তলানীতে ব্যাংক, মারাত্মক ঝুঁকিতে চামড়া-পাট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০২ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২১

সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। সূচকের টানা উত্থানের সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি। এমন পরিস্থিতিতেও তলানীতেই পড়ে রয়েছে ব্যাংক খাত। অবমূল্যায়িত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম।

অন্যদিকে, আয়হীন লোকসানে জর্জরিত অনেক কোম্পানির শেয়ার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে চামড়া ও পাট খাত মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই দুই খাতের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এই বিধিনিষেধের মধ্যে গত দুই সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে শেয়ারবাজার। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পিই ১৩ দশমিক ৭০ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

বাজারের এ পরিস্থিতিতে সব থেকে বেশি অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে ব্যাংক কোম্পানিগুলো। অথচ এক সময় ব্যাংক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ব্যাংক খাতের ওপরই নির্ভর করতো শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন। কিন্তু খেলাপি ঋণ, পরিচালকদের অনৈতিক কার্যক্রমসহ ব্যাংক খাত সম্পর্কে একের পর এক নেতিবাচক তথ্য বেরিয়ে আসায় ব্যাংকের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অস্থায় ভাটা পড়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দামে।

সে কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত ১৩ দশমিক ৭০ হলেও ব্যাংক খাতের পিই রয়েছে ৭ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও তার প্রভাব ব্যাংক খাতের ওপর পড়েনি।

এদিকে, ব্যাংকের তলানীতে পড়ে থাকার মধ্যে বীমা খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দামে বড় উত্থান হয়েছে। ফলে বীমা খাতের পিই রেশিও বেড়েছে। বীমা খাতের পিই এখন ২২ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে বেশিরভাগ বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে।

তবে বর্তমানে শেয়ারবাজারে সব থেকে ঝুঁকিতে রয়েছে চামড়া ও পাট খাত। এর মধ্যে পাট খাতের পিই দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৪৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে। আর চামড়া খাতের পিই ঋণাত্মক ১৩ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মূল্যায়নের অন্যতম হাতিয়ার মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও। যে প্রতিষ্ঠানের পিই যত কম, ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ঝুঁকি তত কম। সাধারণত যেসব প্রতিষ্ঠানের পিই ১০-১৫ এর মধ্যে থাকে সেই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত।

তবে কোনো কোম্পানির পিই যদি ঋণাত্মক হয় তাহলে কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ঋণাত্মক পিই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

পিসি রেশিও নির্ণয় করা হয় কোম্পানির আয় ও শেয়ারের বাজার দাম দিয়ে। শেয়ারে বর্তমান বাজার দামকে শেয়ার প্রতি আয় দিয়ে ভাগ করলে যা আসবে তাই ওই কোম্পানির পিই। ধরা যাক একটি কোম্পানির শেয়ার দাম ৫০ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় ৫ টাকা। তাহলে ওই কোম্পানির পিই হবে ১০।

এদিকে ব্যাংকের পাশাপাশি কম পিইতে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এসব খাতগুলোর পিই এককভাবে ১৫-এর নিচে রয়েছে।

এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর ১০ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট, টেলিযোগাযোগের ১১ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্টে, খাদ্যের ১২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট এবং তথ্য প্রযুক্তির পিই ১৪ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

পিই ১৫- এর ওপরে থাকা খাতগুলোর মধ্যে সেবা ও আবাসনের ১৬ দশমিক ২২ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়নের ১৮ দশমিক ১৮ পয়েন্টে, প্রকৌশলের ২০ দশমিক ৮০ পয়েন্টে, বস্ত্রের ২৩ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে এবং সিরামিকের ৩০ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

আর পিই সব থেকে বেশি থাকা খাতগুলোর মধ্যে- সিমেন্টে ৪৪ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে, ভ্রমণ ও অবকাশের ৪৬ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে, বিবিধের ৫২ দশমকি ৫৯ পয়েন্টে, আর্থিক খাতের ৫৪ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে এবং কাগজের ৬৫ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এমএএস/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।