কোটি টাকার ব্যবসা হাতছাড়া, তবু হাসি ব্যবসায়ীর মুখে
পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পর পর তিনটি দিবস এক মাসে পড়ায় ফেব্রুয়ারিতে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এই এক মাসেই ১৪ থেকে ১৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেন সারাদেশের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
এবার মহামারিতে এই তিন দিবস পড়ায় কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এর পরও ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে। এই হাসি ফোটার কারণ স্থবির হয়ে পড়া ব্যবসা কিছুটা হলেও সচল হয়ে উঠেছে।
ব্যবসায়ী ও চাষিদের দাবি, দেশে গত বছরের মার্চে করোনার প্রকোপ শুরু হলে ফুলের ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে আসে। কোথাও কোথাও বিক্রি শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। অনেক ফুল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি ঘিরে আবার ফুলের বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে। তারপরও অন্যান্য বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যে পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়, এবার তার অর্ধেকেও হবে না। আবার ফুলের দামও কম।
গাজীপুরের ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে গোলাপ ও জারবেরা চাষ করেছি। করোনার কারণে গত বছর আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। গত তিন-চার দিন ধরে বাজার কিছুটা ভালো। আশা করছি এই ফেব্রুয়ারি মাসে আমার ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হবে। আমি নিজে গিয়ে প্রতিদিন ঢাকার শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ে ফুল বিক্রি করি। এখন প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫ লাখ টাকার মতো ফুল বিক্রি করেছিলাম। ব্যবসা অনেক ভালো ছিল। ফুলের দামও ভালো পেয়েছিলাম। কিন্তু করোনা শুরু হলে বিক্রি এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। ফুলের চাষ করবো না, মাঝে এমন সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিলাম। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। ফুলের চাহিদা আবার বাড়ছে। এতে বিক্রি কম হলেও আমি খুশি।
নরসিংদীর সুবহান এগ্রো পার্কের মালিক শেখ সেলিম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর আমাদের ব্যবসা খুব খারাপ গেছে। করোনার কারণে আমাদের উৎপাদন বা ফলন সব নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে কৃষক, খামারিরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ভালো হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাস ঘিরে ফুলের বিক্রি বেড়েছে। আমরা আশা করছি ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে আমরা ফেব্রুয়ারি মাসে যে পরিমাণ ফুল বিক্রি করি, এবার তার অর্ধেকের মতো বিক্রি হবে বলে আশা করছি। গত ৮-১০ মাস যেখানে শূন্য বিক্রি ছিল, সেখানে অর্ধেক ব্যবসা করতে পারা খারাপ নয়। চাহিদা তো রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। আশাবাদী, ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
যশোরের ফুল ব্যবসায়ী আলী আশরাফ বলেন, গত এক বছর আমাদের ব্যবসা খুব খারাপ গেছে। এক সপ্তাহ ধরে বাজার কিছুটা ভালো। আশা করছি ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাজার ভালো থাকবে। এখন ফুলের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম পাচ্ছি। আশা করছি ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে। ফেব্রুয়ারি মাসেই ৫-৭ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।
শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, করোনা যখন থেকে শুরু হয়েছে, আজকে পর্যন্ত আমরা খুব দারিদ্রের মধ্যে আছি। পহেলা ফাল্গুন, ভ্যালেন্টাইনস ডে, ২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নেই। কারণ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, টাকা-পয়সা নেই। যখন করোনা ছিল না, তখন আমরা ফুল কালেকশন করে কোল্ড স্টোরেজ (মজুদ) করতাম। এ বছর আমরা কিছুই করিনি। আমরা কষ্টে আছি।
তিনি বলেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা ছিল না। যে কারণে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই আমরা ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছি। এবার এক কোটি টাকার ব্যবসাও হবে না। শাহবাগে আমাদের ৫১টি দোকান আছে, এর মধ্যে ৩৫টি দোকানই বন্ধ। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আমাদের বেচা-কেনা হয়নি। সে কারণে এবার ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে ফুল তুলিনি। ২১ ফেব্রুয়ারির পরিস্থিতি এখন বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা খুবই কষ্টে আছি। তার মধ্যেও একটা হাসি আছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর মাধ্যমে আমাদের পুনর্বাসন করে দেবেন। মন্ত্রী সাহেব এসে আমাদের এ কথা বলেছেন।
এমএএস/জেডএইচ/এএসএম