবে হলো? এখানে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এগুলো আপনারাই রিপোর্ট করেছেন। সুতরাং এই একটা খাতের যে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, দুর্নীতি, দুর্বলতা এগুলোর কারণেই কিন্তু বরাদ্দ দিয়েও লাভ নেই। সুতরাং যেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেটার যথাযথ বাস্তবায়ন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কাঠামোগত সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এই কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কোনো লাভ হবে না। গতানুগতিক যেভাবে ব্যয় হচ্ছিল সেভাবেই হবে। বরাদ্দ বাড়ালে কিছুটা অপচয় হবে, কিছুটা চুরি হবে, এভাবেই চলে যাবে। দিন শেষে মানুষের কোনো উপকার হবে না।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনন্ত ৪ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা উচিত।’

এর আগে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সিপিডির পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

cpd-2

তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা সব জায়গা থেকে আসছে। সার্বিকভাবে সবাই বলছে, সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব নীতির দিকে যেতে। এ ক্ষেত্রে সিপিডির সুপারিশ হচ্ছে, আমাদের যে কর কাঠামো আছে, তার মধ্যে নতুন করে কর আরোপের সুযোগ খুব বেশি নেই। আমাদের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। সে জন্য নতুন কর বা উচ্চ করের ভিতরে এখন যাওয়াটা ঠিক হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রসারণমূলক নীতির দিকে গেলে এখন নিঃসন্দেহে আমাদের সম্পদ সংগ্রহ বাড়াতে হবে। এই সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটা বড় জায়গা হলো আমাদের যে কর ফাঁকির জায়গাগুলো আছে, তা রোধ করতে হবে। অর্থপাচার রোধ করতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’

আইএমইডি’র তথ্য তুলে ধরে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আইএমইডি’র তথ্য অনুযায়ী-চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে এডিপির মাত্র ৪৯ শতাংশের মতো খরচ করতে পেরেছি। এর মধ্যে সরকারি বরাদ্দের ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। আর বিদেশি সাহায্য যেটা আসে, তার ৪৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো স্বাস্থ্য খাত। যেটা গত এক-দেড় বছর খুবই নজরের মধ্যে আছে। সেখানে খুবই কম খরচ হয়েছে। মাত্র ৩১ শতাংশের মতো এডিপি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজেট যেহেতু খুব একটা বাস্তবায়িত হয়নি, সে কারণে বাজেটে যে ঘাটতি আছে, সে ঘাটতিও তেমন হয়নি।’

চলতি অর্থবছরে শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে বলেও জানায় সিপিডি। এ বিষয়ে তৌফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্প খাতের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অনেক কম আছে। বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। যেটা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর ক্ষুদ্র শিল্পে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ।

cpd-2

তিনি বলেন, করোনাকালে সাধারণ মানুষের আয় কমে গেলেও খাদ্য ও চিকিৎসা খাতের মূল্যস্ফিতি বেড়ে গেছে। যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এছাড়া এখন সুদের হার অনেক কম। কিন্তু তারপরও ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে আমরা তেমন চাঞ্চল্য দেখিনি।

ব্রিফিংয়ে চাল, ভোজ্য তেল ও চিনির দামের অস্থিরতার তথ্যও তুলে ধরে বেসরকারি এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে সিপিডির পক্ষ থেকে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, চাল, ভোজ্যতেল, চিনির দাম বিশ্ববাজারে ও দেশের বাজারে অনেক ওঠানামা করেছে। তবে আমরা দেখেছি, দেশের বাজারে চালের বাজার যতটা অস্থিতিশীল ছিল, বিশ্ববাজারে ততোটা না। এটা চিন্তার বিষয়। সে জায়গায় ভোজ্যতেলের ওঠানামা বিশ্ববাজারে অনেক দ্রুত হয়েছে।’

তিনি বলেন, সার্বিকভাবে আমরা দেখেছি বিশ্ববাজারে দাম ওঠা-নামার ওপরই দেশের বাজারে দামের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে তা না। এর সঙ্গে আরও অনেক নিয়ামক আছে। চাল ও গমের মজুত অনেক কমে গেছে। এটার একটা বিরূপ প্রভাব আছে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যক্তিখাতের আমদানিকারকদের আরও বেশি উৎসাহ দিতে হবে। আর অভ্যন্তরীণভাবে যে চাল সংগ্রহ করা হয়, তা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে নিতে পারলে অধিক কার্যকর হবে।

এ সময় ‘কৃষি দামের কমিশন’ গঠনেরও প্রস্তাব দেয়া হয় সিপিডির পক্ষ থেকে। এতে কৃষিপণ্যের দামের বিষয়গুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য একটা পেশাদারিত্ব তৈরি হবে বলে মনে করছে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠনটি।

ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।

এমএএস/এমএইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।