মহামারির ৩ মাসে কোটি টাকা খরচ বেড়েছে ১৬ ব্যাংকের এমডির
অডিও শুনুন
>> এপ্রিল-জুনে ১৬ ব্যাংকের এমডির পেছনে ব্যয় ৭ কোটি ৫৬ লাখ
>> গত বছরের চেয়ে যা ১৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ১২ লাখ টাকা বেশি
>> তিন মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ নিয়েছেন ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি
>> তার পেছনে ব্যাংকটির মোট ব্যয় ৬৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭২ টাকা
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে জনজীবন ও অর্থনীতিতে নেমে আসে স্থবিরতা। স্বাভাবিকভাবেই এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সাধারণ ছুটির মধ্যে সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকলেও করোনার ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি বেশিরভাগ ব্যাংক। খরচ কমাতে অনেক ব্যাংক কর্মীদের বেতন কমানোর উদ্যোগ নেয় এবং কয়েকটি ব্যাংক তা বাস্তবায়নও করে।
করোনাকালে বিভিন্ন ব্যাংক খরচ কমানোর উদ্যোগ নিলেও চলতি বছরের এপ্রিল-জুন, এই তিন মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৬টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পেছনে খরচ বেড়েছে। এই তিন মাসে ১৬ ব্যাংকের এমডির পেছনে খরচ হয়েছে সাত কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। যা আগের বছরের চেয়ে এক কোটি ১২ লাখ ৪২ হাজার টাকা বা ১৭ শতাংশ বেশি।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এমডির পেছনে সবচেয়ে বেশি খরচ বেড়েছে আইএফআইসি ব্যাংকের। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এমডির পেছনে ব্যাংকটির খরচ বেড়েছে ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। খরচ বাড়ার হার ৪১ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে ব্যাংকটির এমডি বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পারিতোষিক বাবদ নিয়েছেন ৬০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডির পেছনে খরচ বেড়েছে ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যাংকটির এমডি নিয়েছেন ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গত বছরের একই সময়ে এমডির পেছনে ব্যাংকটির খরচ হয় ২৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ব্যাংকটির এমডির পেছনে খরচ বেড়েছে ৬১ শতাংশ।
এমডির পেছনে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা খরচ বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্যাংক এশিয়া। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যাংকটির এমডি নিয়েছেন ৪৮ লাখ ২০ হাজার টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই ব্যাংকের এমডির পেছনে খরচ বৃদ্ধির হার ৪৩ শতাংশ।
এদিকে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পারিতোষিক বাবদ সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছেন ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি। তার পেছনে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যাংকটির খরচ হয়েছে ৬৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭২ টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই খরচের অংক ছিল ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭২ টাকা। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে চার লাখ ২৮ হাজার টাকা।
ব্যাংক থেকে টাকা নেয়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি। প্রতিষ্ঠানটির এমডি চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পারিতোষিক বাবদ নিয়েছেন ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ব্যাংকটির এমডির পেছনে খরচ বেড়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
এমডির পেছনে খরচ বাড়ার তালিকায় আরও রয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবি এবং উত্তরা ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর এমডির পেছনে খরচ বৃদ্ধির চিত্র
ব্যাংকের নাম |
এমডিরা টাকা নিয়েছেন |
টাকা নেয়ার পরিমাণ বেড়েছে |
|
২০২০ (এপ্রিল-জুন) |
২০১৯ (এপ্রিল-জুন) |
||
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক |
৪৮,৮০,০০০ |
৩৫,২৮,৭৫৬ |
১৩,৫১,২৪৪ |
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক |
৪০,৪০,০০০ |
৩১,৩৯,০০০ |
৯,০১,০০০ |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক |
৪৪,৫১,০৩৩ |
৪০,৮৫,২১৬ |
৩,৬৫,৮১৭ |
আইসিবি ইসলামী ব্যাংক |
৪০,৯৮,১৫০ |
৩৮,৪৬,৬০০ |
২,৫১,৫৫০ |
এনসিসি ব্যাংক |
৪৪,৬১,৫০০ |
৩৪,০০,০০০ |
১০,৬১,৫০০ |
ওয়ান ব্যাংক |
৩৮,৩৭,৫০০ |
৩৭,৩০,০০০ |
১,০৭,৫০০ |
প্রিমিয়ার ব্যাংক |
৪০,০০,০০০ |
৩২,৫০,০০০ |
৭,৫০,০০০ |
প্রাইম ব্যাংক |
৩৩,২২,৫০০ |
৩০,৭৫,০০০ |
২,৪৭,৫০০ |
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক |
৩৫,৪৫,১০০ |
৩২,৯১,০০০ |
২,৫৪,১০০ |
ইউসিবি |
৩৯,৬০,০০০ |
৩৬,০০,০০০ |
৩,৬০,০০০ |
উত্তরা ব্যাংক |
৬৫,২১,৪৫৪ |
৬৩,৭৬,৬৭৯ |
১,৪৪,৭৭৫ |
ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পেছনে ব্যাংকের খরচ বাড়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রেজা ইফতেখার জাগো নিউজকে বলেন, কোন ব্যাংকের খরচ বেড়েছে তা আমি বলতে পারব না। তবে আমাদের খরচ বাড়েনি বা কমেনি।
এ সময় জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ইস্টার্ন ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে এমডির পেছনে খরচ বাড়ার তথ্য তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘আপনি এ তথ্য কোথায় পেয়েছেন? আমি আর্থিক প্রতিবেদন না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। আর্থিক প্রতিবেদন দেখে আমি আপনাকে পরে ফোন দেব।’
এরপর তিনি আর ফোন করেননি। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে পরে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এমএএস/এইচএ/এমএআর/জেআইএম