‘দেশে কৃষিখাতের উন্নয়ন হলেও কৃষকের হয়নি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৬ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২১

দেশে কৃষিখাতে যতখানি উন্নতি হয়েছে, ততখানি কৃষকের উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে উৎপাদনের প্রাক্কলনেও সমস্যা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে রক্ষা করাই এই খাতে মূল চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে চালের বাড়তি দাম যেন উৎপাদকের কাছে পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে কৃষিপণ্য মূল্য কমিশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

রোববার (১০ জানুয়ারি) ‘চালের দাম বাড়ছে কেন? কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব মন্তব্য উঠে আসে বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সংলাপে বক্তারা বলেন, চালের দাম যেন নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি না করে তা খেয়াল রাখতে হবে। কৃষক, কৃষি খাতের সঙ্গে যুক্ত সব পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কৃষিপণ্য মূল্য কমিশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্ষেপণ এবং স্বল্প-মধ্য মেয়াদে দাম নির্ধারণ করা সহজ হবে। এই কমিশনের মাধ্যমে বাজার সংকেত পাবে, নীতি নির্ধারকরা পদক্ষেপ নিতে পারবে এবং গবেষণাকে কার্যকরভাবে উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে।

এসডিজি প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশে ধান উৎপাদনের সঠিক প্রাক্কলনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, এই প্রাক্কলনের ওপর ভিত্তি করেই নীতি নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সরকারের ধান-চাল মজুদ করার সক্ষমতা কম হওয়ায় বেশিরভাগ সময়ই বাজার প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে না।

তিনি আরও বলেন, তুলনামূলক ছোট কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করতে হবে। ছোট ও মাঝারি কৃষকের টিকে থাকার সক্ষমতা কম। তাই তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও হাওর অঞ্চলের মোট নয়টি জেলা থেকে প্রায় ৪০ জন কৃষক, কৃষাণী এবং কৃষি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এই সংলাপে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

তারা বলেন, মিল মালিকরা আগেই ধান কিনে মজুত করে রাখে, যে কারণে চালের দাম বাড়লেও কৃষক তার মূল্য পায় না। ধান চাষে খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে হয়, তাই কৃষক ধান চাষ থেকে সরে আসছেন। তারা আরও বলেন যে, সরকার যে ধান সংগ্রহ করেন সেখানে সবাই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তাই কম দামে মিল মালিকের কাছে বিক্রি করতে হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পক্ষে সংসদ সদস্য ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, কৃষিখাতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ভর্তুকি ও উদ্যোগ রয়েছে। এই সব সুবিধা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকার বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে।

এদিকে, ধান চাষে লাভবান না হওয়ায় ধানের উৎপাদন ক্রমাগত কমছে বলে মনে করেন চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। তিনি বলেন, কৃষি খাতে অনেকে ধান চাষ থেকে উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় এবং চাষযোগ্য জমি কমে আসায় ধান চাষের ক্ষেত্রে সঙ্কট তৈরি হচ্ছে।

শাইখ সিরাজ আরও বলেন, সরকারি গুদামে ছোট কৃষকদের ফসল সংরক্ষণ করার সুযোগ করে দিতে হবে যেন ফসলের সঙ্গে সঙ্গে কৃষককে অল্প দামে ফসল বিক্রি না করতে হয়।

বিআইডিএসর সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়লেও এই বাড়তি দামের কারণে কৃষক লাভবান হয় না। কৃষক অনেক আগেই কম দামে ধান বিক্রি করে দেয়।

বিআইডিএসর সাবেক মহাপরিচালক ড. কাজী শাহাবুদ্দিন বলেন, সরকারের বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুদ পর্যাপ্ত নয় এবং এটি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, সরকার প্রকৃত কৃষকের থেকে চাল না কিনে মিলারদের থেকে ক্রয় করছে, তাই কৃষক উপকৃত হচ্ছে না।

মিলারদের ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মজুদদারদের কারণে বাজারে চালের অপর্যাপ্ততার কথা তুলে তিনি বলেন, প্রতিবছর বাম্পার ফলনের পরেও চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। সরকারকে স্থানীয় পর্যায়ে ক্রয় কেন্দ্র করে সরাসরি কৃষক থেকে চাল ক্রয় করতে হবে।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম খোরশেদ আলম খান বলেন, মিলাররা মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের কাছ থেকে এক হাজার ৫০ টাকায় ধান ক্রয় করেছে।

চালের এই বাম্পার ফলনের কথার সঙ্গে দ্বিমত করে তিনি বলেন, এই মৌসুমের শুরু থেকেই সরবরাহ কম ছিল।

বাজারে চালের পর্যাপ্ততা নিয়ে বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বাবু বলেন, চালের আমদানি শুল্ক কমানো হলেও সঠিক সময়ে এই নীতি গ্রহণ না নেয়ায় সেই পরিমাণ চাল আমদানি করা যায়নি।

সংলাপে আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড মো. নাজিরুল ইসলাম।

এছাড়া সংলাপে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, কৃষি বিষয়ক সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আড়তদার, চাল ব্যবসায়ী, চালকল মালিক অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত ও মন্তব্য তুলে ধরেন।

ইএআর/এসজে/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।