চিটাগাং সিমেন্টের রায় স্থগিত: ৬ মাস পেছালো মামলার কার্যক্রম


প্রকাশিত: ০৭:৪৯ এএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৫

উচ্চ আদালতের (হাইকোর্ট) স্থগিতাদেশের কারণে বহুল আলোচিত ১৯৯৬ সালের চিটাগাং সিমেন্টের (বর্তমানে হাইডলবার্গ সিমেন্ট) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার কার্যক্রম ছয় মাস পেছানো হয়েছে। মামলা পরবর্তী শুনানি আগামী বছর অর্থাৎ ৩ মে ২০১৬ তারিখে দিন ধার্য করেছেন পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।

রোববার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টনে স্থাপিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পরিবর্তে আজ উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে মামলার পরবর্তী শুনানির এ দিন ধার্য করেন আদালত।    

মামলার আসামিরা হলেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও চিটাগাং সিমেন্ট লিমিটেডের সাবেক পরিচালক মো. রকিবুর রহমান, ডিএসই ও চট্টগ্রাম সিমেন্টের সাবেক পরিচালক এএস শহিদুল হক বুলবুল এবং টিকে গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব।

এর আগে গত ২৭ অক্টোবর আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ ৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর। রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ থাকা চিটাগাং সিমেন্টের শেয়ার কারসাজি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ২৫ (এ) ধারা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেছেন আদালত।

চিটাগাং সিমেন্টের শেয়ার কারসাজি মামলার আসামি শহিদুল হক বুলবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ নভেম্বর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা ১৯৯৬ সালে চিটাগাং সিমেন্টের পরিচালক ছিলেন। ভারতীয় ও ইরানী বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ার কিনবে বলে আসামিরা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছড়িয়ে শেয়ার মূল্য প্রভাবিত করেন। এ ব্যাপারে পরবর্তীকালে চিটাগাং সিমেন্টের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এরপর কোম্পানির একজন পরিচালক বড় অংকের শেয়ার হস্তান্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে কী পরিমাণ ও কোন ব্যক্তি এ কাজ করেছেন তা ১৯৯৬ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। এছাড়া বিএসইসির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রকিবুর রহমান এবং এ এস শহিদুল হক বুলবুল পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯ এর ১৭ ধারা অনুসারে কারসাজি বলে মনে করে গঠিত তদন্ত কমিটি।

১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে চিটাগাং সিমেন্টের শেয়ার দর ২ হাজার ৫৮৫ টাকা থেকে প্রায় ১ হাজার শতাংশ বেড়ে একই বছরের ডিসেম্বরে ১৮ হাজার ৪৮ টাকায় উন্নীত হয়। কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও এর নেপথ্যে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জকে দেয়নি কোম্পানিটি। পরবর্তীতে দুই মাসের মধ্যে কোম্পানির শেয়ার দর ১ হাজার ৭৩১ টাকায় নেমে আসে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কারসাজির ঘটনা উদঘাটনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তিন মাস পর ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ তদন্ত কমিটি সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে আসে। আর এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালের ৪ মে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে মামলা করে বিএসইসি।

মামলাটি পরবর্তীকালে বিচারের জন্য প্রথম অতিরিক্ত দায়রা আদালত ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। এই আদালতে থাকাকালীন মামলাটির বাদীর সাক্ষ্য শেষ হয়। পরবর্তীকালে মামলার আদালত পরিবর্তনের নির্দেশ এলে বাদী পক্ষের সম্মতিতে নিম্ন আদালতের আদেশের ওপর স্থগিত আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এরপর বিএসইসির ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মামলাটি এই আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

এসআই/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।