ভোগান্তি কমাতে শুরু হলো স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি
ট্রেজারি চালানের অর্থ জমা প্রদানের প্রচলিত পদ্ধতি সহজীকরণ, গ্রাহক ভোগান্তি হ্রাস, ভুয়া চালান জমা ও রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা রোধসহ সঠিক সময়ে চালানের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা নিশ্চিতের জন্য স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি উন্নয়ন করা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের যে কোনো শাখায় ট্রেজারি চালানের অর্থ জমা নেয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার যৌথভাবে ভার্চুয়ালি এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. জহুরুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক, এসপিএফএমএস প্রোগ্রাম ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ। অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থ বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ‘স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারি’ (এসপিএফএমএস) প্রোগ্রামের অধীন ‘ইমপ্রুভমেন্ট অব পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ডেলিভারি থ্রু ইমপ্লিমেন্টেশন অব বিএসএস অ্যান্ড আইবিএএস প্লাস প্লাস স্কিম’র আওতায় উদ্ভাবিত হয় ‘স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি’।
ট্রেজারি চালানের অর্থ জমা প্রদানে প্রচলিত পদ্ধতি সহজীকরণ, গ্রাহক ভোগান্তি হ্রাস, ভুয়া চালান জমা ও রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা রোধসহ সঠিক সময়ে চালানের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা নিশ্চিতের জন্য স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি উন্নয়ন করা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের যে কোনো শাখায় ট্রেজারি চালানের অর্থ জমা নেয়া যাবে। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯ শাখায় এবং সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২২৪ শাখায় ট্রেজারি চালানের অর্থ গ্রহণ করা হয়।
এছাড়া স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতিতে ব্যাংক শাখার কাউন্টারে নগদ, চেক ও অ্যাকাউন্ট ডেবিটের মাধ্যমে অর্থ জমাসহ গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের মাধ্যমেও চালানের অর্থ জমা দিতে পারবেন। নগদ, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ জমা দেয়া হলে গ্রাহককে তাৎক্ষণিকভাবে চালানের কপি দেয়া হবে, চেকের ক্ষেত্রে গ্রাহক চেক জমা স্লিপ পাবেন এবং পরে চেক ক্লিয়ার হলে গ্রাহককে পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী চালান দেয়া হবে। চেক গ্রহণ এবং চালান ইস্যু প্রতিটি স্তরেই গ্রাহক তার মোবাইলে এসএমএস পাবেন।
অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থ জমা দেয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরটিজিএসের মাধ্যমে চালানের অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা এবং নগদ, অ্যাকাউন্ট ডেবিটের মাধ্যমে অর্থ জমা দেয়া হলে দিনে ট্রেজারি চালানের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে। চেকের ক্ষেত্রে চেক ক্লিয়ারিং হওয়ার দিন চালানের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
অর্থ বিভাগ বলছে, স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি সারাদেশ তিন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। ১ম পর্যায়ে ঢাকা মহানগরীর সোনালী ব্যাংকসহ চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক– রূপালী, অগ্রণী, জনতা ব্যাংকের সব শাখায়, ২য় পর্যায়ে ঢাকা মহানগরীর অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সব শাখা এবং ৩য় পর্যায়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় বাস্তবায়ন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) থেকে ঢাকা কর অঞ্চল-৪ এর আওতায় ব্যক্তি ও কোম্পানি কর্তৃক দেয় আয়কর জমা প্রদান দিয়ে শুরু হলো ঢাকা মহানগরীতে ‘স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম। অচিরেই এ সিস্টেমের মাধ্যমে ভ্যাট, জমি ও গাড়ি রেজিস্টেশন ফিসহ সরকারি ১৯৬ ধরনের রাজস্ব ও ফি’র অর্থ জমা নেয়া হবে।
‘স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি’ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হলে সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধিত হবে। রাজস্ব জমা প্রদান ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত সম্ভব হবে। ‘স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি’র মাধ্যমে প্রতিটি চালানের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংক, হিসাবরক্ষণ অফিস ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে সঙ্গতিসাধনের ফলে সরকারের রাজস্ব জমা বাড়বে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের প্রদত্ত হিসাবের মধ্যকার পার্থক্য দূর হবে। সরকারি প্রাপ্তি সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য সরকারের আর্থিক অবস্থান ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল নিধারণে ভূমিকা রাখবে।
এমইউএইচ/এএইচ/পিআর