বিসিকের খালি প্লট নতুন উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) যে সমস্ত প্লট খালি রয়েছে তা নতুন উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। একই সঙ্গে যারা প্লট বরাদ্দ নিয়ে কোনো শিল্প স্থাপন করেনি সে প্লটগুলোর বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশ দেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ফেডারেশন ভবনে এফবিসিসিআইয়ের এসএমই বিভাগের স্ট্যান্ডিং কমিটি আয়োজিত ‘এসএমই খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, গ্রাম ভিত্তিক অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে চাই। তাই আজকে গ্রামের মানুষ খুব ভালো আছে। গ্রাম ভিত্তিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিলে শহরের চাপ কমে যাবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় দেশকে ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার চেষ্টা করবো।
তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত আমাদের অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি। এ খাতের ওপর নির্ভরশীল করে দেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। শিল্পায়নের ধারা বেগবান হচ্ছে। তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ছে। পাশাপাশি রফতানি প্রবৃদ্ধিও দ্রুত বেড়ে চলেছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প (এসএমই) বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
তিনি বলেন, এসএমই ইজ দ্য ফিউচার অব বাংলাদেশ। এসএমই ভালো হলে দেশ ভালো হবে। এসএমই বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশের অর্থনীতি বাঁচবে।
এসএমই খাতের সম্ভাবনা তুলে ধরে মাতলুব আহমাদ বলেন, বড় বড় শিল্প অর্থনীতিতে অবদান রাখে এটা ঠিক। তেমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সম্প্রতি চায়না, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু দেশ এসএমই’র মাধ্যমে তাদের নিজেদের দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরাও প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা ব্যাংক ঋণ উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এসএমই উদ্যোক্তারা এমনিতে ব্যবসায় তেমন লাভ করতে পারে না। আবার ব্যাংক ঋণ যদি বেশি হয় তাহলে তারা ব্যবসায় আর আগাতে পারেনা। শুরুতে হুচট খেয়ে পরে দেউলিয়া হয়ে যায়। তাই ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ ৯ শতাংশ করতে হবে। প্রয়োজনে সঞ্চয়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ দেওয়া হোক। এছাড়া বিসিকের খালি প্লটগুলো কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজনে বিসিককে ঢেলে সাঁজাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরি বলেন, বাংলাদেশে এগিয়ে যাওয়ার পথে এসএমইখাত বড় একটা ভূমিকা পালন করে। আর এখাতের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। তবে এব্যাপারে ব্যাংকের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে এসএমই খাতে ঋণের পুন:অর্থায়নের জন্য ১৫ শতাংশ নারীকে ১০ শতাংশ হারে সুদের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় নারীদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। অবকাঠামোগত সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ঋণ সমস্যা দূর করা হচ্ছে। এসএমই ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কেএম হাবিবুল্লাহ, এসএমই ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে। আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন যে, সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দিলে তারা মেরে খাবে না।
এফবিসিসিআইয়ের এসএমই বিভাগের স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইন চার্জ আলহাজ্ব মো. বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্পসচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, বিসিক চেয়ারম্যান আহমেদ হোসেন খান, এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের এসএমই বিভাগের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান নূরুল গণি শোভন প্রমুখ।
এসআই/এআরএস/পিআর