বেড়েছে চালের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৭ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০২১

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে চালের দাম বেড়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ২-৪ টাকা। বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ১০ থেকে ১৫ দিন পর চালের দাম কিছুটা কমতে পারে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ এপ্রিল সরকার এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ ঘোষণা করলে দু’দিন চালের বিক্রি বেড়ে যায়। অনেক ক্রেতা বাড়তি চাল কিনে রাখেন। এর সঙ্গে লকডাউনের মধ্যে বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন মিলমালিকরা। সবকিছু মিলে চালের দাম বেড়ে গেছে।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি, যা বিধিনিষেধ ঘোষণার আগে ছিল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা কেজি। অর্থাৎ চিকন চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা পর্যন্ত।

দাম বাড়ার এই তালিকায় রয়েছে মাঝারি মানের পইজাম ও লতা চালের পাশাপাশি গরিবের মোটা চালও। বর্তমানে মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকার মধ্যে। অপরদিকে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, যা আগে ছিল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা।

চালের দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্যেও। তবে দামের বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যের সঙ্গে টিসিবির দামের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, মিনিকেট ও নাজির চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মাসের ব্যবধানে এই চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে এখন কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫২ টাকা। আর মাঝারি মানের চালের দাম মাসের ব্যবধানে ১ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬০ টাকা।

চালের এমন দাম বাড়লেও গত জানুয়ারিতে চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। সরকার এমন ছাড় দিলেও তার সুফল মেলেনি। সরকার যখন চাল আমদানির শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়, সেসময় রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। আর মোটা চাল ছিল ৫০ টাকার নিচে।

চালের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, ‘বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে। রশিদের মিনিকেট চাল কয়েকদিন ধরে আসছে না। অল্পকিছু যে চাল আসছে তার সবগুলোর দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়ে গেছে।’

খিলগাঁওয় তালতলা থেকে চাল কেনা জিয়াদুর রহমান বলেন, ‘মার্চ মাসে রশিদের ২৫ কেজির এক বস্তা চাল কিনেছিলাম ১৬০০ টাকা দিয়ে। এখন সেই চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৬৮০ টাকা। ব্যবসায়ী পরিচিত হওয়ায় আমার কাছ থেকে ১৬৫০ টাকা নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মহামারিতে একদিকে মানুষ মরছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সব চাপ গিয়ে পড়ছে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।’

খিলগাঁওয়ের চাল ব্যবসায়ী মো. জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও আমরা রশিদের ২৫ কেজির এক বস্তা চাল ১৬০০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু গত তিনদিনে যে হারে দাম বেড়েছে তাতে এখন ১৬৮০ টাকা বস্তা বিক্রি করতে হচ্ছে। রশিদের মতো অন্যান্য কোম্পানির চালের দামও বেড়েছে।’

হুট করে রাজধানীর বাজারে চালের দাম বাড়লেও ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চালের দাম কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের ন্যাশনাল রাইস মিলের কর্ণধার মোহাম্মদ হাসান রাজু বলেন, ‘সাধারণত এই সময়ে বাজারে চালের সরবরাহ কম থাকে। এবারও সেটাই দেখা যাচ্ছে। এ কারণে চালের একটু দাম বেড়েছে। তবে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চালের দাম কমে যাবে।’

কী কারণে চালের দাম কমবে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে হাওরের ধান ওঠা শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বগুড়া, নওগাঁর ধান ওঠা শুরু হবে। এসব ধানের চাল বাজারে আসলে দাম কমে যাবে।’

এদিকে চালের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় প্রতিদিনই টিসিবির ট্রাকে ভিড় করছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এমন টিসিবির ট্রাক আসার আগেই অনেক স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন এসব নিম্ন আয়ের মানুষ।

সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মধ্যবাড্ডা লিংক রোডের পাশে টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করা ফাতেমা বেগম নামের একজন বলেন, ‘বাজারে চাল, তেলের যে দাম আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে তা কিনে খাওয়া কষ্টকর। তাই কিছুটা কম দামে কিনতে টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছি। সকাল ৯টা থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। ট্রাক এখনো আসেনি। কখন আসবে তাও জানি না।’

এমএএস/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।