তরমুজ শুধু বহন করেন স্বাদ নেয়া হয় না তাদের
বরিশাল থেকে কাজের সন্ধানে এক যুগ আগে ঢাকায় এসেছেন হাসান, কামরুল, জনি, সুমনসহ আরও অনেকেই। বরিশাল মুলাদির বাসিন্দা সবাই। কাজ শুরু করেন বাদামতলীর ফলের আড়তে। সিজনাল হরেক রকমের বাহারি ফল তাদের মাধ্যমে আড়তে যায়। কিন্তু এসব ফলের স্বাদ তারা নিতে পারেন না। মাঝে মাঝে অতিরিক্ত বা কোনো ফল একটু ফেটে বা ভেঙে পড়লে সেই ফলটি সবাই মিলে খেতে পারেন। এই শ্রমিকদের লেবার বা মুটিয়া কিংবা মেথি বলা হয়।
তাদের মতো আরও পাঁচ শতাধিক মানুষ আছেন এখানে যাদের মালামাল বহন করেই সংসার চলে। এ নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। প্রশ্ন করতেই জাগো নিউজকে সোজা-সাপ্টা জবাব দিয়ে বসেন, ‘মামা আপনারা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি। আপনারা যত ফল খাবেন এখানে তত ফল আসবে, আর আমাদের আয়টাও বেড়ে যায়।’
এখানে কর্মরত এবং পরিচিত লেবার ফরিদুল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখানে সবচেয়ে আনন্দের দেশের সব এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা হয়, তাদের ভাষা জানা যায়। এখানে কেউ কারো টাকা নিয়ে নেবে না। সবাই ঘাট এলাকায় নিরাপদে থাকতে পারেন। সবাই মিলেমিশে যে যার মতো করে আয় করছেন।
তাদের আয় কেমন জানতে চাইলে হাসান নামে অপর একজন বলেন, দিনে ৩০০ থেকে ৮০০ বা এক হাজারও হয় কোনো কোনো দিন। আবার ফলের সিজন কম হলে আয় কমে যায়। এ এলাকাটিকে ভালোবেসে ফেলেছি, আয় যতো কম বেশিই হোক না কেনো যেতে মন চায় না। আমাদের মাঝে কেউ অসুস্থ হলে সবাই সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। এখানকার এমপি আমাদের সহযোগিতা করেন।
তবে হাঁসি-আনন্দের মাঝে দিন কাটলেও দুঃখ একটা থেকেই যায়। দেশি-বিদেশি নামি-দামি ফল নিজেরা বহন করে আড়তে কিংবা ক্রেতার গাড়িতে পৌঁছে দিলেও সেব ফলের স্বাদ নেওয়া হয় না তাদের। তারা বলেন, দামি ফল কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন পড়ে। এ অবস্থায় যতোটা টাকা সঞ্চয় করা যায়, দামি ফল কেনার টাকা কই পাবো।
মোজাম্মেল হোসেন নামে একজন বলেন, কোনো ফল পড়ে ভেঙে গেলে বা সেটা ফেটে গেলে আমরা সবাই মিলে সেটা খাই। অনেকেই সেসব ফল বাড়িতে নিয়ে যায়, পরিবার নিয়ে খায়।
আড়ৎদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাদামতলীতে ৫০০’শর বেশি লেবার কাজ করেন। এখান থেকেই তাদের জীবিকা। আড়ৎদার-লেবার মিলেমিশে আছি। সবাই সবার সুখে-দুখে থাকার চেষ্টা করি।
ইএআর/এসএইচএস/এআরএ