খুচরায় সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না সয়াবিন
অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে খুচরা, পাইকারি ও মিলগেট পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম সুপার তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে এই দামে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে সয়াবিন ও পাম সুপার তেল কিনতে পারছেন না ভোক্তারা।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অত্যাবশ্যকীয়পণ্য বিপণন ও পরিবেশক বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভায় এই দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সভাশেষে সংবাদ সম্মেলন করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সরকার নির্ধারিত সয়াবিন ও পাম সুপার তেলের দাম সাংবাদিকদের জানান।
সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন (খোলা) মিলগেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোতলের প্রতি লিটার সয়াবিন মিলগেট মূল্য ১২৩ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন মিলগেট মূল্য ৫৮৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৬০০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৬২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পাম সুপারের প্রতি লিটার মিলগেট মূল্য (খোলা) ৯৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৯৮ এবং খুচরা বাজারে ১০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে সয়াবিন ও পাম তেল পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেল ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬৬০ টাকার ওপরে। তবে কোম্পানিভেদে ১৩৫ টাকা বোতলের এক লিটার সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে। কোনো কোনো কোম্পানির বোতলের এক লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। দাম বেশি হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী খোলা সয়াবিন বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।
মধ্যবাড্ডার ব্যবসায়ী মিঠু মিয়া বলেন, ‘সরকার দাম বেঁধে দিলে কী হবে, আমরা তো কম দামে তেল কিনতে পারছি না। আমাদের যে দামে তেল কেনা তাতে ১২৫ টাকার নিচে সুপার তেল বিক্রি করার উপায় নেই। আর খোলা ভালো সয়াবিন এখন পাইকারিতেই বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকার ওপরে। এই দামে কিনলে ১৩৫ টাকার নিচে বিক্রি করা যাবে না। তাই খোলা সয়াবিন আনা বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ খোলা সয়াবিন তেলের দামে বোতলের তেলই কেনা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি কম দামে কিনতে পারি, তাহলে কম দামে বিক্রি করবো। এখন যে দামে কেনা রয়েছে তাতে ৫ লিটারের বোতল কোনোভাবেই ৬২৫ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব না। সবচেয়ে কম দামের বোতলের তেল নিলেও ৫ লিটারের জন্য ৬৬০ টাকা দিতে হবে।’
একই কথা বললেন রামপুরার ব্যবসায়ী মো. আশিক। তিনি বলেন, ‘যে দামে আমরা খোলা সয়াবিন তেল কিনে এনেছি, তাতে ১৩৫ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভাব না। যদি পাইকারি বাজার থেকে কম দামে কিনতে পারি, তখন কম দামে বিক্রি করবো। আর বোতলের তেলের তো কোম্পানি থেকেই রেট করে দেয়া। এই তেল তো কোম্পানি ফেরত নেবে না। যদি কোম্পানি কম দামের তেল সরবরাহ করে, তখন বোতলের তেলও কম দামে বিক্রি করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘রূপচাঁদার ৫ লিটারের তেল কোম্পানি থেকে ৬৮৫ টাকা রেট করে দেয়। আমরা সীমিত লাভে ৬৭৫ টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু মহল্লার দোকানে গেলে ৬৮৫ টাকায় রাখবে। শুধু রূপচাঁদা না, কোনো কোম্পানির ৫ লিটারের বোতল ৬২৫ টাকায় পাওয়া যাবে না।’
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘সরকার তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি শুনেছি। কিন্তু নতুন দামের তেল এখনো আমাদের কাছে আসেনি। কম দামের তেল আমাদের কাছে আসলে, তখন আমরা দাম কমিয়ে বিক্রি করবো। এখন যে তেল আছে, তা দাম কমিয়ে আমাদের পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব না।’
এ বিষয়ে পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই পাইকারি বাজারে সরকার বেঁধে দেয়া দামে তেল বিক্রি করছি। এখন পাইকারি বাজারে সুপার পাম তেল ৯৬ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১১০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তেলের দাম নিয়ে যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না। এভাবে চাপাচাপি করলে বাজারে তেলের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। আমদানিকারকরা তেল আমদানিতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। তখন বাজারে তেলের সঙ্কট দেখা দেবে।’
এই ব্যবসায়ী পাইকারি বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি হচ্ছে, এমন তথ্য দিলেও মৌলভীবাজারের আব্দুর রশীদ অ্যান্ড সন’র ম্যানেজার কিছুটা ভিন্ন তথ্য দেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘সুপার পামের ব্যারেল ১৮ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি লিটারের দাম দাঁড়ায় ১১৭ টাকা (১ ব্যারেলে ১৫৯ লিটার হিসাবে)। আর খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকা ব্যারেল। এতে প্রতি লিটারের দাম দাঁড়ায় ১২৬ টাকা।’
এ তথ্য তুলে ধরা হলে পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, ‘এ তথ্য সঠিক না। আমরা আজ থেকেই দাম কমিয়ে দিয়েছি। সরকার নির্ধারিত দামের থেকে কম দামে পাইকারিতে সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহে দাম আরও কমবে।’
সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা জাগো নিউকে বলেন, ‘সরকার যেহেতু দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, আমাদের তা মানতেই হবে। আমরা আজ থেকেই সরকার নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি শুরু করে দিয়েছি। আর নতুন দামে বোতলের তেল উৎপাদনও আজ থেকে শুরু হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই বাজারে নতুন দামের বোতলের সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে।’
এমএএস/এমএসএইচ/এমএস