১০ শলাকা সিগারেটে ৯১ টাকা শুল্ক আরোপের দাবি
প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে সর্বনিম্ন সাড়ে ৩২ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৯১ টাকা সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। তাদের দাবি, এতে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেট ৫০ টাকার কমে মিলবে না। আর প্রিমিয়াম মানের সিগারেট খেতে চাইলে প্রতি ১০ শলাকায় খরচ করতে হবে ১৪০ টাকা।
মঙ্গলবার (১১ মে) দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তারা ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এমন কর প্রস্তাব তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা।
প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য নিম্ন স্তরে ৫০ টাকা, মধ্যম স্তরে ৭০ টাকা, উচ্চ স্তরে ১১০ টাকা ও প্রিমিয়াম স্তরে ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে যথাক্রমে ৩২ দশমিক ৫০ টাকা, ৪৫ দশমিক ৫০ টাকা, ৭১ দশমিক ৫০ টাকা, এবং ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
ফিল্টারবিহীন বিড়ির ২৫ শলাকার খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে যথাক্রমে ১১ দশমিক ২৫ টাকা এবং ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
ই-সিগারেটের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা। পাশাপাশি সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ পূর্বের ন্যায় বহাল থাকার সুপারিশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আবদুল্লাহ, বাটা’র সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপি’র কনভেনর ড. রুমানা হক ও বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিখিল ভদ্র। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা।
এসময় এসএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে প্রচলিত অ্যাড ভেলোরেম পদ্ধতিটি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। ফলে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়লেও তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে না। বরং তামাক কোম্পানির মুনাফা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭৬ ভাগ দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কোনো না কোনোভাবে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির করারোপ ব্যবস্থা বিদ্যমান। বিশ্বের ১১৫টি দেশে ইউনিফর্মড কর ব্যবস্থা চালু রয়েছে। অর্থাৎ এসব দেশে সব সিগারেট এক দামে কিনতে হয়, কোনো মূল্য স্তর নেই। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় কেবলমাত্র বাংলাদেশে স্তরভিত্তিক অ্যাড ভেলোরেম পদ্ধতিতে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপ করা হয়। তিনি থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার সফলতার তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে সুনির্দিষ্ট করারোপের সুবিধাসমূহ তুলে ধরেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচলিত ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ এর ধারা ১৫(৩) ও ৫৮ অনুযায়ী সব ধরনের তামাকজাতপণ্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা সম্ভব।’
ড. রুমানা হক বলেন, ‘বিশ্বে তামাক নিয়ন্ত্রণে সফল দেশগুলো ‘অ্যাড ভেলোরেম’ করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে ‘সুনির্দিষ্ট করারোপ’ পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। ‘সুনির্দিষ্ট করারোপ’ পদ্ধতিতে দ্রব্যের মূল্যের ওপর শতাংশ হারে করারোপের পরিবর্তে দ্রব্যের পরিমাণের ওপর সুনির্দিষ্ট পরিমাণ কর নির্ধারণ করা হয়। তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা হলে করের পরিমাণ নির্ণয় ও কর আদায় করা সহজ হবে, সব ধরণের তামাকজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কমবে।’
ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধি হলে জনস্বাস্থ্য রক্ষা পাবে। ২০২১-২২ অর্থ-বছরের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের কর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ১১ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দেবে এবং ৮ লাখ তরুণ নতুন করে ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। একইসঙ্গে রাজস্ব আয় প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।’
নিখিল ভদ্র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে অধিক হারে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়াতে হবে যেন তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে।’
পিডি/ইএ/এমএস