গ্রিন ব্যাংকিংয়েও খেলাপির আঘাত
অডিও শুনুন
## গ্রিন ব্যাংকিংখাতে ২৪০৩ কোটি টাকা বিতরণ
## খেলাপি হয়েছে ৫৭৪ কোটি টাকা
ব্যাংকিংখাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ থেকে যেনো বের হতেই পারছে না ব্যাংকগুলো। প্রতিবছরই এই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এর আগে গ্রিন ব্যাংকিংয়ে খেলাপি ঋণে গোপনীয়তা রক্ষা করা হলেও এবার তা প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। গ্রিন ব্যাংকিং প্রকল্পে বিতরণকৃত মোট ঋণের মধ্যে ৫৭৪ কোটি টাকা আক্রান্ত হয়েছে খেলাপি নামক এই ক্যান্সারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রিন ব্যাংকিং খাতে দুই হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাতের বিতরণ দুই হাজার ৩২০ কোটি টাকা। আর ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিতরণ করেছে প্রায় ৮৩ কোটি টাকা।
গত বছরের (২০১৯) জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রিন ব্যাংকিং খাতে বিতরণ ছিল দুই হাজার ২০ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি বছরের একই সময়ে এ খাতে বিতরণ বেড়েছে ৩৮৩ কোটি টাকা।
আলোচ্য সময়ে গ্রিন ব্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বিদেশি এইচএসবিসি ব্যাংক। এই খাতে তাদের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫২১ কোটি টাকা। গ্রিন ব্যাংকিংয়ে ঋণ বিতরণে সার্বিকভাবে দ্বিতীয় এবং দেশীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এ ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৪৫১ কোটি টাকা। এর পরে রয়েছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, যাদের বিতরণকৃত ঋণ প্রায় ১৮৯ কোটি টাকা। তারপরে এক্সিম ব্যাংকের প্রায় ১৭৪ কোটি টাকা, আল আরাফাহ ব্যাংকের ১৭০ কোটি টাকা, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ১৪৯ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের ১৩৫ কোটি টাকা, এনআরবি ব্যাংকের প্রায় ১০০ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ৯০ কোটি টাকা এবং ব্যাংক এশিয়ার বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৮১ কোটি টাকা।
গ্রিন ব্যাংকিংয়ে ঋণ বিতরণে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। এখাতে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তাদের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৭১ কোটি টাকা। এরপর আছে লংকান অ্যালায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেড, তাদের বিতরণকৃত ঋণ ৪৯ কোটি টাকা। আর হজ্ব ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের বিতরণকৃত ঋণ ৩০ কোটি টাকা।
গ্রিন ব্যাংকিং প্রকল্পে বিতরণকৃত মোট ঋণের মধ্যে ৫৭৪ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে উঠে এলেও কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কতো অংকের ঋণ খেলাপি হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।
পরিবেশবান্ধব সবুজ অর্থায়ন বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১১ সাল থেকে গ্রিন ব্যাংকিং ঋণ চালু করে। ওই সময়ে বলা হয়েছিল, কোনো ব্যাংক বা ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৫ শতাংশ সবুজায়নে বিতরণ করতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি এ নীতিমালা পরিবর্তন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, মোট ফান্ডেড ঋণের ৫ শতাংশ সবুজায়নে বিতরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, খেলাপি ব্যাংকিং সেক্টরের প্রধান সমস্যা। যেহেতু নতুন করে গ্রিন ব্যাংকিংয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, এটা ভবিষ্যতের জন্য ওয়ার্নিং। আমার সময়ে দু’একটি এমন বিষয় এসেছিল, আমি সেগুলো মূল্যায়ন করিনি। এটা আমাদের দেখতে হবে কোন কোন বিষয়ের কারখানায় আমরা বিনিয়োগ করছি।
এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ারও পরামর্শ দেন সাবেক গভর্নর।
ইএআর/এইচএ/এমকেএইচ