বেড়েই চলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লোকসানি শাখা

ইয়াসির আরাফাত রিপন
ইয়াসির আরাফাত রিপন ইয়াসির আরাফাত রিপন
প্রকাশিত: ১২:২২ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২১

অডিও শুনুন

কোনোভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা কমছে না। উল্টো অধিকাংশ ব্যাংকেরই লোকসানি শাখা বেড়েই চলেছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই বিপুলসংখ্যক শাখা লোকসানে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বারবার তাগাদা সত্বেও অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরেই লোকসানি শাখার এ ঘানি টেনে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চার ব্যাংকের মধ্যে একমাত্র সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমলেও জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়েছে।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ২৭টি। ২০২০ সাল শেষে মোট এক হাজার ২২৬টি শাখার মধ্যে লোকসানে রয়েছে ২০টি শাখা। একবছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা কমেছে ৭টি।

অন্যদিকে একবছর আগে (২০১৯) জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিল ৫০টি। ২০২০ সাল শেষে জনতার লোকসানি শাখা একটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১টিতে। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট শাখা ৯১৬টি।

তবে সরকারি চার ব্যাংকের মধ্যে উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে {অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির লোকসানি শাখার সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ব্যাংকটির মোট ৯৬০টি শাখার মধ্যে একবছর আগে (২০১৯) লোকসানে ছিল ১৮টি। ২০২০ সালের শেষে তা বেড়ে ৩৪টিতে পৌঁছেছে। শতকরা হিসেবে বৃদ্ধির হার ৮৯ শতাংশ।

লোকসানি শাখা বেড়েছে রূপালী ব্যাংকেরও। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকটির মোট লোকসানি শাখার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪টিতে, যা এক বছর আগে (২০১৯) ছিল ১১টি। একবছরের ব্যবধানে লোকসানি শাখা বেড়েছে তিনটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ চার ব্যাংকের মোট শাখার সংখ্যা ৩ হাজার ৬৮৫টি। এর মধ্যে লোকসানে রয়েছে ১১৯টি শাখা। এক বছর (২০১৯) আগে এ সংখ্যা ছিল ১০৬টি।

এর আগে সদ্য বিদায়ী মাসের শেষ দিকে (২৫ মার্চ) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি এবং লোকসানি শাখা কমিয়ে আনার পরামর্শ দেয়।

সেখানে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান সমস্যা মূলধন ঘাটতি। তারা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিশেষ ছাড় চেয়েছে। কারণ হচ্ছে সরকার আর মূলধন ঘাটতি পূরণে সহায়তা করছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, পার্পেচুয়াল বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে। এর মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ সম্ভব। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূলধন সংকট। অন্যান্য আর্থিক সূচকের চেয়ে এটিই প্রধান সমস্যা। এজন্য বন্ড ছেড়ে ঘাটতি পূরণের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।’

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ব্যাংকের রিয়েল ভিউটা তুলে ধরেছি। এতে হয়তো কিছুটা লোকসানি শাখা বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা চেয়েছি রিয়েল ভিউটা তুলে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিতে। ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আপাতত লোকসানি শাখা বেড়েছে মনে হচ্ছে। আগামীতে এটা অনেকাংশেই কমে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ আসায় আমাদের আয়ের চেয়ে ব্যয়ের হিসাবটা বেশি হয়েছে। সবার স্বাস্থ্যের বিষয়টা আমরা গুরুত্ব দিয়েছি, যেখানে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, থার্মোমিটার এবং সিকিউরিটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। এতে খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে রিয়েল পিকচার এসেছে, আশা করছি আগামীতে লোকসানি শাখা কমে আসবে।’

ইএআর/এমএইচআর/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।